Published : Saturday, 10 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 10.09.2022 12:54:17 AM
ইসমাইল নয়ন:
কুমিল্লার
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী নারায়ণপুর ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের
সিপাই জেলার করমচুরা থানার রহিমপুর থেকে এক তুষার খাঁ (৩৫) নামে বাংলাদেশি
যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে বিজিবি। বৃহস্পতিবার ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়ান
সদস্যরা মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে লাশ ব্রাহ্মণপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
তুষার খাঁ নওগাঁ জেলার রানী নগর বালুভরা গ্রামের এলাকার মোসলেম খাঁর ছেলে।
তুষার গত বুধবার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল এলাকায় তার ফুফুর বাড়িতে
বেড়াতে এসেছিলেন বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণপাড়া
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা। শুক্রবার বিকেলে তিনি
জানান, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের
কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে তুষারের শরীরে অনেকগুলো
আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরে স্বজনরা তুষারের মরদেহ নওগাঁয় নিয়ে যায়। তবে
তুষার কীভাবে সীমান্তে গেল বা কারা তাকে পিটিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় সেখানে
ফেলে গিয়েছিল, তা দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কেউই কিছু বলতে পারেননি।
জানা
গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা তুষারকে অচেতন অবস্থায় বাংলাদেশের
নারায়ণপুর দক্ষিণপাড়া থেকে ১০ ফুট ভারতের অভ্যন্তরে রহিমপুর এলাকায়
বিবস্ত্র পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী
ঘটনাস্থলে আসলেও লোকটি কোন দেশের নাগরিক, তা শনাক্ত করতে করতেই দুপুর গড়িয়ে
যায়। এরই মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তুষার।
তুষারের ফুফু আসমা বেগম
বলেন, গত বুধবার তুষার তার অসুস্থ ফুফা আবু তাহেরকে দেখতে নওগাঁ থেকে
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় এসেছিলেন। হাসপাতালে ফুফাকে দেখে ফুফার বাড়ির
উদ্দেশে বের হন। এরপর থেকেই তুষারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
একটি সূত্র
জানায়, ভারত সীমান্তে তুষারের অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকার খবর পেয়ে ৬০
ব্যাটালিয়ন বিজিবির শশীদল বিওপির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে
আন্তর্জাতিক সীমানার ভারত অংশে ওই যুবককে মুমূর্ষু অবস্থায় পরে থাকতে
দেখেন। পরে বিজিবি বার্তা পাঠালে বিএসএফ ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় অজ্ঞাত যুবক
কোন দেশের নাগরিক, তা নিশ্চিত হতে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে দফায় দফায়
আলোচনা হয়। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় ওই অজ্ঞাত যুবককে
বাংলাদেশে যথাসময়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। পরে খবর পেয়ে যুবকের ফুফু আসমা
বেগম সেখানে গিয়ে তুষারকে শনাক্ত করেন। কিন্তু ততক্ষণে মারা যান মুমূর্ষু
তুষার। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তুষারের মরদেহ নিয়ে আসে বিজিবি।
ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী তানভীর
আবসাল বলেন, খবর পেয়ে আমরা বিকাল পৌনে ৪টায় ঘটনাস্থলে যাই। তখন তাকে মৃত
পাই।
শশীদল বিওপির বিজিবি কমান্ডার নায়েব সুবেদার আবদুল খালেক বলেন,
তাঁরা সকাল ছয়টায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অজ্ঞাতনামা যুবককে অজ্ঞান
অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। ভারতের অভ্যন্তরে থাকায় এবং পরিচয় নিশ্চিত না
হওয়ায় যথাসময়ে তাঁকে বাংলাদেশে আনা যায়নি। তাঁরা আহত ব্যক্তির চিকিৎসার
ব্যবস্থা করার জন্য বিএসএফকে একাধিকবার বলেছেন। ভারতীয় সীমান্তে থাকায়
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ওই যুবককে বিএসএফ তাদের দেশে নিয়ে চিকিৎসাসেবা
নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
নায়েব সুবেদার
আবদুল খালেক বলেন, পরে অজ্ঞাতনামা যুবকের পরিচয় জানতে পেরে তাঁরা স্থানীয়
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে
সন্ধ্যায় মরদেহ বাংলাদেশ সীমান্তে এনে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।