Published : Saturday, 17 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 17.09.2022 12:18:26 AM
রণবীর ঘোষ কিংকর।
মোঘল আমলে নির্মিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্থাপত্য শিল্প কর্মের এক অপূর্ব নিদর্শন চান্দিনা রাজ কালী বাড়ি। কালের বিবর্তনে ঐতিহ্য হারানো পুরাকীর্তির স্থাপনাটি বর্তমান সরকার আমলে উন্নয়নের ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
১৬৭০ খ্রীষ্টাব্দের নির্মিত মন্দিরের দুই পাশে ৪৫ ফুট উচ্চতার দুইটি শিব মন্দির ও মাঝে কালি মন্দিরের পর নতুন ভাবে যুক্ত হয়েছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, জগন্নাথ মন্দির ও একটি দুর্গা মন্দির। বাৎসরিক নাম সংর্কীত্তনের জন্য মন্দিরের আঙ্গিনায় নির্মিত হয়েছে ‘নাট মন্দির’। এখন নতুন ভাবে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার বর্গফুটের ‘ধর্মশালা’।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই ধর্মশালা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি। তিন তলা বিশিষ্ট ওই ধর্মশালার নিচ তলায় ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণের স্থান এবং ২য় ও ৩য় তলায় ভক্তদের আবাস।
চান্দিনা রাজকালী বাড়ি পরিচলনা পর্ষদ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কালী ভূষণ বক্সী’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কুমিল্লা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপস শীল, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়া আক্তার, থানা অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. সাহাবুদ্দীন খাঁন।
চান্দিনা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক শ্রীধর বণিক এর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন চান্দিনা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কুমার আইচ, চান্দিনা রাজ কালী বাড়ি পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি লক্ষণ সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুনীল সাহা মাস্টার, অধ্যাপক গৌরাঙ্গ সাহা, বাবুল আইচ, জীবন সাহা, রতন দেবনাথ, বাদল কর, বাসব চক্রবর্তী প্রমুখ।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্য মতে ১৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন মির্জা হুসাইন আলীর পৃষ্ঠ পোষকতায় মন্দির দুইটি নির্মিত হয়। তাদের তথ্য মতে মন্দির দুইটি বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে নির্মিতের তথ্য থাকলেও সনাতন ধর্মীয় নেতাদের অনেকেই বলছেন ওই মন্দির দুইটি ভারতের দক্ষিণেশ্বর কালি মন্দিরের আদলে নির্মিত হয়েছে। ৫ ধাপের ওই মন্দির গুলোতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেব-দেবী ও অনেক স্থাপত্য কর্মের নিদর্শন রয়েছে।
কুমিল্লা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী জানান, মন্দির দুটির অবস্থা এতোই করুন ছিল যে, মন্দিরের উপরে (পরগাছার) পাখ পাখালির মলের মাধ্যমে বট বৃক্ষের শিকড় গজিয়ে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করেছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকার সহযোগিতায় ও ভক্তদের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে মন্দিরটির উন্নয়ন শুরু হয়। এই মন্দিরটিতে বছর জুড়ে বিভিন্ন পূজা ও নাম সংর্কীত্তণ অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশ থেকে ভক্তবৃন্দ এখানে আসেন। তাদের থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই এই ধর্মশালাটির নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন এই ধর্মশালাটির কাজ সমাপ্ত হলে মন্দিরের পরিপূর্ণতা ফিরে আসবে। আমাদের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত নিজ অর্থায়নে ধর্মশালার দ্বিতীয় তলার কাজ করার প্রতিশ্রতি দেন।