একদিন এলাকাবাসী বিরোধিতা করেছিল, এখন খুশি
Published : Wednesday, 21 September, 2022 at 12:00 AM
পরিবারের
তিন বোনের মধ্য সবার ছোট স্বপ্না। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বপ্নাকে
নিয়ে কৃষক বাবার স্বপ্ন ছিল বড়। তবে মেয়ের ঝোঁক ফুটবলে।
চতুর্থ শ্রেণি
থেকেই ফুটবল খেলা শুরু করে। শুরুতে বাবা-মা বাধা দিলেও একসময় দেন পূর্ণ
সমর্থন। মা বলেছিলেন, ‘ভালো করে খেলতে হবে। ’ সেই স্বপ্না দেশের স্বপ্ন
পূরণের অংশীদার হয়ে গেছেন।
স্বপ্না সাফ চ্যাম্পিয়ন টিমের ফরোয়ার্ড
খেলোয়াড়। গতকাল সোমবার নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। সেই জয়ে
সিরাত জাহান স্বপ্না ভার্চুয়ালি বলেন, ‘নেপালের মাটিতে খেলে জয়লাভ করেছি।
গর্ববোধ করছি বাংলাদেশ নিয়ে। শক্তিশালী টিম হলেও হারিয়েছি তাদেরকে। আমি
রংপুরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ’
রংপুর সদর উপজেলার
সদ্যপুষ্করিণী ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রামের মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্না। এখন ওই
গ্রামটির পরিচিতিই ফুটবলকন্যার পরিচয়ে। তাকে নিয়ে গর্ব করছেন বাবা-মা।
স্বপ্না এখন গ্রামের অনেক ফুটবলকন্যার আইকন। গ্রামে স্বপ্নার ফুটবল খেলা
নিয়ে যারা বিরোধিতা করতেন তারাও আজ খুশিতে আত্মহারা।
মঙ্গলবার দুপুরে
স্বপ্নার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় উৎসুক মানুষের ভিড়। স্বপ্নার বাবা-মায়ের
চোখে আনন্দের পানি। বাড়িতে, গ্রামে মিষ্টি বিতরণ আর হৈচৈয়ে মেতেছেন মানুষ।
হাট-বাজার, দোকান, পাড়া-মহল্লা সবখানেই এখন চলছে স্বপ্নার বন্দনা। যা শুরু
হয়েছে সোমবার রাত থেকেই।
স্থানীয় দোকানদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্বপ্না
যেমন আমাদের গর্ব তেমনি গোটা দেশের সম্পদ। এই গ্রামের মেয়েরা অনেক বাধা
উপেক্ষা করে ফুটবল খেলা শুরু করে। আমরা স্বপ্ন দেখছিলাম বিশ্বজয়ের। ’
স্বপ্নার
মা লিপি বেগম বলেন, ‘চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে তার ফুটবল খেলার প্রতি
আগ্রহ তৈরি হয়। তখন রাগ করতাম। পরে আমার ভাই আব্দুল লতিফ এসে তাকে নিয়ে
যায়। তখন বলেছিলাম ভালো করে খেলতে হবে। সেই থেকে খেলছে। মেয়েকে খুব কষ্ট
করে মানুষ করছি। অনেকে কটূকথা বলেছিল, তারাও আজ খুশি। আজ গর্ব হচ্ছে। ’
স্বপ্নার
বাবা মোকছার আলী পেশায় একজন কৃষক। মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দের সীমা নেই তার।
তিনি বলেন, ‘খুব আনন্দ লাগছে। আজ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল জয়ী হয়েছে। এতে
আমার মেয়ে খেলেছে। আমরা সবাই খুব খুশি। আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
সে যাতে দেশের জন্য আরো ভালো কিছু করতে পারে। ’
সদ্যপুষ্করিণী যুব
স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ মিলন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই গ্রাম নারী
ফুটবলারদের গ্রাম। তবে এর আগে কখনো সাফ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এটাই প্রথম।
এই দলে স্বপ্না ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলেছে। তার এই সফলতায় আমরা খুশি এবং
আনন্দিত। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে তাকে বড় সংবর্ধনা দেওয়ার। ’