টানা
খেলার ক্লান্তি এখনও সঙ্গী। ভ্রমণের ধকল তো আছেই। সাবিনা খাতুনের চেহারায়
এই ছাপ স্পষ্ট। বিমানবন্দরে নামার পর থেকে ভালোবাসার ‘অত্যাচারও’ চলতে
থাকল। ভিড়বাট্টা, হইহল্লায় এক-দু এগোনোই কঠিন। তবে শ্রান্তিকে পাত্তা না
দিয়ে সারাক্ষণই মুখে চওড়া হাসি ঝুলিয়ে রাখলেন সাবিনা। বিমানবন্দরে দারুণ
অভ্যর্থনা পেয়ে অভিভূত বাংলাদেশ অধিনায়ক গর্বিত কণ্ঠে তাদের স্মরণীয় সাফল্য
উৎসর্গ করলেন দেশের মানুষকে।
নেপালে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে
বুধবার দুপুর দুইটার একটু আগে ঢাকায় পা রাখে বাংলাদেশ দল। বিমানবন্দরে নানা
আয়োজনে তাদেরকে বরণ করে নেওয়া হয়।
পরে বিমানবন্দরেই ছোট্ট সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানান সাবিনা।
“আমাদেরকে
এত সুন্দর করে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। মন্ত্রী মহোদয় ও
ফেডারেশনের যারা এসেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের মেয়েদের,
বাংলাদেশের ফুটবল যে আপনারা এত ভালোবাসেন, এসব দেখে আমরা অনেক অনেক গর্বিত।
সবাইকে ধন্যবাদ, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বলুন
বা ১৮ কোটি কিংবা ২০ কোটি, এই ট্রফি বাংলাদেশের সব মানুষের।”
নারী
সাফে আগের সব আসরের চ্যাম্পিয়ন ও এবারও ফেভারিট হয়ে আসা ভারতকে গ্রুপ
পর্বেই উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। একের পর এক জয় ও প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে
ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষেও দাপুটে জয়ে শিরোপা জয় করে বাংলাদেশ।
সেই
জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সাবিনা। ৮ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ
গোলস্কোরার তিনি, আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জেতেন তিনিই।
বাংলাদেশ
নারী ফুটবলের মুখ হয়ে ওঠা এই ফুটবলার আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন, অনেক
পরিশ্রম ও পরিকল্পনার ফসল এই জয়। এবার তারা তাকাতে চান আরও উঁচুতে।
“আমাদের
ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন স্যার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা,
মন্ত্রী মহোদয়ের সহায়তায় ২০১২ সাল থেকে মহিলা ফুটবল ভালোভাবে চলছে। মেয়েদের
পরিশ্রম যদি দেখেন, ৪-৫ বছরের সাফল্য দেখেন, এতেই সব বোঝা যায়।”
বিমানবন্দরে
সাবিনাদের নিয়ে ছিল কেক কাটার পর্ব। দলের সবার গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বাইরে দলকে বরণ করে নিতে
অপেক্ষায় ছিল হাজারও জনতার স্রোত। তাদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, ব্যানার।
স্লোগানে মুখর ছিল চারপাশ।
এক যুগের বেশি সময় ধরে নারী ফুটবলারদের
সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে আসা কোচ এবং এই সাফল্যের নেপথ্য কারিগর গোলাম
রব্বানী ছোটনও মুগ্ধ দেশে ফিরে এমন সংবর্ধনা পেয়ে।
“রাজসিক এই
আয়োজনে আমাদের বরণ করে নেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের এই পথচলা অনেক
দিনের। অনেক পেছন থেকে আমরা উঠে এসেছি, ২০১২ সাল থেকে পরিবর্তনটা শুরু
হয়েছিল। সবার অবদানেই আজকের এই সাফল্য।”
বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে
সাজিয়ে রাখা ছাদখোলা বাসে উঠে যান দলের সবাই। পথজুড়ে দুই পাশে দেখা যায়
জনতার ভিড়। হাত নাড়িয়ে গলা ফাটিয়ে তারা অভিবাদন জানান মেয়েদের। ট্রফি
উঁচিয়ে, জাতীয় পতাকা উড়িয়ে অভিনন্দনের জবাব দেন সাবিনারা।