তানভীর দিপু ||
গত
বছর কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দিঘীর পাড়ের অস্থায়ী দূর্গা পূজামণ্ডপে কোরআন
পাওয়ার জেরে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার কথা
মাথায় রেখে এবার কুমিল্লায় দুর্গোৎসবে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ
করেছে প্রশাসন। অস্থায়ী পূজা মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় প্রাধান্য দিয়ে জেলা
পূজা উদযাপন প্রস্তুতি সভায় ‘বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা’র কথা জানিয়েছেন
কমিটির নেতৃবৃন্দ। নির্দেশনা মত, অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ কমিয়ে আনার জন্য
হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের অনুরোধ করেছে কমিটি। সকল মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা,
নিজস্ব স্বেচ্ছসেবক নিয়োজিত রাখা এবং সূর্যাস্তের আগে বিসর্জন সমাপ্ত করার
জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,
আগামী ১ অক্টোবর থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দুর্গোৎসবে কুমিল্লার ৭৯৪টি
মণ্ডপে পূজা চলাকালীন সময়ে দিন রাত আনসার সদস্যদের প্রহরা থাকবে। এছাড়া
পুলিশ, র্যাব, বিজিবির আলাদা টহল থাকবে। আগামী তিন দিনের মধ্যে জেলার কোন
কোন পূজা মণ্ডপে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রয়োজন তার তালিকা চাওয়া হয়েছে পূজা
উদযাপন কমিটির কাছে। এছাড়া পূজার সময় মণ্ডপের জন্য সরকারি বরাদ্দ সঠিক সময়ে
পৌঁছে যাবে বলেও জানানো হয়।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লা জেলা
প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজা উদযাপন
উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলাসহ অন্যান্য বিষয়ে বিশেষ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন
কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ ক ম বাহা উদ্দিন
বাহার। এসময় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আবদুল মান্নান, র্যাব-১১
সিপিসি-২ এর অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন, লেখক ও গবেষক শান্তিরঞ্জন
ভৌমিক, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও চান্দিনা উপজেলা পরিষদের
চেয়ারম্যান তাপস বকশী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল,
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল, মহানগর পূজা উদযাপন
কমিটির সভাপতি অচিন্ত্য দাস টিটুসহ মুসলমান ধর্মীয় নেতা, ইমাম, ব্যবসায়ী
নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায়
সদর সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ ক ম
বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, নানুয়া দিঘীর পাড়ের পূজা মণ্ডপে এবার আরো জাঁকজমক
ভাবে পূজা হবে। জেলার সকল পূজা মণ্ডপে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপত্তা
বলয় তৈরী করা হবে। মন্দির ও মণ্ডপে প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামীলীগ, যুবলীগ,
ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাসেবকরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। কুমিল্লা এবার উৎসব
মুখর এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশে দুর্গোৎসব পালিত হবে।
সভার সভাপতি জেলা
প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, মণ্ডপের পরিধি অনুসারে বড় মণ্ডপে ৮
জন, বরোয়ারি মণ্ডপে ৬ জন এবং পারিবারিক পূজা মণ্ডপে ৪ জন করে আনসার সদস্য
পূজা চলাকালীন সময়ে দিনরাত নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির
টহল মোতায়েন থাকবে। একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হবে- যেখাণ থেকে পুরো জেলার
পূজার সার্বক্ষণিক খবর নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ উপজেলার মন্দির
এবং মণ্ডপগুলোর তালিা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
পুলিশ
সুপার মোঃ আবদুল মান্নান বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কেউ যেন
উস্কানি কিংবা গুজব না ছড়াতে পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আগামী বছর থেকেই যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হবে সেই বিবেচনায়
স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ধর্মকে ব্যবহার না
করতে পারে সে দিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয়
নেতৃবৃন্দে পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদেরকেও তিনি অনুরোধ করে বলেন, যে কোন
গুজব কিংবা উস্কানিতে আগে কান না দিয়ে যাচাই করা এবং প্রয়োজনে পুলিশকে
জানানো প্রয়োজন। পুলিশ সুপার বলেন, কুমিল্লার যে সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে
এই দূর্গা পূজায় আমরা প্রমান দিতে চাই।
এদিকে জেলায় এবার ৭৯৪টি
মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি তাপস
বকশী বলেন, আমরা সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আশাবাদী। ঝূঁকিপূর্ণ মণ্ডপের
তালিকা প্রশাসনকে দেয়া হবে। আমরা নিজেরাও সচেষ্ট থাকবো যেন মণ্ডপে কোন
উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরী না হয়।
মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারন
সম্পাদক অচিন্ত্য দাশ টিটু বলেন, আমরা সরকারি সকল নির্দেশনা মেনে এবার
উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালন করবো।
সভায় উপস্থিত মুসলমান
ধর্মের নেতাদের মধ্যে আলহাজ্ব আলমগীর খান বলেন, আমরা অতীতেও সনাতন
ধর্মাবলম্বী ভাইদের পাশে ছিলাম এবং এবারও যে কোন উৎসবে পার্বণে তাদের পাশে
থাকবো। কুমিল্লা ঐতিহ্য আমরা বিনষ্ট হতে দিবো না।