Published : Friday, 23 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 23.09.2022 1:40:44 AM
তানভীর দিপু:
কুমিল্লায়
এবার কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন মোঃ সিয়াম নামে ১৮ বছর বয়সি
এক কলেজ ছাত্র। বৃহষ্পতিবার দুপুরে জেলার তিতাস উপজেলার দাখিল পরীক্ষা
কেন্দ্র গাজীপুর আজিজিয়া সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসার সামনে এই হত্যাকাণ্ডের
ঘটনা ঘটে। নিহত সিয়াম মুন্সিগঞ্জ পলিটেকনিকে প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং তিতাস
উপজেলার চরমোহনপুর গ্রামের বাকের সরকারের ছেলে। সিয়ামের উপর হামলা চালানো
সবাই দাখিল পরীক্ষার্থী এবং মেঘনা উপজেলার ব্রাহ্মণচর নয়াগাও সিনিয়র আলিম
মাদ্রাসার ছাত্র। অভিযুক্ত ৮ জনের মধ্যে ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের
সবার বয়সই ১৯ বছরের নিচে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,
ফেসবুকে তর্কাতর্কির জেরে সিয়ামের উপর হামলা চালায় ৮ কিশোর। এসময় তাকে
এলোপাথারি ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত সিয়ামকে তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সিয়ামের
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ফেসবুকে সিয়ামের
সাথে নাজমুল নামের এক ছেলের তর্কাতর্কি হয়। ব্যাপারটি সিয়াম তার বাবাকেও
জানায়। ওই ঘটনায় সিয়ামকে হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলো সে।
পরবর্তীতে এই বিরোধের মীমাংসা করার জন্যই বৃহষ্পতিবার গাজীপুর আজিজিয়া
সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসার সামনে যায়। সেখানে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বেশ
কয়েকজন তার উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং সিয়ামকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
বৃহষ্পতিবার বিকালেই পুলিশের অভিযানে মেঘনা উপজেলার ব্রাহ্মণচর গ্রামের
মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে মুকুল আহম্মেদ, আওলাদ হোসেনের ছেলে মাসুম বিল্লা,
শফিক মিয়ার ছেলে সায়মুন মিয়া, জয় মিয়ার ছেলে সাকিব ও নাজির হোসেনের ছেলে
জুনায়েদকে আটক করা হয়। পালিয়ে যাওয়া নাজমুল, সৌরভ এবং ওমর ফারুককে
সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তিতাস থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)
সুধীন চন্দ্র দাস বলেন ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা
হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে-
প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে সিয়ামের সাথে নাজমুলের তর্কাতর্কি ও বিরোধ হয়। এই
বিষয়ে কথা বলার জন্যই সিয়াম ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে যায়। কথা বলার এক
পর্যায়ে সাকিব নামে ্একজন দৌঁড়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী বাসা থেকে একটি ধারালো
ছুরি নিয়ে আসে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সিয়ামকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সিয়ামের
তলপেটে ছুরির দু’টি আঘাত আছে। ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়,
পরীক্ষার কারণে নাজমুলসহ অন্যান্যরা গাজীপুর মাদাসার পাশে একটি বাসায় ভাড়া
থাকতো। নাজমুলের সাথে সিয়ামের তর্কের কথা শুনে অন্যরা ওই বাসা থেকে বের হয়ে
আসে এবং সবাই মিলে হামলা করে। বৃহষ্পতিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কোন মামলা
দায়ের হয় নি। গ্রেপ্তারকৃতরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের
জবাবে ওসি সুধীন চন্দ্র দাস বলেন, এই বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের উপর নির্ভর
করে। যেহেতু তারা একটি গুরুতর অপরাধের সাথে জড়িত- এবিষয়ে আমার কিছু বলা ঠিক
হবে না।
এদিকে গত দুই মাসে কুমিল্লা জেলা জুড়ে কিশোর গ্যাং এর
দৌরাত্মে অন্তত ১০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। খুন এবং আহতের উদাহরনও আছে এসব
ঘটনায়। গত ১৯ আগষ্ট সন্ধ্যায় কুমিল্লার নগর উদ্যানের সামনে প্রকাশ্যে
শাহাদাত নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে অপর এক কিশোর গ্যাংয়ের
সদস্যরা। এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অন্তত ১৫ জন কিশোরগ্যাং সদস্যকে
গ্রেপ্তার করে। সর্বশেষ নগরীর রামমালা এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ শোডাউনের
ঘটনায় র্যাবের হাতে গ্যাং স্টার ও ডেঞ্জারাস সাইলেন্ট গ্রুপ নামে দুই টি
কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
কিশোর গ্যাং এর
দৌরাত্মের বিষয়টি প্রাধান্য পায় কুমিল্লার নবাগত পুলিশ সুপারে মোঃ আবদুল
মান্নানের সাংবাদিকদের পরিচিতি সভায়ও। শাহাদাত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে
এনে কুমিল্লার নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ আবদুল মান্নান বলেন, কুমিল্লার কিশোর
গ্যাং এর তালিকা করে গ্যাং কালচার প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এবিষয়ে তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাক্তিবর্গের সচেতন সহযোগিতা চান।