নিখোঁজের ২৯ দিন পর উদ্ধার হওয়া খুলনার বহুল আলোচিত রহিমা বেগম কারও কাছে যেতে চান না। এমনকি কারও সঙ্গে কথাও বলতে চান না। তবে তার মুখ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআিই)।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান।
তিনি বলেন বলেন, থানা পুলিশের কাছ থেকে রহিমা বেগমকে নেওয়ার পর থেকেই তিনি মুখ বন্ধ করে আছেন। বারবার বলছেন আমি কারও কাছে যেতে চাই না, কারও সঙ্গে কথা বলতে চাই না। আজ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা জানার জন্য পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন অভিযোগ করে সৈয়দ মোশফিকুর বলেন, মরিয়ম মান্নান বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। তিনি কেন এটা করেছেন তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে যাই হোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশ্বাস করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে।
রহিমা বেগমকে নিয়ে অপহরণ মামলাটি টক অব দ্য কান্ট্রি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মামলার তদন্তে আমরা কোনো ত্রুটি রাখতে চাই না।
গ্রেফতার হওয়া ছয়জনের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, তাদের বিষয়ে আমরা তদন্ত করবো। এ ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি-না তা জানার চেষ্টা করছি। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হলে আদালতে জানাবো।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে নিয়ে আসা তিনজনের বিষয়ে সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, আমরা তাদেররও জিজ্ঞাসাবাদ করবো। ক্যাম্পের কাছ থেকে তাদের আমরা এখনো বুঝে নেইনি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, ময়মনসিংহের ফুলপুরে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মরিয়ম মান্নানকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। পিবিআই ময়মনসিংহ ইউনিট সেই মরদেহের ডিএনএ টেস্ট করার জন্য সহযোগিতা করেছে। তবে আমরা যেহেতু ভিকটিমকে পেয়ে গেছি, তাই এখন আর ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন হবে না।
২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রহিমা বেগম (৫২)। এরপর আর বাসায় ফেরেননি। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান মেলেনি। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন তার সন্তানরা। এ মামলা তদন্তকালে পুলিশ ও র্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করে।
১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে দেন। এখন এ মামলার তদন্ত করছে পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের মরদেহ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। একই সঙ্গে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক নারী মরদেহকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন।
এদিকে শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুসের বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কোনো কথা বলছেন না বলে জানিয়েছে পুলিশ।