মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে কালাম-রাজীর সমর্থকদের সংঘর্ষ ॥ গুলিবর্ষণ, গাড়ি ভাংচুর, আহত ৫---
Published : Wednesday, 5 October, 2022 at 12:00 AM, Update: 05.10.2022 12:06:11 AM
জহির শান্ত:
সংসদ
ভবনের এলডি হলে হাতাহাতি করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসা কুমিল্লার দেবিদ্বারের
এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ আবারো
আলোচনায় এসেছেন মারামারি করে। তবে এবার তারা নিজেরা নয়; দুর্গাপূজার মণ্ডপ
পরিদর্শনে গিয়ে দুই নেতার উপস্থিতিতে সংঘর্ষ হয়েছে তাদের অনুসারীদের মধ্যে।
ঘটেছে গাড়ি ভাংচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনাও। ফলে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে
কুমিল্লার দেবিদ্বারের রাজনীতি। এ ঘটনার জন্য একে অপরকে দুষছেন তারা। এসময়
উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর ও সরকারি গাড়িতে কয়েক রাউন্ড
গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। পরে নেতা-কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেন।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌরসভার ভিংলাবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ
ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের
মধ্যে ভিংলাবাড়ি এলাকার মো. সজিব মিয়াকে আশংকাজনক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত অন্যরা হলো, ভিংলাবাড়ি এলাকার মো. জহির ও
মাহবুব হোসেন, বানিয়াপাড়ার হিমেল ও শুভ।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে,
দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনি সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের
চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ সোমবার দিবাগত রাতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে
পৌরসভার আলিয়াবাদ এলাকায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন। একই সময়ে স্থানীয় এমপি
রাজী মোহাম্মদ ফখরুলও তাঁর নেতা-কর্মীদের নিয়ে একই এলাকায় পূজামণ্ডব
পরিদর্শনে আসেন। এক পর্যায়ে বহরের গাড়ি সাইডে রাখা নিয়ে উভয়ের
নেতা-কর্মীদের বাক-বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রনে আনেন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ তাঁর গাড়ি
বহর নিয়ে পৌরসভার ফতেহাবাদ এলাকার একটি মণ্ডব পরিদর্শন শেষে ভিংলাবাড়ি এসে
স্থানীয় এক নেতার বাড়িতে চা খাচ্ছিলেন। এসময় এমপি রাজী ফখরুলের গাড়ি বহর
আলিয়াবাদের মণ্ডব পরিদর্শন শেষে ফতেহাবাদ এলাকার অন্য আরেকটি মণ্ডবে যাওয়ার
পথে নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেল থেকে আবুল কালাম আজাদ ও তাঁর অনুসারীদের
উদ্দেশ্যে করে উস্কানিমূলক শ্লোগান দিলে আবুল কালাম আজাদের অনুসারীরাও
পাল্টা জবাব দেন। এতে রাজী ফখরুলের অনুসারীরা উত্তেজিত হয়ে আবুল কালাম
আজাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে আবুল কালাম আজাদ বের হয়ে
পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে এসময় তাকে
উদ্দেশ্যে করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা
চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিটি
পূজামণ্ডব পরিদর্শন করে আসছিলাম। স্থানীয় এমপি রাজী ফখরুলের নেতা-কর্মীরা
তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রথমে আলিয়াবাদ এলাকায় আমার নেতা-কর্মীদের মারধর করে। পরে
আমি নেতা কর্মীদের নিয়ে ফতেহাবাদ এলাকায় একটি মণ্ডব পরিদর্শন শেষে
ভিংলাবাড়ি এলাকায় পৌছলে পুনরায় তাঁরা হামলা চালায়। আমি তাদের নিবৃত্ত করতে
গেলে তাঁরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সন্ত্রাসীরা
আমার ব্যবহৃত গাড়ি ও উপজেলা পরিষদের সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমার পাঁচজন
নেতা-কর্মীকে পিঠিয়ে আহত করেছে। এর মধ্যে গুরুতর সজিব নামে একজনকে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, সংসদ
সদস্য রাজী ফখরুলের গাড়িবহর ফতেহাবাদ এলাকার পুজামন্ডবে যাওয়ার পথে উপজেলা
চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের লোকজন আমাদের দেখে উস্কানিমূলক শ্লোগান দেন।
এতে দুই পক্ষের মধ্যে বাক বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে উপজেলা
চেয়ারম্যানের গাড়ি কে বা কারা ভেঙেছে আমাদের জানা নেই।
দেবিদ্বার থানার
অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, সংর্ঘষের ঘটনাটি পুজামন্ডপের বাহিরে
ঘটেছে। তবে দুই পক্ষের কোন পক্ষই অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা
নেওয়া হবে ।
এর আগে দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে
প্রস্তুতি সভা চলাকালে সংসদ ভবনে এলডি হলে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন এমপি রাজী
মোহাম্মদ ফখরুল ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। পরে আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে এ ঘটনার মিমাংসা হয়। কিন্তু সেই রেশ
কাটতে না কাটতেই আবারো সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেন তারা।