দেবিদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়ন পরিষদে বিরোধের নিষ্পত্তি হয় চেয়ারম্যানের এজলাসে
Published : Wednesday, 12 October, 2022 at 12:00 AM
শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
পল্লী অঞ্চলে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে বিরোধ মীমাংসার প্রাচীন পদ্ধতি গ্রাম আদালত। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে এ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন বিরোধের নিষ্পত্তি করা হয়। ২০১৬ সালে গ্রাম আদালত কার্যকর হয়। প্রচলিত আদালতে মামলাজট কমাতে এই গ্রাম আদালত গঠন করা হয়।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়ন পরিষদে তৈরী হয়েছে এমনিই একটি আদালতের ‘এজলাস্’। ছোটখাটো ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারির ঘটনা মীমাংসা হয় এ অদালতে। এ আদালতের এজলাসের বিচার চলাকালে বিচার প্রার্থী ও অপরাধীকে দুই পাশে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। কাঠগড়ার পাহাড়াদার থাকেন দুইজন গ্রাম পুলিশ। এজলাস্রে সামনে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বসার চেয়ার। ওপরে বিচারকের আসনে বসেন ইউপি চেয়ারম্যান হাজী জালাল উদ্দিন। তিনি দুই পক্ষ ও স্বাক্ষীদের কথা শুনে ৫জন করে ১০ জনের একটি জুড়িবোর্ড গঠন করে। ওই বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অপরাধের শাস্তি ঘোষণা ও রায় কার্যকর করেন। গত ৪ মাসে তিনি স্বামী-স্ত্রীর বিবেদ, জায়গা-জমি, মারামারি, অর্থ লেনদেনসহ বেশ কিছু সমস্যা সমাধান করে প্রশংসিত হয়েছেন।
ভানী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আলী আশরাফ বলেন, গ্রামে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, বিরোধ মিমাংসাসহ গত চার মাসে চেয়ারম্যান নিজে উদ্যোগী হয়ে সমাধান করেছেন। এতে দুই পক্ষই খুশি হয়েছেন। এমনও দেখা গেছে, স্বামী-স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি সিদ্ধান্তও পাল্টিয়ে তাদের উভয়কে এক করে সংসার টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। গ্রামের মানুষ যাতে থানা-পুলিশ, আদালতে যেতে না হয় সেজন্য তিনি গ্রাম আদালতকে খুব গুরুত্বসহকারে দেখেছেন। গ্রামের মানুষও ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় চেয়ারম্যান হাজী জালালের কাছে ছুঁটে আসেন।
ভানী ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের বিচার প্রার্থী আবদুর রব বলেন, জায়গা-জমির বিরোধ নিয়ে প্রতিবেশীরা আমাকে মেরে প্রচণ্ড জখম করেছেন। আমি থানায় মামলা করেছি। চেয়ারম্যান হাজী জালাল উদ্দিন তিনি নিজে থানায় কথা বলে, গ্রাম আদালতে দুই পক্ষকে ডেকে বিচারের ব্যবস্থা করেন। আমি এ বিচারের সন্তুষ্ট হয়েছি।
আবুল খায়ের নামে ভানী ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জানান, দিনে দিনে গ্রাম্য আদালতে সালিশি ব্যবস্থায়ও ঢুকে পড়েছে পক্ষপাতিত্ব, রাজনীতি ও অবৈধ অর্থের লেনদেন। কিছু ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতেও চলছে বিচারের নামে প্রহসন। কিন্তু ভানী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে মানুষ ন্যায় বিচারের জন্য আসেন। বিচার প্রত্যাশীরা বিচার সন্তুষ্ট হয়।
ভানী ইউপি চেয়ারম্যান হাজী জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মাত্র চার মাস হল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এই ইউনিয়নকে বদলে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করব। আমার কাছে সবাই সমান। তিনি আরও বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় এ ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে একটি চেয়ারও পায়নি। এমনকি চেয়ারম্যানের চেয়ারও নিয়ে গেছে। জরার্জীণ ভবনের রঙ-পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। টিউবওয়েল, টয়লেট, পরিষেদের গেইট কিছুই ছিলনা, এ সবগুলো কাজ সম্পন্ন করেছি, আরো কিছু কাজ চলমান রয়েছে। ভবনের সামনে পুকুরপাড়ে রির্টানিং ওয়াল করব। ইনশাআল্লাহ জনগণ আমার পাশে থাকলে ভানী ইউনিয়ন পরিষদে সেবার মান উন্নত করে জনগণের খেদমত করে যাব।