অভিভাবকদের সচেতনতার বিকল্প নেই
প্রতিটি ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে: পুলিশ সুপার
Published : Thursday, 13 October, 2022 at 12:00 AM, Update: 12.10.2022 11:56:42 PM

তানভীর দিপু:
কুমিল্লায়
বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। গত জুলাই ও আগষ্ট মাসের তুলনায়
সেপ্টেম্বর মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা ও
অভিযোগের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। সেপ্টেম্বর মাসে কুমিল্লা জেলায় নারী ও
শিশু নির্যাতনের মোট ৪২ টি ঘটনার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়, গত জুলাই ও আগষ্ট
মাসে যে সংখ্যা ছিলো একই- ওই দুই মাসে ২৪টি করে ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে। এর
মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪টি ঘটনার অভিযোগ কোতয়ালী থানায়। গত ১১ অক্টোবর
কুমিল্লা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির অপরাধ চিত্র বিবরণী পর্যালোচনায় এ তথ্য
উঠে এসেছে।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসের অপরাধ
চিত্রে যে ৪২ টি নারী ও শিশু নির্যাতনের তথ্য দেয়া হয়েছে এর মধ্যে ১৮ টি
ধর্ষনের ঘটনা। বাকি ঘটনাগুলোর মধ্যে ধর্ষণ চেষ্টা, বলাৎকার, মারধর, হুমকিসহ
অন্যান্য ঘটনা রয়েছে। পুলিশ এবং বিভিন্ন ঘটনার পর্যালোচনায় দেখা গেছে,
বেশির ভাগ শিশু ধর্ষণ-বলাৎকার কিংবা মারধরের শিকার হয়ে তাকে নিকটত্মীয়
কিংবা খুব পরিচিতদের লালসায়। অপর দিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবাসিক
শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের দ্বারা নির্যাতনের ঘটনাও রয়েছে। বাসাবাড়িতে শিশু
গৃহপরিচারিকারা মারধরের শিকার হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক নারী নির্যাতনের ঘটনা
বেশির ভাগই ঘটে থাকে পরকীয়া প্রেম এবং যৌতুকের কারণে। যেসব ঘটনার বেশির
ভাগই অসহ্যের পর্যায়ে না পৌঁছালে অভিভাবক কিংবা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী জানতে
পারে না। অপর দিকে দেখা গেছে, এসব ঘটনার পেছনে অভিভাবকদের অসচেতনতা
প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে। কোন কোন সময় এসব ঘটনার বিচার ও
শাস্তিও অনিশ্চয়তায় পরে যায় অভিভাবকদের সচেতন এবং বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে।
এসব অপরাধ তদন্তের সাথে জড়িত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নারী ও শিশু
নির্যাতনের অভিযোগ সালিশ বা বৈঠকের মাধ্যমে দফারফার প্রবণতা রয়েছে। বিশেষ
করে গ্রামাঞ্চলে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে সামান্য জরিমানা ও মুচলেকার
মাধ্যমে শেষ হয়। পাড় পেয়ে যায় অপরাধীরা। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচারে
প্রভাব খাটানোদের থামাতে জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ সহযোগি হিসেবে ভিকটিমের
পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আবদুল
মান্নান বলেন, থানায় কেউ অভিযোগ বা মামলা করতে এসে ফিরে যাবে- সেটা আমি
চাই না। প্রতিটি থানায় নির্দেশ দিয়েছি- যে কোন অভিযোগ যেন নিরক্ষণ করে
তদন্ত করা হয়। কোথায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে তার অভিযোগ দায়ের
সুনিশ্চিত হলে অপরাধী শনাক্ত এবং তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি
করানো সহজ হয়। আমরা প্রতিটি ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।
জেলা
মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোছাঃ কানিজ তাজিয়া
জানান, পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা
বেড়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন ঠেকানোর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা।
শিশু নির্যাতন ঠেকাতে অভিভাবকের সচেতনতার কোন বিকল্প নাই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী
ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তাদের নিজস্ব নিয়মে অভিযোগ পাবার প্রেক্ষিতে কাজ
করে- কিন্তু এসব ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য অভিভাবকরা সচেতন এবং সোচ্চার থাকতে
হবে।
বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা গেছে, গত একমাসে কুমিল্লার কোতয়ালী
থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১৪টি অভিযোগে দায়ের হয়েছে, এর মধ্যে
২টি ধর্ষনের ঘটনা। দেবিদ্বার ও মুরাদনগরে ৩ টি করে ঘটনা রয়েছে, যার মধ্যে
শিশু বলাৎকারের মত নৃশংসতার অভিযোগ রয়েছে। কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় যে ৪টি
ঘটনা রয়েছে এর মধ্যে ৩টিই শিশু ধর্ষনের ঘটনা। মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, বিষয়টি খুবই এলার্মিং(শঙ্কার)।
প্রতিটি ঘটনায় মামলা তদন্ত চলছে। আসামি গ্রেপ্তার রয়েছে আমরা দ্রুত মামলা
গুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি। এছাড়া দাউদকান্দি থানার ৪টি ঘটনার মধ্যে একটি
গণধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে । দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ
আলমগীর ভুইয়া বলেন, সোনালী আঁশ কারখানার একজন নারী শ্রমিককে শহিদনগর এলাকায়
জঙ্গলে গণ-ধর্ষনের শিকার হতে হয়। এই ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার রয়েছে এবং ১৬৪
ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ধর্ষণের ঘটনার সূত্রপাত হয়
‘প্রেমের’ মাধ্যমে।
কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের
স্পেশাল পিপি মোঃ মিজানুর রহমান মজুমদার জানান, নারী ও শিশু নির্যাতনের
ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চত করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও আইন অনুযায়ী
এসব অভিযোগের তদন্ত ও অভিযোগপত্র দাখিল করছেন। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন
কমাতে সামাজিক দায়বদ্ধতা জরুরি। অভিভাবকদের সন্তানের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
তারা কোথায় যাচ্ছে কার সাথে মিশছে বিষয়গুলো নজরে রাখতে হবে। অপরদিকে
মোবাইল, ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে
হবে- বেশিরভাগ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার সূত্রপাত ঘটে সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যমে। অর্থাৎ আমাদের সবাইকে অনলাইন এবং অফলাইনে সামাজিক
সচেতনতা জোরদার করতে হবে।