
সম্প্রতি
এক সংবাদ সম্মেলনে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন এক
জঙ্গি সংগঠনের কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। নতুন
জঙ্গি দলের কথিত আমিরের নাম-পরিচয়ও জানতে পেরেছে তারা। জামাতুল আনসার ফিল
হিন্দাল শারক্বীয়ার অন্যতম অর্থ জোগানদাতাসহ আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথাও
র্যাব ওই সংবাদ সম্মেলনে জানায়। সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয় নিরুদ্দেশ
৩৮ তরুণের পরিচয়।
সে তালিকায় সিলেটের ছয় তরুণের নাম রয়েছে। কালের কণ্ঠে
গতকাল প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, সিলেটে এক বছরে ১২ তরুণ নিখোঁজ হয়েছে।
ফিরেছে চারজন। গত এক সপ্তাহে নিখোঁজ তিন কিশোরের একজনের সন্ধান মিললেও
অন্য দুজনের হদিস নেই।
দেশে জঙ্গিবাদের চর্চা দৃশ্যমান হয় দুই দশক আগে
আত্মঘাতী বোমা হামলার মধ্য দিয়ে। শুরুর দিকে পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে,
রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে এবং আরো কিছু জায়গায়
বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এরপর বাংলা ভাইয়ের উত্থান ঘটে। বাংলাদেশের
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দীর্ঘদিন থেকেই জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা
করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা কিছুটা দুর্বল
হলেও তাদের তৎপরতা থেমে নেই—সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলিই তার সাক্ষ্য দিচ্ছে।
আর সে কারণেই আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে সময়ের দিকে। কখন জঙ্গিরা নতুন করে
তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে বা নতুন জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে? আমাদের
জন্য সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে আগামী এক বছরের মধ্যে দেশে একটি
জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো
তাদের নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশ
করছে। কোনো কোনো স্থানে মুখোমুখি অবস্থানে যাচ্ছে কেউ কেউ। ধারণা করা যেতে
পারে, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ততই উত্তপ্ত হবে।
ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী দলগুলো নতুন নতুন এজেন্ডা নিয়ে জনগণের কাছে
যাবে। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তাতে রাজনীতির মাঠ গরম হবে। মাঠের
উত্তেজনা যত বাড়বে, ততই আড়ালের অপশক্তি অর্থাৎ জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নানা
মাধ্যমে সামনে আসার চেষ্টা করবে।
অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কখনো
রাজনৈতিক দলের আড়ালে, কখনো সামাজিক সংগঠনের ছায়ায় থেকে জঙ্গিরা সংগঠিত
হয়েছে। পরে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে তারা। এরই মধ্যে র্যাব জানিয়েছে,
হিজরতের নামে নিরুদ্দেশ অনেক তরুণ পার্বত্য এলাকার দুর্গম অঞ্চলে পাহাড়ি
বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্যাম্প বা
আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। দেওয়া হচ্ছে বোমা তৈরিসহ সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ
নেওয়ার প্রশিক্ষণও। এসব সংগঠন যে নাশকতার পরিকল্পনা করছে, এমন ধারণা করাও
অযৌক্তিক নয়।
জঙ্গি সংগঠনগুলো নতুন করে সংগঠিত ও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা
করছে। অনেকেই নানা জায়গায় ঘাপটি মেরে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গি নির্মূলে
সরকারের ভূমিকা আরো স্পষ্ট ও জোরালো হতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি
অর্থায়নের অভিযোগ এসেছে, তাদের ব্যাপারেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আরো সক্রিয়
হতে হবে।