
গত
১৬ অক্টোবর রবিবার ছিল বিশ্ব স্পাইন বা মেরুদণ্ড দিবস। দিবসটি উপলক্ষে
‘মেরুদণ্ড অমূল্য সম্পদ, মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখতে হবে’-এই প্রতিপাদ্য নিয়ে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এক ভয়াবহ
তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অনেক শিশু মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে
ওঠে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ভারী ব্যাগ বহনের কারণে অনেকের
মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়, পিঠে-ঘাড়ে চাপ পড়ে।
তাদের বয়স ৪০-৫০ বছরে পৌঁছলে অনেকেই মেরুদণ্ডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
শিক্ষার
মূল লক্ষ্য মানবকল্যাণ; একটি জ্ঞানসমৃদ্ধ জাতি গঠন। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ।
কিন্তু সেই ভবিষ্যৎ নাগরিকদের কাঁধে বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে আমরা কি তাদের
অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছি? বিশ্ব স্পাইন দিবসে আয়োজিত সেমিনারের তথ্য
আমাদের নতুন এই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
শিশুর কাঁধ থেকে বইয়ের
বোঝা নামাতে ২০১৬ সালে উচ্চ আদালত একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীর শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ভারী ব্যাগ বহন
করা যাবে না বলে রায় দিয়েছিলেন আদালত। ধারণা করা গিয়েছিল, হাইকোর্টের এই
রায় দেশের লাখ লাখ শিশুকে বাড়তি বইয়ের বোঝা থেকে মুক্তি দেবে। আনন্দদায়ক
হয়ে উঠবে শিশুর শিক্ষাজীবন। আসলে কি তা হয়েছে? তেমনটি হলে তো বিশ্ব স্পাইন
দিবসে আয়োজিত সেমিনারের তথ্য আমাদের নতুন এক প্রশ্নের সম্মুখীন করত না।
শিশুকে যেন বাড়তি বইয়ের বোঝা বইতে না হয়, এর আগে এ ব্যাপারে নির্দেশনা
দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি পরিপত্রও জারি
করা হয় ২০১৪ সালে। সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে, শিশুরা যে ব্যাগ বহন করবে
তার ওজন শিক্ষার্থীর ওজনের এক-দশমাংশের বেশি নয়। অনুমোদিত বই, উপকরণ ব্যতীত
অন্য কিছু ব্যাগে নিয়ে স্কুলে যাওয়া নিরুৎসাহ করার কথাও ওই পরিপত্রে বলা
ছিল। কিন্তু আমাদের দেশের স্কুলগুলো কি সেই নির্দেশনা মানছে?
সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বাদ দিলে দেশের সব প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক
বিদ্যালয় চলে নিজেদের তৈরি সিলেবাসে। সেখানে বোর্ডের বইয়ের বাইরে একাধিক বই
অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আছে স্কুলের বাড়তি উপার্জনের ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিটি
বিষয়ের ওপর আলাদা খাতা। ‘যত বই তত ভালো লেখাপড়া’—এটাই যেন কোনো কোনো
স্কুলের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঠ্য বইয়ের বাইরে অতিরিক্ত বই পড়ানোর
বাণিজ্যিক সুবিধাও নিচ্ছে অনেক স্কুল। এই ভয়ংকর প্রবণতা শিশুদের ভবিষ্যৎ
ধ্বংস করে দিচ্ছে। যে বয়সে খেলার ভেতর দিয়ে শিক্ষার আনন্দদায়ক পাঠ নেওয়ার
কথা, সে বয়সে একটি শিশুকে টানতে হয় বই-খাতার বোঝা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে,
এতে তারা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়। লেখাপড়ার চাপ শৈশবের
শুরুতেই তার মনোজগতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে বেড়ে উঠুক আগামী প্রজন্ম।