ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
মশা নিধন অভিযান বাড়ান
Published : Thursday, 20 October, 2022 at 12:00 AM
মশা নিধন অভিযান বাড়ানসাধারণত অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসে। এ বছর অক্টোবরেও ক্রমাগতভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সোমবার সকাল ৮টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরে এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ।
এ সময়ে একজন চিকিৎসকসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তার আগের দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৮৫৫ জন এবং সেদিন পর্যন্ত সেটিও ছিল সর্বোচ্চ। অর্থাৎ প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে, রেকর্ড হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা ঢাকায়ই সর্বোচ্চ। সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় যে ৮৫৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৫২৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৩৪ জন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ বছর ডেঙ্গুর এমন নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থার জন্য মূলত দায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন অভিযানের ব্যর্থতা।
কীটতত্ত্ববিদ ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশাবাহিত রোগসহ কিছু রোগব্যাধি দ্রুত ছড়াচ্ছে। ডেঙ্গু তেমনই একটি রোগ। এডিস মশা এর জীবাণু বহন করে। তাঁদের মতে, মৌসুমের শুরুতে যদি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হতো তাহলে রোগটির বিস্তার এতটা খারাপ পর্যায়ে যেত না। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত ডেঙ্গু  প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে অবহিতকরণ এবং মতবিনিময়সভায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রবিবার থেকে তাঁরা মশা নিধনে বিশেষ অভিযান শুরু করেছেন, চলবে আগামী সাত দিন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই কাজটি আরো অনেক আগেই করা প্রয়োজন ছিল।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য মশা নিধন অভিযানে নাগরিকদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন। খুব সামান্য পানিতেই এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। সাধারণত পরিষ্কার পানিতেই এই মশা বংশবিস্তার করে। মানুষ যত্রতত্র পলিথিনের ব্যাগ, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে। সেগুলোতে জমা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা অনায়াসে বংশবিস্তার করতে পারে। ফুলের টবে কিংবা ছোটখাটো পাত্রে পানি জমে থাকলে তাতেও বংশবিস্তার হয়। নির্মীয়মাণ ভবনগুলোতে তো রীতিমতো মশার চাষ করা হয়। আর দুই বাড়ির মধ্যখানে সরু জায়গায় রীতিমতো আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। অনেক বাড়ির সানসেটেও আবর্জনা জমে থাকতে দেখা যায়। এসব জায়গায় এডিস মশার বংশবিস্তার দ্রুততর হয়। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার বংশবিস্তারের সুযোগ নষ্ট করতে হবে। সেই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ মশা ও লার্ভানাশক ওষুধও যথেষ্ট পরিমাণে ছিটাতে হবে। মশার হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় অভিযান সর্বাধিক জোরদার করতে হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে মশা ও পানিবাহিত রোগব্যাধি ক্রমেই বাড়বে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও এই স্বাস্থ্যসমস্যা ক্রমেই প্রকট হবে। এ জন্য জাতীয় নীতিকৌশল ঠিক করে সেই স্বাস্থ্যসমস্যা মোকাবেলায় কাজ করতে হবে। আর ডেঙ্গু যেহেতু নগরের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত, তাই নগর কর্তৃপক্ষকে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।