
প্রদীপ মজুমদার :
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সার। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে সারের কোনো ঘাটতি নেই, কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে।
উপজেলার এক কৃষক আবদুল মালেক গত সপ্তাহে তার আশেপাশের বেশ কয়েকটি সারের দোকানে মিউরেট অফ পটাশ (এমওপি)-এর খোঁজ করেছিলেন, বেশিরভাগ দোকানেই তিনি এই সার পাননি। বহু খোঁজাখুঁজির পর যখন এক দোকানে সারটি পেলেন, বিক্রেতা ৫০ কেজি বস্তার দাম চাইলো দেড় হাজার টাকা। আবদুল মালেক জানান, সাধারণ সময়ে এই সারের দাম আসলে সাড়ে ৭০০ টাকা।
সরেজমিনে গেলে কৃষকদের অভিযোগ, চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছেন না তারা। আর যেখানে পাচ্ছেন, সেখানে থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতদিন এই সংকট শুধু ইউরিয়াতে থাকলেও এখন সেটি মিউরেট অব পটাশ বা এমওপিতেও দেখা যাচ্ছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার ইউরিয়া সারের দাম ৬ টাকা বাড়ানোর পর ৫০ কেজির বস্তার দাম হয় ১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু বাজারে কৃষককে এই সার কিনতে হচ্ছে স্হান ভেদে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে সারের কোনো ঘাটতি নেই, কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।
ডিলাররা বর্তমানে ৫০ কেজির একটি বস্তা থেকে ১০০ টাকা কমিশন পান। তবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণ দেখিয়ে তারা এই কমিশন ২০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন। তেলের দাম বাড়ানোর পর ডিলারদের পরিবহন খরচ বেড়েছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ পয়সা। অর্থাৎ, ৫০ কেজির বস্তা পরিবহনের খরচ বেড়েছে ১০ টাকা।
সারের দাম বৃদ্ধির পেছনে পুরোটাই ডিলারদের কারসাজি বলে মনে করছে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ কারণে মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের জরিমানা করা হয়েছে। বর্ধিত দামে সার বিক্রি ও কালো বাজারে সার বিক্রি এবিষয়ে উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এতে উপজেলার ভূশ্চি বাজারের কৃষাণ এন্টারপ্রাইজ ও জাকির এন্টারপ্রাইজের নাম উঠে আসে। যা জেলা প্রশাসক অফিস থেকে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানা যায়। বর্তমানে উপজেলার নয় ইউনিয়নে বিসিআইসির নয় জন ডিলার এদের কাছ থেকে ওয়ার্ড ভিত্তিক একজন করে উপজেলায় ৮১ জন সাব ডিলার রয়েছে। তাদের অভিযোগ মুল ডিলার তাদের চাহিদা অনুযায়ী সার দিচ্ছে না, বাধ্য হয়ে বাইরের থেকে বেশি দাম সার কিনে বিক্রি করতে হয়। আবার নয় জন ডিলার সবাই এই উপজেলার না হওয়ায় সার তুলে কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
রশিদ ছাড়া সার বিক্রি বন্ধের কথা বলা হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে বিক্রি করে ঠিকই সেক্ষেত্রে রশিদ দেয় না। মূল্যতালিকা টাঙানো থাকে ঠিকই ওই দামে সার বিক্রি হয় না বলে জানা যায়।
লালমাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুনায়েদ কবীর খাঁন জানান বাড়তি দামে সার বিক্রির কথা আমিও শুনেছি ইউএনও স্যার সহ আমরা মোবাইলকোর্ট করেছি।
একজন জনপ্রতিনিধি বেশি দামে সার বিক্রি ও কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ দিয়েছে জেলা প্রশাসক বরাবর, প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন জাকির এন্টারপ্রাইজ, বেলঘর বাজার অনিয়ম করায় ২০১৬ সালে তার সার উত্তোলন বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে কৃষাণ এন্টারপ্রাইজ সেই সার উত্তোলন করছে বলে জানান। তিনি আরও বলেন ইউনিয়ন পর্যায়ে সকল ডিলার স্হানীয় নয়। কিছু ডিলার কুমিল্লা থেকে সার তোলেন।