
গাইবান্ধা-৫
আসনে উপ-নির্বাচন বন্ধের যে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাতে সাবেকদের
সমর্থন পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন,
“উনারা (সাবেক সিইসি ও ইসি) সকলেই একমত পোষণ করেন, আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক
হয়েছে; বলেছেন, এগিয়ে যান।”
বুধবার সাবেক তিন সিইসি এবং ইসিসহ ১৪ জনের সঙ্গে মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের সামনে এসে একথা বলেন হাবিবুল আউয়াল।
গত
১২ অক্টোবর গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি
ক্যামেরায় অনিয়মের দৃশ্য দেখে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দেয় ইসি।
সাত
মাস আগে দায়িত্ব নেওয়া হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসির নজিরবিহীন এই
সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে তারা সাবেকদের পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা
বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
বুধবার তিন ঘণ্টার সেই বৈঠকের পর সিইসি যখন সাংবাদিকদের সামনে আসেন, তখন তার চোখে-মুখে ছিল স্বস্তির ছাপ।
তিনি
বলেন, “গাইবান্ধায় আমরা যে অ্যাকশনটা নিয়েছি, উনারা বলেছেন এটা সঠিক
হয়েছে। আইনগতভাবে ও সাংবিধানিকভাবে ঠিক হয়েছে। উনারা আমাদের মুরব্বিজন,
গুরুজন হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন-সততার সাথে, সাহসিকতার সাথে আমাদের এগিয়ে
যেতে বলেছেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় সিইসির দায়িত্বে থাকা বিচারপতি
আব্দুর রউফ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের এই
অধিকার আছে। তাদের চোখের সামনে ধরা পড়ছে- ভোট দিতে পারছে না, কারচুপি
হচ্ছে। তারা নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বলেছি, দরকার হলে বার বার বন্ধ
করবেন। জাতিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন।”
দশম সংসদ নির্বাচনের সময়
সিইসির দায়িত্বে থাকা কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন
কমিশন সাংববিধানিক বডি। সংবিধান ও আইন মোতাবেক তারা কাজ করে যাবে- আমরা এই
পরামর্শ দিয়েছি।”
সদ্য সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “গাইবান্ধা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার এই ক্ষমতা আছে।”
বুধবারের বৈঠকে কমিশন নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না দিলেও গাইবান্ধা নির্বাচন বন্ধের সার্বিক বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
সিইসি
বলেন, “আজ আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কোনো বক্তব্যই দিইনি; তাদেরকে শুনেছি।
সার্বিক কথা হয়েছে। গাইবান্ধাতে যে একটা ঘটনা ঘটে গেল, আমাদের প্রয়োজন ছিল
আরও এনলাইটেন্ড হওয়া; উনাদের তরফ থেকে কোনো গাইডেন্স আছে কিনা, কিভাবে
মূল্যায়ন করেছেন অতটুকু জেনেছি।”
ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া ইসি সঠিক মনে করলেও নানা ধরনের জটিলতার সংশয়ও অনুভব করে ইসি।
নির্বাচন
আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন
কমিশনারসহ সাবেক ১৪ জনকে নিয়ে বুধবার বৈঠকে বসে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
আইনি জটিলতা দেখা না দেওয়ায় এবং সাবেকদের পাশে পেয়ে অনেকটা উজ্জীবিত কাজী হাবিবুল আউয়াল।
গাইবান্ধায়
দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আপনাদের উদ্দেশ্য প্রশ্ন বিদ্ধ হবে-
সাবেক একজন সহকর্মীর এমন পরামর্শের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি
বলেন, “অপেক্ষা করেন। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি; রিপোর্টটা আসুক। তারপরে
আপনারা দেখেন আমরা কোনো পদক্ষেপ নিই কিনা। ওয়েট অ্যান্ড সি।”
মঙ্গলবার
থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাইবান্ধায় তদন্ত কাজ চালাচ্ছে ইসির তদন্ত কমিটি।
সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।
বুধবারের সভায়
গাইবান্ধা উপ নির্বাচন ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা, ইভিএম ব্যবহার ও সংসদ
নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ এসেছে।
এনআইডি সেবা ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তরের বিরোধিতাও এসেছে।
সিইসি বলেন, “এনআইডিটা এখানেই থাকা প্রয়োজন-এক বাক্যে সবাই একথাটা বলেছেন। উনাদের যে নলেজ রয়েছে, আমার সেটা নেই।”
তিনি
বলেন, “ইভিএম নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে কথা হয়েছে। অধিকাংশই পক্ষে বলেছেন। এটা
নিয়ে জনমনে একটা নেগেটিভ পারসেপশন রয়েছে-এ পারসেপশনটা দূর করতে হবে।”