চাল-চিনি-পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে
Published : Saturday, 22 October, 2022 at 12:00 AM
বাজারে
প্রতি কেজি চিনির দাম গিয়ে ঠেকেছে ১১০ টাকায়। আর এক সপ্তাহের ব্যবধানে
পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৩২ শতাংশ। এছাড়া টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে
বাড়তে থাকা গরীবের মোটা চালের দাম এই সপ্তাহে নতুন করে আরও বেড়েছে। এর
বাইরে শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আগের মতো বাড়তি
দামেই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম এবং ব্রয়লার মুরগি।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা
গেছে।
এদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে
প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশ। টিসিবির তথ্য বলছে,
গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা কেজি দরে, সেই একই পেঁয়াজ এই
সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ টাকার
মতো। আর গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, সেই একই
ধরনের পেঁয়াজ এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
এদিকে বাজারে
দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির হিসাবে, এই দেশি
পেঁয়াজের কেজিতে দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশের মতো। রাজধানীর মানিকনগর এলাকার
বাজারের ব্যবসায়ী মোনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের অফ সিজন, এ জন্য
পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই ১-২ টাকা করে বাড়ছে। যার প্রভাব
পড়েছে খুচরা বাজারেও।’
এদিকে বাজারে এক সপ্তাহ আগেও খুচরায় যে চালের দাম
ছিল ৫২-৫৪ টাকার মধ্যে, সেই চাল কিনতে আজ গুনতে হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা। এর কারণ
হিসেবে দেখা গেছে, বাজারে অধিকাংশ দোকানে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল নেই।
যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটা পাইজাম, যা প্রতিকেজি ৫৬-৫৮ টাকা।
বাজারে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটা চালের মূল্যবৃদ্ধিতে নিম্নআয়ের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
চাল
বিক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, মৌসুম শেষ বলে কমদামের স্বর্ণা চাল বাজারে
পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্যে দেশি ও ভারত থেকে আমদানি করা পাইজাম এখন মোটা চাল
হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য পাইজামের দাম স্বর্ণা থেকে প্রতি কেজিতে ২-৪
টাকা বেশি।
এদিকে, এক মাসের ব্যবধানে দুই বার চিনির দাম নির্ধারণ করা
হয়েছে। তবু এই পণ্যটির লাগাম টানতে পারছে না সরকার। এক সপ্তাহ আগে খোলা ও
প্যাকেটজাত চিনির দাম সমান (প্রতি কেজি ৯৫ টাকা) হয়ে গিয়েছিল। এখন খোলা
চিনি আরও ৫ টাকা বেশি, অর্থাৎ বাজারে নতুন করে আরও বেড়েছে চিনির দাম। এক
কেজি খোলা চিনি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের ৯০ থেকে ৯৫
টাকার মধ্যে ছিল। আর প্যাকেটজাত চিনি কিনতে গুনতে হচ্ছে কোম্পানিভেদে ১০৫
থেকে ১১০ টাকা। শুধু তাই নয়, দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে অনেকে চিনি
বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি ১০০ টাকার নিচে এখন
খোলা চিনি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারিতে যারা এই চিনি বস্তা ধরে
কিনছেন, তারাও ৫০ কেজির বস্তা কিনছেন ৪ হাজার ৯০০ টাকার ওপরে। সামান্য লাভ
রেখে কেজি ১০০ টাকার ওপরে তা বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন
কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০
টাকায়। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি প্রতি ছিল ১৭০ টাকা। অন্যদিকে
বেড়েছে সোনালি ও লেয়ার মুরগির দাম। সোনালি ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা,
পাকিস্তানি কক ৩৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে লেয়ার ২৮০ টাকা,
সোনালি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হতো। এছাড়া দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০
থেকে ৬০০ টাকা।
দাম বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের। লাল ডিম ডজন বিক্রি
হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২১০ থেকে ২২০ টাকা।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি
হচ্ছে ৯০০ টাকায়।
সবজির বাজারে গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, টমেটো ১৪০
টাকা, সিম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা কেজি, বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে
৫০ টাকায়, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ থেকে
৬০ টাকা, লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৫০, চিচিঙ্গা
৬০, পটল ৬০, ঢেঁড়স ৭০, কচুর লতি ৮০, কাঁচা পেঁপে ৪০, বরবটি ৮০, ধুনধুল ৬০
টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাচা কলার হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১৫
থেকে ২০ টাকা। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। বাজারে কাচামরিচ
বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
বাজারে রসুনের কেজি ৪০ থেকে
৪৫ টাকা, চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আদার কেজি ৯০ থেকে
১১০ টাকা। দেশি মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান মসুর ডাল ১০০ টাকা।
লবণের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়।
মাছের বাজারে দেখা যায়,
সবচেয়ে কম দামে এখন বিক্রি হচ্ছে চাপিলা মাছ। এর কেজিও দেড়শ টাকার নিচে
নেই। এছাড়া ছোট সাইজের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩২০ টাকা। যা গত
মাসেও বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। পাবদা মাছ সর্বনিম্ন সাড়ে ৪০০ টাকা
থেকে শুরু করে আকার ভেদে ৬০০ টাকা কেজি। বেলে মাছ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭০০
টাকা কেজি। টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া চিংড়ি ৪০০
থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।