ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
রেকর্ডের মালা গেঁথে নিউ জিল্যান্ডের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান
Published : Sunday, 23 October, 2022 at 12:00 AM
অস্ট্রেলিয়ায় বিবর্ণ রেকর্ড উজ্জ্বল করার যে ডাক দিয়েছিলেন অধিনায়ক, তাতে দারুণভাবে দিয়ে এগিয়ে এলেন সতীর্থরা। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সুর বেঁধে দিলেন ফিন অ্যালেন। পরে সঙ্গত করে চমৎকার এক ইনিংস খেললেন ডেভন কনওয়ে। নিউ জিল্যান্ড গড়ল বিশ্বকাপে তাদের প্রথম দুইশ রানের পুঁজি। রান তাড়ায় কোনো ধরনের লড়াই-ই করতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। রেকর্ড গড়া জয়ে দীর্ঘ ১১ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাল কিউইরা।
সিডনিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভ পর্বের প্রথম ম্যাচে শনিবার নিউ জিল্যান্ডের জয় ৮৯ রানে। ঠিক ২০০ রানের পুঁজি গড়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ১১১ রানে গুঁড়িয়ে দিল কেন উইলিয়ামসনের দল।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ২০১১ সালের পর প্রথম জয়ের জয়ের দেখা পেল নিউ জিল্যান্ড। সেটিও এলো রেকর্ডের ডালি সাজিয়ে।
২০ ওভারের সংস্করণের বৈশ্বিক আসরে এটি কিউইদের সবচেয়ে বড় জয়। আগের সেরা ছিল ২০০৯ আসরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৩ রানে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও এই সংস্করণে এটি তাদের সেরা সাফল্য। গত বছর ৫৩ রানের জয় ছিল আগের সেরা।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে এত বড় ব্যবধানে জেতেনি আর কোনো দল। এর আগে পঞ্চাশ রানের জয়ও ছিল না দেশটিতে। পরিসংখ্যানের আরও অনেক পাতায় নাম লিখিয়েছে নিউ জিল্যান্ডের এই জয়।
রেকর্ডের মালা গাঁথা এই জয়ের নায়ক কনওয়ে। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম ১ হাজার টি-টোয়েন্টি রানের রেকর্ড গড়ার পথে তিনি করেন অপরাজিত ৯২ রান। তার ৫৮ বলের ইনিংসটি সাজান ২ ছক্কা ও ৭ চারে।
তবে শুরুতে ঝড় তুলে দলকে জয়ের ভিতটা গড়ে দেন অ্যালেন। ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ১৬ বলে ৪২ রানে করেন এই ওপেনার।
পরে দুর্দান্ত বোলিং উপহার দিয়ে দলের জয়ে অবদান রাখেন টিম সাউদি। স্রেফ ৬ রানে ধরেন ৩ শিকার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় জায়গায় করে নেন শীর্ষে। ১২৫ উইকেট নিয়ে এই পেসার ছাড়িয়ে যান সাকিব আল হাসানের ১২২ উইকেট। ৩ উইকেট নেন মিচেল স্যান্টনারও।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ডকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন অ্যালেন। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন কনওয়ে। দুজনের জুটিতে প্রথম ৪ ওভারেই ৫৬ রান তুলে ফেলে কিউইরা।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে মিচেল স্টার্ককে চার মেরে অ্যালেন ঝড়ের শুরু। পরের বলে লং অফ দিয়ে ওড়ান ছক্কায়। পঞ্চম বলে আবার চার। জশ হেইজেলউডকে কনওয়ে মারেন দুই চার, অ্যালেন একটি।
তৃতীয় ওভারে প্যাট কামিন্সের চার বলের মধ্যে দুটি চার ও এক ছক্কা হাঁকান অ্যালেন। পরে মার্কাস স্টয়নিসকে সোজা ব্যাটে উড়িয়ে ফেলেন বাউন্ডারির বাইরে।
অ্যালেনের তাণ্ডব থামান হেইজেলউড। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বোল্ড হন বিস্ফোরক ওপেনার। মুখোমুখি হওয়া চতুর্থ বলে চার মেরে রানের খাতা খোলেন উইলিয়ামসন। পাওয়ার প্লে শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৬৫।
এরপর দলের রানের চাকা সচল রাখেন কনওয়ে। অ্যাডাম জ্যাম্পাকে ছক্কায় উড়িয়ে ৩৬ বলে স্পর্শ করেন সপ্তম টি-টোয়েন্টি ফিফটি। ওই ওভারেই রিভার্স সুইপ করে এলবিডব্লিউ হয়ে বিদায় নেন উইলিয়ামসন (২৩ বলে ২৩)।
ঝড় তোলার উপযুক্ত মঞ্চ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি গ্লেন ফিলিপস। এক প্রান্তে নিজের মতো করে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন কনওয়ে। শেষ দিকে তাকে দারুণ সঙ্গে দেন জেমস নিশাম।
২ ছক্কায় ১৩ বলে ২৬ রানের ক্যামিও খেলেন নিশাম। কনওয়ের সঙ্গে তার ২৪ বল স্থায়ী ৪৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দুইশ স্পর্শ করে নিউ জিল্যান্ড।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আর কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০০ ছুঁতে পেরেছিল। ২০১২ সালের আসরে ৪ উইকেটে ২০৫ রান করেছিল ক্যারিবিয়ানরা।
বিশাল রান তাড়ায় স্রেফ মুখ থুবড়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপ। তাদের কেউ করতে পারেননি ৩০ রানও। একটি জুটির রানও স্পর্শ করেনি ৩০।
দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন ডেভিড ওয়ার্নার। সাউদিকে হাঁটু গেঁড়ে লেগ খেলার চেষ্টায় নিজেই বল টেনে আনেন স্টাম্পে। ট্রেন্ট বোল্টকে টানা ছক্কা-চারে পাল্টা আক্রমণের আভাস দেওয়া অ্যারন ফিঞ্চ বিদায় নেন স্যান্টনারের বলে।
পাওয়ার প্লেতে মিচেল মার্শকেও হারায় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে তারা তোলে মাত্র ৩৭ রান। ম্যাচ সেখানেই বেরিয়ে যায় তাদের হাত থেকে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিভাগে আছেন বিধ্বংসী গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, টিম ডেভিড, ম্যাথু ওয়েডরা। কিন্তু এদিন তারা কেউই কিছু করতে পারেননি।
দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন ম্যাক্সওয়েল। শেষ দিকে কামিন্সের ২১ রানে কোনোমতে একশ পার করে অস্ট্রেলিয়া।
গত আসরের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়ে শুরু হলো সুপার টুয়েলভ পর্ব। সেখানে স্বাগতিকদের উড়িয়ে দিয়ে গতবার হারে ক্ষতে একটু যেন প্রলেপ দিল নিউ জিল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ২০০/৩ (অ্যালেন ৪২, কনওয়ে ৯২*, উইলিয়ামসন ২৩, ফিলিপস ১২, নিশাম ২৬*; স্টার্ক ৪-০-৩৬-০, হেইজেলউড ৪-০-৪১-২, কামিন্স ৪-০-৪৬-০, স্টয়নিস ৪-০-৩৮-০, জ্যাম্পা ৪-০-৩৯-১)
অস্ট্রেলিয়া: ১৭.১ ওভারে ১১১ (ওয়ার্নার ৫, ফিঞ্চ ১৩, মার্শ ১৬, ম্যাক্সওয়েল ২৮, স্টয়নিস ৭, ডেভিড ১১, ওয়েড ২, কামিন্স ২১, স্টার্ক ৪, জ্যাম্পা ০, হেইজেলউড ১*; বোল্ট ৪-০-২৪-২, সাউদি ২.১-০-৬-৩, স্যান্টনার ৪-০-৩১-৩, ফার্গুসন ৩-০-২০-১, সোধি ৪-০-২৯-১)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৮৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভন কনওয়ে