ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় আমাদের কৃষি
Published : Monday, 24 October, 2022 at 12:00 AM
মোহাম্মদ নজাবত আলী ||
 
প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ বড় অসহায়। প্রকৃতিকে পেছনে ফেলে মানুষ সামনে এগোতে পারে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঘন বর্ষা, আবাদি ফসল নষ্ট হওয়া, মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থানের পৃথিবী বদলে গেছে। বিশেষ করে মহামারী করোনা, বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন এবং বিশ্ব জ্বালানি ও খাদ্য মন্দায় প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ খাদ্য নিরাপত্তা যে কোনো রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৈশ্বিক খাদ্য মন্দায় এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশের অবস্থান ভৌগোলিক দিক থেকে কখনো নদীভাঙনের দিকে, কখনো প্রচণ্ড বন্যা, কখনো অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টিÑ এক কথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে। ফলে প্রকৃতির এই বৈরীরূপ, হিংস্রতা, ফসলহানি, ক্রমাগতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, উৎপাদন হ্রাস, দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। আর বাংলাদেশের জন্য এ পরিস্থিতি মোটেই শুভকর নয়। কারণ আমাদের দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে প্রতিবছর ফসলসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে পর্যাপ্ত কৃষি উপকরণ সরবরাহে কৃষি ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত বছরগুলোয় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জনগণের কর্ম ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়লেও বর্তমান বিশ্ব খাদ্যমন্দার কারণে তা স্থবির হয়ে পড়ে। সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে পড়েছে। তাই ভৌগোলিক দিক মাথায় রেখে সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত সচেতন ও সতর্ক। তবে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন বৃদ্ধি করা, কৃষিপণ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্য মজুদের কোনো বিকল্প নেই।
 
আমাদের কৃষি আমাদের আশা। কেননা কৃষি যেহেতু আমদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, সেহেতু আমাদের কৃষির ওপর জোর দিতে হবে ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কেননা বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন কমতির দিকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সম্প্রতি জানিয়েছে, এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে ব্যাপক খাদ্য ঘটতির আশঙ্কা রয়েছে। এফএও জানিয়েছে, বাইরে থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর দেশগুলোর খাদ্য ঘাটতি বড় সংকটের আকার ধারণ করবে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নামও রয়েছে। দেশের কৃষিবিদরা মনে করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ফসলহানিÑ কৃষি খাতে ক্ষতি পূরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। উপরন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে এরই মধ্যে কৃষি উৎপাদন খাত খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। তা ছাড়া একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে মাঝে মধ্যেই দেশে সার সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তা কৃষি খাতের জন্য অশুভ বার্তা। এমতাবস্থায় কৃষি উৎপাদনেও আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে। এ কারণে কৃষিতে লাভ কম হওয়ায় কৃষকের মধ্যে এক ধরনের অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ১৭ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় খাদ্য অপচয় বন্ধ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করার তাগিদ দিয়েছেন। যার যেটুকু জমি আছেÑ তাতে ধান, গম, সরিষা, ভুট্টা ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে পারলে আগামীতে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে না। তিনি বলেছেনÑ সারাবিশ্বে দুর্যোগের যে আভাস আমরা পাচ্ছি, তাতে এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখা যাবে না। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার যে তাগিদ দিয়েছেন, তা অবশ্যই আমাদের জন্য ও দেশের জন্য মঙ্গলজনক। এর পাশাপাশি এটাও সরকারকে ভাবতে হবেÑ কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পেলে যতই কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হোক না কেন, কৃষক খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাই এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে, সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
 
যে কোনো রাষ্ট্রে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। অধিক খাদ্য উৎপাদনে প্রয়োজনে গরিব ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে কৃষিঋণ বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিতÑ যাতে কৃষকসমাজ আগ্রহসহকারে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কেননা কোনো খাদ্যশস্য উৎপাদনে যেন কৃষকসমাজকে লোকসান গুনতে না হয়। কিন্তু জনসংখ্যা আমাদের বড় বাধা। কারণ বাংলাদেশে যে পরিমাণ আবাদি জমি রয়েছে, তার চেয়ে দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে জনসংখ্যা।
বর্তমান সরকারের সময়োচিত নানা ধরনের পদক্ষেপ- কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া, কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা ও পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা অধিক খাদ্য উৎপাদনে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্য মন্দায় আমাদের সব ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন করা জরুরি। শুধু ধান-আলু নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। এর পাশাপাশি অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনেও অধিক মনোযোগী হওয়া দরকার। এবার মহামারী করোনার কারণে দুই মাস ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বৈদেশিক লেনদেন বন্ধ থাকায় আমাদের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। বৈশ্বিক মহামন্দা বা খাদ্য সংকটে সরকারের জনগণের জীবন-জীবিকা রক্ষার চিন্তা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনায় বাংলাদেশ খাদ্য সংকটে পতিত হবে না বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করে।
মোহাম্মদ নজাবত আলী : শিক্ষক ও কলাম লেখক