Published : Monday, 24 October, 2022 at 12:00 AM, Update: 24.10.2022 1:58:08 AM

শুক্রবার
দেশে ফিরে গত শনিবার রাত সাড়ে ৮ টায় ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রামের বাড়ি
ফেণী সদরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন সুইডেনের একটি আইটি ফার্মে চাকরিরত (নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক যুবক। উবার এ্যাপ্সের মাধ্যমে প্রাইভেট কার ডাকলেও
পরে ব্যক্তিগত চুক্তির মাধ্যমে ওই প্রবাসীকে নিয়ে ফেণীর দিকে যাচ্ছিলেন
তারা। যাত্রা বিরতি নেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি রেষ্টুরেন্টে। সে সময়
প্রাইভেট কার চালককে কয়েকবার ফোনে কথা বলতে দেখেন ওই প্রবাসী। তবে কার
সাথে কথা বলছেন সে বিষয়টি বুঝতে পারেন নি। বিশ্রাম শেষে আবার ফেণীর
উদ্দেশ্যে রওনা হলে রাত ১২ টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার সদর
দক্ষিণের মাটিয়ারা এলাকায় এলে গাড়ীর নিচে ভারী কিছুর আঘাতের শব্দ পেয়ে থেমে
যান চালক। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। গাড়ী থামাতেই মহাসড়কের পাশের অন্ধকার থেকে
বেরিয়ে আসে অন্তত ১০ জনের একদল সশস্ত্র ডাকাত। ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়ী
থেকে ওই প্রবাসীর লাগেজ ও ব্যাকপ্যাক ছিনিয়ে নেয় তারা। বাঁধা দিলে প্রবাসীর
হাতে ও পিঠে কোপ দেয় ডাকাতরা। তবে সাহসী প্রবাসী ওই যুবকের সাথে ডাকাতদের
ধস্তাধস্তির সময়ই ওই এলাকায় এসে পড়ে পুলিশের নিয়মিত টহল টীম। দূর থেকে
ডাকাতির দৃশ্য চোঁখে পড়লেই মাত্র তিন জন পুলিশের টীমটি ডাকাত দলকে
চ্যালেঞ্জ করে ধাওয়া করে তারা। একই সময়ে পুলিশ টীমের প্রধান এসআই ইয়াছিন
সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরীকে ফোনে ঘটনাটি
জানান। এসআই ইয়াছিন ডাকাতদের ধরার চেষ্টা করলে তার হাতেও কোপ দেয় ডাকাতরা।
ফোন পেয়ে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌছান ওসি দেবাশীষসহ অতিরিক্ত
পুলিশ, তারা ডাকাতদলকে ধাওয়া করে। এসময় প্রবাসীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া
লাগেজ ও ব্যকপ্যাক ধানক্ষেতে ফেলে পুলিশের দিকে গুলি ছুড়ে ডাকাতরা পালাতে
থাকে। পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয় দুই ডাকাত।
বাকিরা পালিয়ে যায়। পরে ধানক্ষেত থেকে গুলিবিদ্ধ দুই ডাকাতকে উদ্ধার করে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। আহত ভিকটিম এবং দুই পুলিশ
সদস্যকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।
খবর পেয়ে রাতেই দ্রুত ঘটনাস্থলে যান জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আবদুল মান্নান।
শনিবার মধ্যরাতে এই ঘটনার পর সদর দক্ষিণ থানায় সাংবাদিকদের ঘটনার বর্ননা
দেন পুলিশ সুপার ও ভিকটিম সুইডেন প্রবাসী যুবক।
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ
আবদুল মান্নান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলন্ত গাড়ীতে রড ছুড়ে মেরে
ডাকাতির ঘটনার অনেক উদাহরন আছে। তাই আমরা বেশ সতর্কতার সাথে মহাসড়কে টহল
পরিচালনা করি। সুইডেন প্রাবাসীর কোন কিছু আমরা লুট হতে দেই নি, বরং পুলিশ
সাহসিকতার সাথে দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে। ডাকাতদের ব্যবহৃত পিস্তল ও
ধারালো অস্ত্র এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া ডাকাত
সদস্যদের ধরতেও অভিযান চলছে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, গাড়ীর চালককেও
জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন হওয়ায় তাকে আমরা হেফাজতে রেখেছি।
গাড়ীটির তেমন কোন ক্ষতি হয় নি।
সুইডেন প্রবাসী ওই যুবক জানান, পুলিশ
যে কাজ করেছে, তা ওয়ার্ল্ড ক্লাস। এত দ্রুত এবং সাহসিকতার সাথে তারা
ডাকাতদের মুখোমুখি হয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। আমার আইফোনটি শুধু তারা নিতে
পেরেছে, আর কিছুই নিতে পারে নি। আমার ব্যাগে বহু মূল্যবান জিনিপত্র আজ
বেঁচে গেলো পুলিশের কারণে। আমার হাতে কোপ দিয়েছে, আমাকে টেনে হিঁচড়ে
নামানোর সময় প্যান্ট- শার্ট ছিড়ে ফেলে। পিঠে ব্যাকপ্যাক থাকার কারনে পেছনের
কোপটি লাগে নি।
আহত পুলিশ সদস্য এসআই ইয়াছিন জানান, ডাকাতরা সাবাই
হাফপ্যান্ট আর সেন্ডুগেঞ্জি পরা ছিলো। পরে উদ্ধার করা কয়েকটি পুটলি থেকে
তিন জনের জামা কাপড় ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
রবিবার দুপুরে কুমিল্লা
সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী জানান, রহিম ও
সাব্বির নামে দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা গুলিবিদ্ধ হওয়ায়
অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রহিমের কাছে থাকা
পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের এসআই ইয়াছিন এবং কনস্টেবল আহত হয়েছে এই
অভিযানে। এই ঘটনায় ভিকটিম প্রবাসী বাদী হয়ে একটি ডাকাতি মামলা দায়ের
করেছেন এবং পুলিশের এসআই সুজন বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে অপর একটি মামলা দায়ের
করেছেন। উদ্ধারকৃত সব মালামাল ওই প্রবাসীকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের দ্রুত আদালতে উপস্থাপন করা হবে। আর গাড়ী চালকের ব্যপারেও
সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।