
রণবীর
ঘোষ কিংকর: কুমিল্লায় ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ভয়াবহ ছোবলে বিপর্যস্থ হয়ে
পড়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ১২ ঘন্টারও বেশি সময় যাবৎ বিদ্যুৎবিহীন পুরো জেলা।
ঘুর্ণিঝড়ের
প্রভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভাঙ্গা, তাঁর ছিঁড়া, ট্রান্সফরমার বিকলসহ নানা
করণে বিপর্যস্থ বৈদ্যুতিক লাইন ১২ ঘন্টা পর এক এক করে বিভিন্ন স্থানে চালু
হতে শুরু করলেও ২৪ ঘন্টায়ও শতভাগ গ্রাহককে সংযোগ দিতে পারেনি বিদ্যুৎ
বিভাগ।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে বিপর্যস্থ বৈদ্যুৎ সংযোগ কুমিল্লা
শহরের কিছু কিছু স্থানে রাতেই চালু হয়। কিন্তু শহরের বাহিরের
গ্রামাঞ্চলগুলোতে পরদিন (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের আঁধারেও আলোর মুখ
দেখেনি মানুষ।
বৈদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিদ্যুৎ
না থাকায় নিভে গেছে মানুষের ঘরের আলো, মোবাইল ফোন সময় মত চার্জ দিতে না
পারায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ। মোবাইল ফোনের টাওয়ার গুলোতে বিদ্যুৎ
সংযোগ না থাকায় নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে মানুষের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে
পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রায় সহস্রাধিক কর্মীর নিরলস প্রচেষ্টায় মঙ্গলবার
দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে শুরু করে। মোবাইল ফোনের চার্জ দিতে
মরিয়া হয়ে গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ মঙ্গলবার দুপুর থেকে উপজেলা সদরের
শহরমুখী ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা মহানগরীসহ জেলা জুড়ে ওয়াপদা
এবং কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করেছে। এর
মধ্যে কুমিল্লা আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলার বেশির ভাগ অংশে ওয়াপদা আর
বাকি কুমিল্লার ১৫ উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী ২টি জেলার আরও ২টি উপজেলায়
বিস্তৃত হয়েছে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১, ২ ও ৩।
সোমবার রাতে
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে আঘাতে জেলা জুড়ে প্রায় ১২০টি বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে ও
পড়ে গেছে। এর মধ্যে ভেঙ্গে গেছে ভেঙ্গে গেছে ৯২টি খুঁটি। সহস্রাধিক স্থানে
ছিঁড়ে গেছে বৈদ্যুতিক তাঁর, বিকল হয়ে গেছে শতাধিক ট্রান্সফরমার।
কুমিল্লা
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে চান্দিনা, বরুড়া, দেবীদ্বার ও মুরাদনগর
উপজেলায় ভেঙ্গে গেছে ২৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি, ২শতাধিক স্থানে ছিঁড়ে গেছে
বৈদ্যুতিক তাঁর, ২০টির বেশি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেছে।
কুমিল্লা পল্লী
বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে বি-পাড়া, বুড়িচং (আংশিক), সদর দক্ষিণ (আংশিক),
চৌদ্দগ্রাম, লাইমাই উপজেলায় ভেঙ্গে গেছে ৩০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি, পড়ে গেছে
১০টি। ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেছে অন্তত ৩৫টি, প্রায় সাড়ে ৪শ স্থানে ছিঁড়ে
গেছে বৈদ্যুতিক তাঁর।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর অধীনে
দাউদকান্দি, মেঘনা, তিতাস, হোমনা সহ মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া ও
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা। পিবিএস-৩ এর অধীনে ভেঙ্গে গেছে
৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি, পড়ে গেছে ১০টি খুঁটি। ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেছে
অন্তত ১৫টি ও অর্ধশতাধিক স্থানে ছিঁড়ে গেছে বৈদ্যুতিক তাঁর।
চান্দিনার
মাইজখার ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল বাতেন জানান, সোমবার বিকাল থেকে বিদ্যুৎ
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায়ও আমার এলাকায় বিদ্যুৎ
সংযোগ দিতে পারেনি কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। প্রায় ৩০ ঘন্টা বিদ্যুৎ
না থাকায় শেষ হয়ে গেছে আইপিএস ও মোবাইল ফোনের চার্জ। নষ্ট হয়ে গেছে
ফ্রিজের সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য। মোমবাতি জ্বালিয়ে রাত কাটাচ্ছি
আমরা।
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎতের তিনটি
সমিতির জেনারেল ম্যানেজারদের সাথে কথা বলার পর তারা সবগুলো লাইন চালু করার
নিশ্চয়তা দিলেও রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে
অর্ধেক এলাকায়ও বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
রাত ৮টায়
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মকবুল হোসেন জানান,
আমার ৮১টি ফিডারের মধ্যে ৭৮টি ফিডারই চালু করেছি। ২/১ ঘন্টার মধ্যে বাকি
৩টি চালু হবে। এ পর্যন্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সক্ষম
হয়েছি আমরা।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়- পৌর এলাকার ছায়কোট, তুলাতলী,
হারং, কচুয়ারপাড়, মাইজখার ইউনিয়নের মাইজখার, করতলাসহ বিভিন্ন স্থানে
বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।
ওই সমিতির সহকারি জেনারেল ম্যানেজার ফয়সাল আলম
চৌধুরী জানান, এ পর্যন্ত আমরা ২৫ শতাংশ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে
সক্ষম হয়েছি। সবগুলো ফিডার চালু করা হলেও সকল এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।
সংযোগ প্রদানে আমাদের লোকজন কাজ করছে। বুধবার দুপুরের মধ্যে সম্পূর্ণ লাইন
চালু করা সম্ভব হবে।