
নিজস্ব
প্রতিবেদক: কুমিল্লার উপর দিয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে
কুমিল্লায় ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে কুমিল্লা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন
উপজেলায় অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়ে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। এর
মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। ঝড়ে গাছ পড়ে
উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল খামারপাড়া এলাকায় ঘুমন্ত অবস্থায় একই
পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হচ্ছে- হেসাখাল খামার
পাড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিন (২৮), তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী (২৪) এবং
তাদের চার বছর বয়সি শিশু কন্যা নুসরাত আক্তার লিজা।
ঘূর্ণিঝড়
সিত্রাংয়ের প্রভাবে কুমিল্লায় ঘন্টায় ৬৩ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের তাণ্ডব বয়ে
গেছে। রাত ১০ টায় এই গতিবেগ রেকর্ড করা হয়। রাত সাড়ে ৯ টায় যখন ঝড়ো বাতাসের
তাণ্ডব শুরু হয় তখনই নাঙ্গলকোটের হেসাখালে ঘরের উপর গাছ চাপা পড়ে বাবা
মা ও চার বছরের কণ্যা শিশুর মৃত্যু হয়। সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে
নাঙ্গলকোটে তিনজনের মৃত্যু ছাড়াও বরুড়া উপজেলায় ৮ জন, সদর দক্ষিণ উপজেলার ৪
জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো
বাতাসে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এর
মধ্যে দাউদকান্দিতে গাছ ভেঙে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে
যায়। মহাসড়কের ধীতপুর, হাসানপুর ও ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে
পড়ে। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচল। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে
এসে উদ্ধার কাজ চালায়। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মাহিনী এলাকায় গাছ পড়ে ভেঙ্গে
যায় রাইসমিলের চাল, কবরস্থানের দেওয়াল।
এছাড়াও লাকসাম উপজেলায় বেশ কিছু
স্থানে গাছ ভেঙে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে
উদ্ধার কাজ চালায়। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে পুরো কুমিল্লা বিদ্যুৎহীন
হয়ে পড়ে। জেলার দেবিদ্বার ও সদর উপজেলার জামবাড়িসহ অন্যান্য উপজেলায়
বেশকিছু কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লার নগরীর
বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘরের চাল উড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাত ৮টার পর পুরো
জেলা ডুবে যায় অন্ধকারে। রাত দুইটার পর থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন স্থানে
বিদ্যুৎ আসতে শুরু করে।
আমাদের দাউদকান্দি প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন
জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে গাছ ভেঙে পড়ায়
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কয়েক ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। সোমবার রাতে
মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর,আমিরাবাদ, ধীতপুর, জিংলাতলী,
ইলিয়টগঞ্জ, বারপাড়া, শহীদনগর ও হাসানপুর এলাকায় ১৪ টি গাছ ভেঙে পড়ে।
ভেঙে
পড়া গাছগুলো দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস এবং দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশ
যৌথ ভাবে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে ভিজে অপসারণ করেন। পরে ধীরে ধীরে যান
চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, মহাসড়কের দাউদকান্দি অংশে ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী
১৪টি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। এছাড়াও ছোট ছোট বিপুল সংখ্যক গাছ ও ডালাপালা ভেঙে
পড়ে রাস্তায়। হাইওয়ে পুলিশ তা সড়িয়ে যান চলাচলের উপযোগী করে।
দাউদকান্দি
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার (এসও) মোহাম্মদ রাসেল জানান, সোমবার
সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক এবং সরকারি ও
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভেঙে পড়া বিপুল সংখ্যক গাছ অপসারণ করেন ফায়ার
সার্ভিস।
কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল)
মোঃ ফয়েজ ইকবাল জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক এবং বিভিন্ন এলাকায় বহু গাছপালা ভেঙে
পড়ে। ভেঙে পড়া গাছগুলো ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের উদ্যোগে
অপসারণ করা হয়। তবে বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া
যায়নি। ইউনিয়ন বিট অফিসাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ অব্যবহ
রেখেছেন।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
ডাঃ মোঃ তৌহিদ আল হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় দাউদকান্দিতে
ইমার্জেন্সি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী
অফিসার মোঃ মহিনুল হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বড় ধরনের কোন
ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাপক সংখ্যক গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ভেঙে
পড়েছে অসংখ্য বিদ্যুৎতের খুটি। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো মেরামতের লক্ষ্যে কাজ
অব্যবহ রেখেছেন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
কুমিল্লার
বরুড়া উপজেলা ঘুর্ণিঝড় চিত্রাং এর আঘাতে ও প্রচণ্ড ঝড়ে ৮ জন আহত ও প্রচুর
গাছ গাছালী ও বেওলাইন মহিলা দাখিল মাদরাসা সহ অনেক ঘর বাড়ি ভেঙ্গে গেছে বলে
খবর পাওয়া গেছে। শতাধিক জায়গার বেশী বিদ্যুৎ এর তাঁর ছিড়ে গেছে ও একাধিক
জায়গা খুঁটি ভেঙ্গে গেছে বলে জানা যায়।
আমাদের বরুড়া প্রতিনিধি ইলিয়াছ
আহমেদ জানান, সোমবার রাতে ঘুর্ণিঝড়ের ফলে বরুড়া উপজেলা বিভিন্ন গ্রামের ৮
জন আহত হয়েছে এবং ঝলম ইউনিয়ন বেওলাইন মহিলা দাখিল মাদরাসা গাছ পড়ে পাঠদানের
সকল ক্লাস রুম ভেঙ্গে যায় এবং প্রচন্ড ঝড়ের কারণে টিন সেট ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে
যায় বলে জানা যায়।খোশবাস ইউনিয়নে অনেকের টিন সেট ঘর গাছ পড়ে ভেঙ্গে যায় ও
একই ইউনিয়ন নবীপুর গ্রামের সুফিয়া (৩২) নামে এক মহিলা ঘরের ছাপা পড়ে গুরুতর
আহত হন। বরুড়া সরকারী স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। রাতে পৌর
এলাকার তলাগ্রাম গ্রামের সাজেদুল (২১) নামে এক যুবকের গাছ পড়ে মাথা ফেটে
যায়। পৌর এলাকার শুশুন্ডা ও পুরানকাদবা গ্রামের গাছ সরাতে গিয়ে (খোকন ৪০)
এয়াছিন (২২) বরুড়া গ্রামের সালাহ উদ্দিন (৩৫) তলাগ্রাম গ্রামের মীর কাশেম
(৪০) নামে ৪ জন আহত হয়েছে। শাকপুর গ্রামের জাভেদ( ৩২) নামে একজন আহত হন।
সকল কে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
এছাড়া ডকটরস
কমিউনিটি হসপিটালে আহত একজন চিকিৎসা নিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার
পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কামরুল হাসান সোহেল জানান ঘূর্ণিঝড়ের কারণে একটি
মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৮ জন কে তাঁরা চিকিৎসা দিয়েছেন। গুরুতর ১ জন কে
উন্নয়ন চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
উপজেলা
নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত মোঃ মেহেদী হাসান জানান দূর্যোগ মোকাবিলায়
একটি টিম গঠন করা হয়েছে। সকল ধরনের খোঁজ খবর দেয়ার জন্য তিনি ক্ষতিগ্রস্ত
সকল কে অনুরোধ জানান।