ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লার কাউন্সিলর সোহেলসহ জোড়া খুন:
তদন্তে নতুন ৬ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ
Published : Wednesday, 26 October, 2022 at 12:00 AM, Update: 26.10.2022 12:42:09 AM
তদন্তে নতুন ৬ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণআবুল কাশেম হৃদয়:
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলসহ জোড়া খুনের ঘটনার মামলায় এক বছরেও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ বলছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্যই আটকে আছে অভিযোগপত্র। তবে চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এজাহারের বাইরে আরো ৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। এই ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তাও পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা শরীফ ইবনে আলম মামলাটির তদন্ত করছেন। এর আগে মামলাটি কোতয়ালী মডেল থানা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তদন্তভার ন্যাস্ত করা হলে তখন তদন্ত করেন গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুরুল কাদের ভূইয়া।
বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা শরীফ ইবনে আলম জানান, ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্যই আটকে আছে অভিযোগপত্র। সিসি ফুটেজটি আসল না সম্পাদিত সে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, এই খুনের ঘটনায় ১১জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলা দায়ের করা হলেও তদন্তে আরো ৬ জন জড়িত হিসেবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ জন প্রেপ্তার রয়েছে, একজন পলাতক। তদন্তেপ্রাপ্ত গ্রেপ্তার আসামিদেরও আদালতের মাধ্যমে জবানন্দি রেকর্ড করা হয়েছে জানালেও ‘তদন্ত স্বার্থে’ তদন্ত কর্মকর্তা তাদের নাম প্রকাশ করেন নি।   
তদন্ত কর্মকর্তা শরীফ ইবনে আলম বলেন, কয়েকদিন আগেই এই মামলার তদন্তভার আমাকে দেয়া হয়। আমি মামলার সকল তথ্য খতিয়ে দেখছি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলসহ জোড়া খুনের ঘটনার মামলায় এজাহারনামীয়দের বাইরে তদন্তে যে ছয় জনের নাম এসেছে তারা হলেন- রাব্বী ইসলাম, এমরান খন্দকার, মো: নাজিম, ইমরান হোসেন রিশাত, জাহিদুল ইসলাম প্রকাশ ইমরান ও ফখরুল ইসলাম। এর মধ্যে ৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফখরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। তদন্তেপ্রাপ্তদের মধ্যে ইমরান হোসেন রিশাতের বাড়ি ফেনিতে। কারাগারে থাকা অবস্থায় এ মামলার প্রধান আসামী ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত শাহআলমের সাথে তাদের পরিচয় হয়। জোড়া হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র তার মাধ্যমে সংগ্রহিত হয়। তদন্তেপ্রাপ্ত জাহিদুল হাসান ইমরান ওরফে কাউয়া ইমরান নিহত কাউন্সিলর তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আছেন কিনা সে তথ্য মোবাইলে ঘাতকদের জানান এবং ঘটনার পর তার মোবাইলটি জ্বালিয়ে দেন। তদন্তেপ্রাপ্ত চাঁন্দপুরের মো: নাজিম আগে থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তদন্তেপ্রাপ্ত এমরান খন্দকারের বাড়ি শহরের নবগ্রামে।
সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জেল সোহেল, সায়মন মুহুরি, রাব্বি ইসলাম, এমরান খন্দকার, মো: নাজিম, ইমরান হোসেন রিশাত, জাহিদুল ইসলাম প্রকাশ ইমরানসহ ৭জনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ মামলায় বর্তমানে ১২ জন জেলে আছেন। এরা হলেন- জেল সোহেল, সুমন, আশিকুর রহমান রকি, মো: আলম, জিসান মিয়া, সাময়মন মুহুরি, মাসুম, রাব্বী ইসলাম, এমরান খন্দকার, মো: নাজিম, ইমরান হোসেন রিশাত, জাহিদুল ইসলাম প্রকাশ ইমরান। এর মধ্যে রকি গত ২৮ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান। মামলায় অন্তত ২৩ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ নভেম্বর বিকেল ৪টায় কুমিল্লা শহরের পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজ নামের সিমেন্ট দোকানে সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য গুলিতে নিহত হন কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামীলীগের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নেতা  সৈয়দ মো: সোহেল ও তার সহযোগী ও আওয়ামী লীগের সদস্য হরিপদ সাহা (৫৫)। হামলার সময় সন্ত্রাসীদের এমন প্রকাশ্য অস্ত্রবাজী কুমিল্লার ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায় নি। এ ঘটনা তার কয়েকদিন পর ঘটে যখন কুমিল্লায় দুর্গাপূজার মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় সারাদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং এ ঘটনায় কাউন্সিলর সোহেলের সাহায্যপুষ্ট ইকবাল নামে একজনকে কোরআন রাখার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন রাতে কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও আট থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এজহারনামীয় আসামীদের মধ্যে ২৯ নভেম্বর তিন নম্বর আসামি নগরীর সুজানগর এলাকার বাসিন্দা রফিক মিয়ার ছেলে মো.সাব্বির হোসেন (২৮) ও পাঁচ নম্বর আসামি সংরাইশ এলাকার কাকন মিয়ার ছেলে সাজন (৩২) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এর দুই দিন পর ১ ডিসেম্বর মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। কাউন্সিলর সোহেলের হত্যা এবং আসামীদের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
মামলায় যে ১১ জনের নাম এসেছে, তাদের প্রধান কুমিল্লা শহরের সুজানগর এলাকার জানু মিয়ার ছেলে শাহ আলম (২৮), যার বিরুদ্ধে মাদকের কারবারসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা ছিল থানায়। নাম উল্লেখ করা বাকি আসামিরা হলেন: স্থানীয় রফিক মিয়ার ছেলে মো. সাব্বির হোসেন (২৮), কানু মিয়ার ছেলে সুমন (৩২), নূর আলীর ছেলে জিসান মিয়া, কানাই মিয়ার ছেলে রনি (৩২), নবগ্রাম এলাকার সোহেল ওরফে জেল সোহেল (২৮), সায়মন (৩০), সংরাইস এলাকার সাজন (৩২), মাসুম (৩৫) তেলিকোনা এলাকার আশিকুর রহমান রকি (৩২) ও সুজানগর বৌবাজার এলাকার আলম (৩৫)।
বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত হওয়ার পর এজাহারনামীয় অন্য ৭ আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার বাদী কাউন্সিলর সোহেলের ভাই সৈয়দ মোঃ রুমন জানান, আমি যতটুকু জানি এই মামলায় মোট ১০ জন আসামি কারাগারে আছে। আমরা পুলিশ সুপারের কাছে দ্রুত চার্জশিটের জন্য অনুরোধ করেছি, তিনি জানিয়েছেন- যত দ্রুত সম্ভব চার্জশিট দাখিল করা হবে।