চীনের উহানে ঠিক এক বছর আগে ১১ জানুয়ারি করোনা সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু
হয়েছিল। সেদিন চীনের সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, নতুন এক রহস্যময় ভাইরাসে সে
দেশে এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। পরে ভাইরাসটিকে নভেল করোনাভাইরাস হিসেবে
চিহ্নিত করা হয়। মৃত ৬১ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ উহানের বহুল আলোচিত ‘ওয়েট
মার্কেটে’ নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এই বাজারই ভাইরাসের উৎস বলে শোনা গিয়েছিল।
বিভিন্ন বন্যপ্রাণির মাংস বিক্রি হয় ওই বাজারে। বিশ্বে করোনা সংক্রমণের
সংখ্যা ৯ কোটি ছাড়িয়েছে। আর আজকের দিন পর্যন্ত এ ভাইরাসে ঝরে গেছে ১৯
লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ।
চীন অবশ্য ক্রমাগত দাবি করে আসছে, সেখানে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়লেও
দেশটি নভেল করোনাভাইরাসের উৎস নয়। পৃথিবী ওলট-পালট করে দেয়া এ ভাইরাসের উৎস
তাহলে কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। আদৌ কোনো দিন জানা যাবে কি না
সে ব্যাপারেও সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
উহানে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর জন্য বারবার চীনের কাছে আবেদন জানিয়েছে বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু তাদের তদন্তকারী দলকে দেশে ঢুকতে
অনুমতি দেয়নি চীন। সম্প্রতি দলটির চীনে যাওয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে চীন জানায়, তারা তৈরি নয়। এতে ডব্লিউএইচও’র প্রধান
তেদ্রস আধানম গেব্রেয়েসুস সাংবাদিক সম্মেলনে হতাশা প্রকাশ করেন। এরপর চীন
জানায়— ‘কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’ সমালোচনার মুখে শনিবার দেশটির তরফ থেকে
বলা হয়, ডব্লিউএইচও’র বিশেষজ্ঞদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত তারা।
শুধু ভাইরাসের উৎস নয়, ভাইরাসের চরিত্র নিয়েও সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
এক্ষেত্রে মূল প্রশ্নটি হল, ভাইরাসটি কীভাবে প্রাণির শরীর থেকে মানুষের
দেহে ছড়াল? প্রথমে দাবি ওঠে, ২০১৯ সালের শেষে উহানের ‘ওয়েট মার্কেট’ থেকে
ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। খাবার থেকেই ভাইরাসের সংক্রমণ মানবদেহে ঘটেছে বলে ধারণা
করা হয়। বাদুড়ের মাংস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। পরে বিভিন্ন
ষড়যন্ত্র তত্ত্বও উঠে আসে। আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
দাবি করেন, উহানের গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। চীনের এক গবেষকও
উহানের গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কথা দাবি করেন।
করোনা মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকা। দেশটিতে সংক্রমণ হয়েছে
দুই কোটির ওপরে আর মারা গেছেন তিন লাখ ৮৩ হাজারেরও বেশি। কেন্টাকির গভর্নর
অ্যান্ডি বেশেয়ার বলেছেন, ‘আগের বারের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে বাড়ছে
সংক্রমণ।’ কলোরাডোর মহামারি বিশেষজ্ঞ র্যাচেল হার্লিহাই বলেন, ‘ছুটি ও
উৎসবের মৌসুমের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর প্রভাবেই সংক্রমণ,
মৃত্যু বেড়েছে।’
এর মধ্যে ক্যাপিটল ভবনের ঘটনাকে ‘সুপার স্প্রেডার’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেশির ভাগ
বিক্ষোভকারীর মুখে মাস্ক ছিল না। দূরত্ব তো ছিলই না।’ রোববার যুক্তরাষ্ট্রে
করোনায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৩৫ জন ও মৃত্যু হয়েছে ১
হাজার ৭৯২ জনের।
ইউরোপের পরিস্থিতিও ভালো নয়। সংক্রমণ ঘটেছে আড়াই কোটির বেশি। মৃত্যু ৫
লাখ ৮৭ হাজারের বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ব্রিটেনে- ৮০ হাজারের বেশি,
দ্বিতীয় স্থানে ইতালি- ৭৮ হাজার, তৃতীয় ফ্রান্স- ৬৭ হাজার। করোনা প্রতিরোধে
ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে অনেকগুলো উন্নত দেশেই। ভ্যাকসিন প্রদানে সবচেয়ে
এগিয়ে আছে ইসরায়েল। এদিকে সোমবার করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিতে
যাচ্ছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।