গত বছর অতিমারির মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন
সরবরাহ করে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন পালক লাগিয়েছিল মোদী সরকার।
এ বার দেশজ প্রতিষেধক প্রতিবেশী দেশগুলিতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সক্রিয় সাউথ
ব্লক। অন্য দিকে চিন তাদের সাইনোভ্যাক বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য
পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযাগ করেছে বলে খবর।
বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের খবর, ভারত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।
প্রতিষেধক সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনও বাড়তি তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে না। বরং
মিত্র রাষ্ট্রগুলিতে মাপা পদক্ষেপে এগোনোর কথাই ভাবা হয়েছে। প্রতিবেশী
রাষ্ট্রগুলির পাশাপাশি অন্যান্য কিছু রাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত
এবং হাইকমিশনারদের ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের
সঙ্গে কথা বলে কোভিড প্রতিষেধকের চাহিদা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে রিপোর্ট
তৈরি করতে। মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, “হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতোই আমরা
মিত্র দেশগুলিকে কথা দিয়েছি কোভিড প্রতিষেধক পাঠানোর। তবে কাকে কবে কত
দেওয়া সম্ভব হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ঘরোয়া চাহিদা স্বাভাবিক ভাবেই
অগ্রাধিকার পাবে।” এই কর্তার বক্তব্য, “শেষ পর্যন্ত কোন দেশ কোন
প্রতিষেধকটি নেবে, তা তার উপরেই নির্ভর করছে। কিন্তু ভারত গোটা দক্ষিণ
এশিয়াকে একটি ইউনিট হিসেবেই দেখছে।”
গত ৯ ডিসেম্বর ৬০টিরও বেশি দেশের দূতদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হায়দরাবাদে
প্রতিষেধক উৎপাদক সংস্থাগুলি পরিদর্শনে। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, এর মধ্যেই
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে ভারতীয় প্রতিষেধক উৎপাদন, গবেষণা ও
বণ্টন নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয়েছে।
বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ, মায়ানমার ও নেপাল
সফর করেছেন। প্রত্যেকটি দেশে গিয়েই কোভিড-দৌত্য করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
সম্প্রতি নেপালে গিয়ে তিনি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ কথা
স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে প্রতিষেধক শুধু ভারতের জন্য নয়, গোটা মানবতার জন্য।
আমাদের অগ্রাধিকার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি, যার অন্যতম নেপাল।”
এই মুহূর্তে প্রতিবেশী বলয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই ভারত। বিভিন্ন
ধরনের রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। পাশাপাশি চিনের প্রভাবে ভারত-বিরোধিতার স্বর
শোনা গিয়েছে প্রতিদেশীদের গলায়। তাই সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন বা
এসসিও-র রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনে বিদশ মন্ত্রকের সচিব (পশ্চিম) বিকাশ
স্বরূপ বলেছেন, “আমরা চাই আমাদের প্রতিষেধক বিশ্বকল্যাণে কাজে লাগুক। সমগ্র
মানবজাতির উপকার করতে প্রস্তুত আমরা।” ভারতের এই কূটনৈতিক উদ্যোগের মধ্যেই
চিন তাদের প্রতিষেধক প্রক্রিয়া নিয়ে বৈঠক করেছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং
নেপাল সরকারের সঙ্গে।