ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ৪৪৯টি অপরাধ . শীর্ষে সদর উপজেলা
মাসুদ আলম ||
অপরাধ
বাড়ছে কুমিল্লা জেলায়। গত ৩ মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত বছর
২০২০-এর শেষ মাস ডিসেম্বরে আগের দুই মাসের চেয়ে অপরাধ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য
হারে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাইসহ ৮ ধরনের অপরাধে জর্জরিত কুমিল্লাবাসী ও
পুলিশ প্রশাসন। এ জেলায় গড়ে প্রতি ১২০০ মানুষের জন্য পুলিশ রয়েছে মাত্র ১
জন; যে কারণে অপরাধ দমন পুলিশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুমিল্লার নবাগত পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদও বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, তিনিও
কুমিল্লা জেলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। স্বল্প সংখ্যক পুলিশ দিয়ে গোটা
জেলার অপরাধ দমনে তিনি তাই তিনি জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কুমিল্লা
জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির দেয়া তথ্যমতে, ডিসেম্বরে কুমিল্লা জেলায় মোট
৪৪৯টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর আগের মাস নভেম্বরে ৩৭০টি আর অক্টোবরে ৪২৩টি
অপরাধ ঘটেছে গোটা জেলায়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ডিসেম্বর মাসে সংঘটিত
৪৪৯টি অপরাধের মধ্যে খুন, নারী ও শিশু নির্যাতন, চুরি-ছিনতাই, চোরাচালান
সিঁদেল চুরি, মাদকসহ ৮ ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। জেলার ১৭টি উপজেলা ও
১৮টি থানার মধ্যে অপরাধে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা সদর উপজেলার কোতোয়ালি থানা।
ডিসেম্বরে এই উপজেলায় সংঘটিত ৬৩টি অপরাধের মধ্যে রয়েছে চাঞ্চল্যকর দুটি
খুন। এছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতনের ৫টি ঘটনাসহ রয়েছে ৩টি চুরি ও ছিনতাইয়ের
ঘটনা। অপরাধে কুমিল্লা সদরের পরের অবস্থানে রয়েছে দাউদকান্দি। এই উপজেলায়
গত ডিসেম্বরে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ৫১টি। এখানে খুনের ঘটনা না থাকলেও রয়েছে
ধর্ষণের মতো নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, মাদক ইত্যাদি। এর পরের অবস্থানে
রয়েছে সদর দক্ষিণ উপজেলা। ডিসেম্বরে এই উপজেলায় খুন, দস্যুতা, নারী ও শিশু
নির্যাতন, সিঁদেল চুরি, চুরি-ছিনতাই, অস্ত্র ও মাদকসহ ৪৯টি অপরাধ।
গত
রবিবার (১০ জানুয়ারি) কুমিল্লা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় দেয়া আরও
তথ্যমতে, ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ ও দাউদকান্দি ছাড়াও
চৌদ্দগ্রামে ২৭টি অপরাধ, নাঙ্গলকোটে ১২টি, লাকসামে একটি খুনসহ ৯টি,
মনোহরগঞ্জে ৯টি, বুড়িচংয়ে ৩১টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৩৬টি, বরুড়ায় ২৮টি,
চান্দিনায় ৩৬টি, তিতাসে ২৬টি, মেঘনায় ৮টি, হোমনায় ৭টি, মুরাদনগরে ২৭টি,
দেবিদ্বারে ১৯টি, লালমাইয়ে ১১টিসহ অপরাধ রেকর্ড করা হয়েছে।
হিসাব বলছে,
নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে ৫টি বেশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে
কুমিল্লায়। একটি করে পিস্তল, পাইপগান, এলজি ও ৩ রাইন্ড গুলিসহ ডিসেম্বরে
৭টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
অপরাধ বেড়েছে অভিযোগের বিষয়ে রবিবারের
আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘অপরাধ
দমনে পুলিশ কাজ করছে। কুমিল্লায় আমার আগমন হয়েছে মাত্র সপ্তাহ অতিক্রম
করেছে। কুমিল্লা একটি বড় জেলা। আমি এই জেলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কুমিল্লার জনগণের তুলনায় পুলিশ সদস্যের পরিমাণ খুবই
অপ্রতুল। এই জেলায় প্রতি ১২’শ জন মানুষের জন্য একজন মাত্র পুলিশ সদস্য
রয়েছে। যার কারণে বলবো, এই জেলায় অপরাধ দমনে পুলিশকে সহযোগিতার জন্য সমাজের
সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।’
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা
সূত্রে আরও জানা যায়, অপরাধ দমনে কুমিল্লার ১৭ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা,
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ৪১৬টি মোবাইল কোর্ট
পরিচালনা করেন ডিসেম্বও মাসে। ওইসব মোবাইল কোর্টে ১ হাজার ৯৯৬টি মামলাসহ
জরিমানা করা হয় ২৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৪০ টাকা। এছাড়া দুই হাজার ৩২৯ টাকা
অর্থদ-সহ ৪ জনকে কারাদ- দেয়া হয়।
সভায় কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল
ফজল মীর বলেন, অপরাধ দমনে এবং কুমিল্লা শহরের সড়ক ও ফুটপাত দখল, সরকারি
সম্পত্তি বেদখল ও গোমতী নদীতে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের বিরুদ্ধে
প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত হয়েছে। এছাড়া খাদ্যে ভেজাল ও বাজার স্থিতিশীল
রাখতে অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হবে।