করোনা মহামারি নিয়ে অস্বস্তিতে বিশ্ব। মহামারির কারণে এরই মধ্যে ২০ লাখ মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। তার পরও ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইন পাওয়া যাচ্ছে। এমন আতঙ্কজনক অবস্থায় আশার আলো দেখিয়েছে কয়েকটি টিকা। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকার জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। এই টিকার ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বাংলাদেশে চলে আসবে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ২৬ জানুয়ারি থেকে যাঁরা টিকা পাবেন তাঁদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়েও টিকা সংরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন জেলায় কত মানুষ টিকা পাবেন তার একটি ছকও তৈরি করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে টিকা দেওয়ার জন্য ৪২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে সরকারিভাবে টিকা প্রদান শুরু হলেও পরে সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করে বড় বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও টিকা দিতে পারবে।
স্বস্তির বিষয়, বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহে পরীা বিবেচনায় আক্রান্তের হার অনেক কমেছে। কমেছে মৃত্যুর হারও। তবে এতে খুব বেশি আশ্বস্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আবার যেকোনো সময় আক্রান্তের হার বেড়ে যেতে পারে, যেমনটা হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্চ মাসের দিকে আবারও বাংলাদেশে একটা ধাক্কা আসতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাঁরাও ভাইরাস বহন ও সংক্রমণ ঘটাতে পারেন। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিকা দেওয়া হোক বা না হোক—মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। মহামারি নিয়ন্ত্রণে টিকার ব্যাপক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ছয় মাসের মধ্যে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়া গেলে তা জনপ্রতি দুই ডোজ হিসাবে মাত্র দেড় কোটি মানুষকে দেওয়া যাবে। অথচ আমাদের টিকা দিতে হবে প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে। আশা করা হচ্ছে, আরো কিছু উৎস থেকে টিকা পাওয়া যাবে। সেসব টিকাপ্রাপ্তির বিষয়ে দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত হওয়ার পরও টিকা পাওয়ার েেত্র সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন—ইউরোপে ফাইজারের টিকা উৎপাদন অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ফাইজার ও মডার্নার টিকা অতি নিম্ন তাপমাত্রায় সংরণ করার মতো সুবিধা এখনো আমাদের দেশে ব্যাপকভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি। তাই রাশিয়া ও চীনের তৈরি টিকা আনারও চেষ্টা করতে হবে। টিকার সুফল পেতে হলে ১৪ কোটি মানুষকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা দিতে হবে। টিকা প্রদানের জন্য প্রশিতি জনবল আরো বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তার পরও অনেকের মধ্যে ভয়ভীতি থাকতে পারে। তাই মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি মাস্ক পরাসহ সতর্কতামূলক পদপেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।