ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ভূমি জালিয়াতি-হয়রানি রোধে আইন হচ্ছে
Published : Tuesday, 19 January, 2021 at 12:00 AM
ভূমি ও ভূ-সম্পদ সম্পর্কিত জালিয়াতির কারণে হয়রানির শিকার হওয়া প্রকৃত ভূ-সম্পত্তির মালিকদের দ্রুত প্রতিকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে নতুন আইনের খসড়া প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভূমিসংক্রান্ত কাগজ জালিয়াতি প্রতিরোধে প্রস্তাবিত নতুন আইন বিষয়ক এক কর্মশালায় একথা জানান।
এতে খাস জমি দখল, জাল দলিল এবং খতিয়ান তৈরি, বালু ফেলে নদীর জমি দখল ইত্যাদিসহ জমিজমা সংক্রান্ত অন্যান্য জালিয়াতি এবং জবর-দখল সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে একটি আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে আইন বিশেষজ্ঞ, মন্ত্রণালয় ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আয়োজিত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা দলিল জালিয়াতি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত দেন। সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় মন্ত্রণালয়।
কর্মশালায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাসুদ করিম, মুহাম্মদ সালেহউদ্দীন, প্রদীপ কুমার দাস ও যুগ্মসচিব মো. কামরুল হাসান ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন।
আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুস, আকতারুজ্জামান, ড. কাজী জাহেদ ইকবাল ও খন্দকার শাহরিয়ার শাকিব।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে কর্মরত আমন্ত্রিত বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও অধিগ্রহণ), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।


এক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের ২৬২ গাড়ি গায়েব
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কয়েকটি প্রকল্পের কাজ পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। সেসব প্রকল্পে ব্যবহার করা ২৬২টি গাড়ির কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
নিয়ম অনুযায়ী, এগুলো পরিবহন পুলে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য না পাওয়ায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিএজি) কার্যালয় অডিট আপত্তি দিয়েছে।
এ সংক্রান্ত অনিয়ম তদন্তে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবহন পুল ও অডিট অফিসের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। তদন্ত কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজের ধীরগতি ও অনিয়মের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাধিক সংসদীয় কমিটি। প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন কমিটিতে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই সব কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৩৮টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে। আটটি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ ৫০ শতাংশের নিচে। ৫১ শতাংশের ওপরে ১৬টি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ। মাত্র একটি প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকাজের এই ‘শম্বুক গতিতে’ অসন্তোষ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা।
সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একাধিক প্রকল্পের কাজ পাঁচ বছর আগে শেষ হলেও প্রকল্পের ২৬২টি গাড়ির হদিস নেই। নিয়মানুযায়ী গাড়িগুলো পরিবহন পুলে জমা হওয়ার কথা থাকলেও সে বিষয়ে কোনো তথ্য না পাওয়ায় অডিট আপত্তি দিয়েছে সিএজি কার্যালয়।
অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব নিরীক্ষাকালে গাড়ির ফাইলপত্র পর্যালোচনায় একাধিক প্রকল্পে ২৬৭টি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রকল্প সমাপ্তের পর মাত্র পাঁচটি গাড়ি কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলে জমা হয়েছে। বাকি ২৬২টি গাড়ি কোথায় কার মাধ্যমে ব্যবহার হচ্ছে, কে ব্যবহার করছে, তার কোনো হদিস নেই। গাড়ি প্রাপ্তি স্বীকার সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।
গাড়িগুলোর প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জবাবে সিএজি কার্যালয়কে জানিয়েছে, প্রকল্পের সম্প্রসারণকাজে বিভিন্ন জেলায় গাড়িগুলো নিয়োজিত আছে। গাড়িগুলোকে পরিবহন পুলের তালিকাভুক্ত করতে মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই জবাব যথাযথ নয় বলে জানিয়েছে সিএজি কার্যালয়।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘সমাপ্ত প্রকল্পের ২৬২টি গাড়ি কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলে জমা না হওয়ায় সরকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ’ এ বিষয়ে তদন্তের জন্য কমিটি গঠনের সুপারিশ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ছাগল ও ভেড়ার ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ পেস্ট ডেস পেটিটস রুমিন্যান্টস (পিপিআর) রোগ নির্মূল ও ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়। ২০২২ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ২ শতাংশ। ৩৪৫ কোটি দুই লাখ ৯৯ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ছয় কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার। আর সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুন মাসে। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ৪২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) শুরু হয়। এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু গত নভেম্বর পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬ শতাংশ। আর ব্যয় হয়েছে ১৯৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের সাড়ে ৪ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য একটি ফোর হুইলার, পাঁচটি ডাবল কেবিন পিক-আপ, একটি মাইক্রোবাস ও ৪১৮টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের জন্য মোটরসাইকেল কেনার কথা জানানো হয়েছে। অথচ আমার উপজেলায় আমি এই প্রকল্পের কোনো মোটরসাইকেল দেখিনি। এগুলো কোথায় তাহলে? প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব, তিনি সরকারি গাড়ি পান। তাহলে আবার প্রকল্পের গাড়ি কেন?’
আব্দুস শহীদ আরো বলেন, এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। কমিটির পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সূত্র জানায়, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন কমিটির সদস্যরা। তারা প্রতিষ্ঠানটির গবেষণার অর্থ লোপাট ও এখতিয়ারের বাইরে একাধিক সরকারি গাড়ি ব্যবহারেরও অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু কমিটির বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে ওই সব অভিযোগগুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেছেন, ‘প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণার অর্থ নয়ছয় ও মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে আনীত অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। অভিযোগগুলো তদন্তসাপেক্ষে আগামী বৈঠকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ