মাসুদ
আলম।। উপ-পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক) পদসহ চিকিৎসক ও কর্মকর্তা সংকটে ধুঁকছে
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল। দীর্ঘদিনের জনবল সংকটের কারণে
কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এই হাসপাতালে সময় সময় শয্যা ও
ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল। সেই কারণে ধারণমতার দ্বিগুণ বেশি
রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালটিকে। এজন্য সেবার
মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে। ফলে প্রায়ই রোগীর
স্বজনদের সঙ্গে শিানবিশ চিকিৎসকদের অপ্রীতিকর, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।
অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসক ও কর্মকর্তার দীর্ঘদিনের এই সংকট সমাধানে কাজ
করেননি দায়িত্ব শেষ করে চলে যাওয়া একাধিক পরিচালক। সপ্তাহখানেক আগে
হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন নতুন পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন। তিনি আশ^াস
দিয়েছেন, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মকর্তাসহ জনবল সংকট
সমাধান, হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং রোগীদের সেবা বৃদ্ধিতে কাজ
করবেন।
কুমেক হাসপাতাল বৃহত্তর কুমিল্লা (কুমিল্লা, চাঁদপুর ও
ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ও বর্তমান জেলার ১৭টি উপজেলার নি¤œমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র
মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অনেক দিন থেকেই রোগীদের
অভিযোগ, জনবল সংকটে তারা এখানে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না। এছাড়া এই
হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, জনবল ও শয্যা সংকটেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়
রোগীদের।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের দেয়া
তথ্যে দেখা যায়, ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে পরিচালকের পদসহ চিকিৎসক ও
কর্মকর্তাদের ১৭৮টি অনুমোদিত পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে
হাসপাতালের উপ-পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক) পদ, সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি,
সিনিয়র কনসালটেন্ট অর্থো-সার্জারি, ডার্মাটোলজি, চক্ষু, জুনিয়র কনসালটেন্ট
মেডিসিন, ইএনটি, অ্যানেসথেসিয়া, রেজিস্ট্রার ইএনটি, রেজিস্ট্রার বার্ন ও
প্লাস্টিক সার্জারি, সহকারী রেজিস্ট্রার সার্জারি পদে ২টি, অর্থোপেডিক্স,
শিশু সহকারী রেজিস্ট্রার পদে ১টি, ইএনটি পদে ১টি, পেডিয়েট্রিক সার্জারি,
নেফ্রলোজি, ক্যাজুয়েলটি, ইউরোলজি, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি পদে ২টি,
অ্যানেসথেসিওলজস্টি, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার পদে ১টি, মেডিক্যাল
অফিসার পদে ১টি, মেডিক্যাল অফিসার ইএনটি, ডায়ালাইস মেডিক্যাল অফিসার পদে
১টি, সহঃসার্জন (এম.ও) রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং পদে ১টি, অর্থোপেডিক ও
ট্রমাটোলজি পদে ১টি, ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার গাইনি পদে ১টি, ইনডোর
মেডিক্যাল অফিসার নিউরো মেডিসিন পদে ১টি, ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার শিশু পদে
১টি, ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার ক্যাজুয়েলটি পদে ১টি, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদে
৩টি এবং রেডিওলজিস্ট (রেডিওলজি ও ইমেজিং) পদে ১টিসহ মোট ৩৫টি পদ শূন্য
রয়েছে দীর্ঘদিন।
জানা গেছে, কুমেক হাসপাতালে বেডের
তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপ বেকায়দায় পড়েছে। তাছাড়া
তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকটও চরম। ফলে পরিচ্ছন্নতার
অভাবে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে
সিটিস্ক্যান মেশিন, এমআরআই, ডিজিটাল এক্স-রে ও শিশু বিভাগের কয়েকটি
প্রয়েজনীয় মেশিনও নেই।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতালটি ১৯৯২ সালে ২৫০
শয্যা ও ২০০৮ সালে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল ৫০০ শয্যার দেওয়া
হয়নি। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৮শ’ জন রোগী ভর্তি হন। আউটডোরে
চিকিৎসা নেন গড়ে প্রতিদিন এক হাজার ২শ’ রোগী। তাদের সেবা দিতে চিকিৎসক ও
নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সূত্রমতে, রাজনৈতিক তদবিরে ৪র্থ শ্রেণিতে
নিয়োগ হওয়ায় প্রকৃত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়োগ পাচ্ছেন না। তাই তারা
পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে চান না। এতে কর্তৃপকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এদিকে
সরঞ্জাম সংকটে অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া নবজাতকদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন
চিকিৎসক ও অভিভাবকরা। হাসপাতালে ইনকিউবেটর ও রেডিয়েন্ট ওয়ার্মার না থাকায়
শিশুদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চিকিৎসাধীন এক নবজাতকের মা
সালমা বেগম জানান, সামর্থ্য না থাকায় তার সন্তানকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি
করেছেন। তবে এখানের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,
মেডিসিন বিভাগের ফোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা
জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত ৫ দিন ধরে ফোরে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি।
এখানে সব পরীার যন্ত্রপাতি নেই। আবার বাইওে থেকে পরীা করার মতো অর্থও আমার
হাতে নেই।’
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো.
মহিউদ্দিন বলেন, ‘কুমেক হাসপাতালে যোগদান করেছে মাত্র সপ্তাহখানেক হবে।
এখনও এই হাসপাতালের অনেক সমস্যা ও সংকটের বিষয়ে জানার সুযোগ হয়নি। তবে আমার
প্রধান কাজ হবে রোগীদের সেবা বৃদ্ধি করতে জনবল সংকট দূর করা। শূন্যপদ পূরণ
করে রোগীদের সেবার মান বাড়ানো হবে। সেই সাথে বাথরুমসহ হাসপাতালকে নিয়মিত
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।