রাজকন্যার নাম ছিল অভয়া। যশোরের তৎকালীন রাজা নীলকণ্ঠ রায়ের একমাত্র
কন্যা ছিলেন তিনি। ভৈরব নদের তীরে ভাটপাড়ার পাশেই ছিল রাজার দুর্গ।
সেখানকার প্রকৃতির মাঝেই বেড়ে ওঠেন রাজার নয়নের মণি অভয়া। একসময় তার বিয়ের
বয়স হয়ে গেল। রাজা মেয়ের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। বিভিন্ন জায়গার রাজ
পরিবার থেকে অভয়ার বিয়ের সম্বন্ধ আসতে থাকল।
শেষ পর্যন্ত রাজা নীলকণ্ঠ ঠিক করলেন তখনকার সময়ের প্রভাবশালী নড়াইল
জমিদার বংশের পুত্র নীলাম্বর রায়ের সঙ্গেই অভয়ার বিয়ে দিবেন। বিয়ের সানাই
বাজল রাজ দুর্গে। স্বামীর সঙ্গে বেশ ভালোই কাটছিল অভয়ার সংসার। তখনো তার
একে অন্য মন দেয়া-নেয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অভয়ার স্বামী
নীলাম্বর রায় কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। কিছুদিনের মধ্যে তার মৃত্যু
হয়।
রাজা নীলাম্বরের একমাত্র কন্যা অভয়া বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই বিধবা হন।
রাজকন্যা ছিলেন শৈব অর্থাৎ মহাদেব শিবের উপাসক। সে সময়ে হিন্দু ধর্মে
দ্বিতীয় বিয়ের নিয়ম না থাকায় অভয়া বাকি জীবন পূজা-অর্চনা করে কাটাতে
চান। এরপর রাজা সেখানে নির্মাণ করেন ১১ টি শিব মন্দির।
রাজকন্যা সারাদিন সেখানেই শিবের ভক্তি করতেন। মনের কষ্টে ঢুকরে কেঁদে
উঠতেন অভয়া। তার কান্নার শব্দ যেন প্রকৃতিও সহ্য করতে পারত না। এভাবেই
দুঃখী রাজকন্যা বাকিটা জীবন পার করেন। কথিত রয়েছে, আজও না-কি রাতের বেলায়
কোনো নারীর কান্নার শব্দ শোনা যায় মন্দিরের ভেতর থেকে।