অবিস্মরণীয় অস্ট্রেলিয়া সফর শেষ করে দেশে ফিরে নিজেই নিজেকে বিলাসবহুল
বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দিয়েছে ভারতের পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে এ খবর জানিয়েছেন সিরাজ নিজেই। অস্ট্রেলিয়া
সফরে খেলা তিন টেস্টে ১৩ উইকেট নিয়ে সিরাজই ছিলেন ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ
উইকেটশিকারি।
গত বছরের ২০ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া পৌঁছার সপ্তাহখানেকের মধ্যে মারা যান
সিরাজের বাবা। তাকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল বাবার জানাজা-দাফনে অংশ নিতে ভারতে
ফিরে যাওয়ার। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন প্রটোকল মাথায় রেখে তখন দেশে ফেরেননি
সিরাজ। এছাড়া সিডনি ও ব্রিসবেনে খেলতে নেমে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকারও
হয়েছেন ২৬ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার।
তবে সফরের শেষটা দারুণভাবে করেছেন তিনি। সবমিলিয়ে তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট
নিয়ে ছিলেন ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। এছাড়া ৩২ বছর পর ব্রিসবেনের
গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়াকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দেয়ার ম্যাচে ক্যারিয়ারের
প্রথম ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সিরাজ। সেই ম্যাচের মাধ্যমে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও
জিতে নিয়েছিল ভারত।
পরে দেশে ফিরে দুইদিনের মাথায় নিজেই নিজেকে বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দিয়েছেন সিরাজ। এর আগে বিমান থেকে নেমে
বাড়ি ফেরার আগে সরাসরি বাবার কবর জিয়ারত করতে যান তিনি।
সিরাজ বলেন, ‘আমি আগে বাড়ি যাইনি। সরাসরি বিমানবন্দর থেকে বাবার কবরের
কাছে গিয়েছি। সেখানে তার সাথে কিছু কাটিয়েছি। বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।
তবে তার কবরে ফুল দিয়েছি।’
সিরাজের বাবা ছিলেন দরিদ্র অটোচালক। তার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় ক্রিকেটার
হবে, ভারতের হয়ে খেলবে। সেই স্বপ্নের পথ খুঁজে দিতে প্রতিদিন বাবা ৭০ টাকা
করে দিতেন সিরাজকে। প্র্যাকটিসে যেতে-আসতে খরচ হতো ৬০ টাকা। সেই সিরাজই এখন
নিজের পরিশ্রমের সুবাদে কিনেছেন বিএমডব্লিউ গাড়ি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার প্রতিটি উইকেট বাবাকে উৎসর্গ করেছি। গ্যাবা
টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট নেয়ার পর মায়াঙ্ক আগারওয়ালের সঙ্গে উদযাপন
করেছি আমি। সিরিজ শুরু হওয়ার আগে আমি কখনও ভাবিনি যে, পাঁচ উইকেট নিতে
পারব। ইনজুরির কারণে আমাদের খেলার মান অনেক বাড়াতে হয়েছে।’
সিরাজের শেষ কথা, ‘কবরস্থান থেকে যখন বাড়ি ফিরি, তখন আমাকে দেখেই কান্না
শুরু করে দেন মা। আমি তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। এ অনুভূতি
অন্যরকম। কারণ ৬-৭ মাস পর ছেলে বাড়ি ফিরেছে। মা আমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে
ছিলেন। অনেকদিন পর ঘরের খাবার খেতে পেরেছি। এটা দারুণ অনুভূতি ছিল।’