ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
পাকাঘরে ঘুমানোর স্বপ্নপূরণ
Published : Saturday, 23 January, 2021 at 2:18 PM
পাকাঘরে ঘুমানোর স্বপ্নপূরণ পঞ্চগড় সদর উপজেলার প্রত্যন্ত টোকাপাড়া গ্রামের বসবাস করেন সালেহা বেগম (৪৫)। ভূমিহীন স্বামী মমতাজ আলী (৫৫) একজন কৃষিশ্রমিক। দুই ছেলেসহ পরিবার নিয়ে অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে তাদের বসবাস। অর্থাভাবে ঝুপড়ি ঘর মেরামতও করতে পারেন না। সেই সালেহা ও তার পরিবার এখন পাকাঘরে ঘুমানোর স্বপ্নে বিভোর। দিনের অধিকাংশ সময় নির্মাণাধীন পাকাঘরের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেন সালেহা ও তার সন্তানরা। একই অবস্থা ওই ইউনিয়নের ১৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। অনুভূতি জানতে চাইলে সালেহা বেগম বলেন, ‘স্বপ্নেও ভাবিনি কোনোদিন আমাগো পাকাঘর হইব। সেই বিল্ডিং বাড়িতে ঘুমাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাগো ঘর দিচ্ছে। এ সরকারের জন্যই ধনীদের মতো আমাদেরও পাকাঘরে ঘুমানোর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। মন থেকে দোয়া করেছি- আল্লাহ যেন শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু দান করেন।’
‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে আজ শনিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পঞ্চগড়ে এক হাজার ৬৮ জন ভূমিহীন সুবিধাভোগী পরিবারকে এই পাকা বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলে ১৩টি পাকাঘর নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন বাকি শুধুই ঘর হস্তান্তর প্রক্রিয়া। ভূমিহীন ১৩ পরিবারের তালিকায় রয়েছেন কাজীপাড়ার জোসনা বেগমও (৪৫)। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী বধির (শ্রবণ প্রতিবন্ধী) মানুষ। কষ্ট করে অন্যের জায়গায় ঘরে তুলে কোনোরকমে থাকি আমরা। সরকার আমাদের জমি এবং পাকা বাড়ি দেবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। পাকাঘর দেবে শোনার পর থেকে দিন গুণছি কবে ওই ঘরে শান্তিতে একটু ঘুমাব। প্রতিদিন দু’তিনবার যায়, আমাগো ঘর দেখে আসি।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে পঞ্চগড়ে এক হাজার ৫৭ পরিবারকে এই ঘর বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই ¯েøাগানে কণ্ঠ মিলিয়ে স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অর্থায়নে আরও ১১ জনসহ এক হাজার ৬৮ জনকে এসব ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ২০৮, দেবীগঞ্জে ৫৮২, বোদায় ৫৫, আটোয়ারীতে ৭০ এবং তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১৪২টি ভূমিহীন পরিবারকে এসব ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। এজন্য ১৮ কোটি সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। এসব পাকাঘর খাস জমি ও দানকৃত জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। একটি পরিবারের জন্য দুই রুমবিশিষ্ট সেমিপাকা ঘরে রয়েছে রান্না ঘর, বাথরুম ইউটিলিটি রুম ও সামনে খোলা বারান্দা। জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন জানান, শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সকল উপজেলায় একযোগে এসব ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। স্থানীয়ভাবে ওই আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এসব ঘরের জায়গার কবুলিয়ত, সনদ ও খারিজ তুলে দেয়া হবে। এই অনুষ্ঠান সকল উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের অধীনে দেশে এ পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ৫২ টি ভূমিহীন, গৃহহীন, অসহায়, ছিন্নমূল পরিবারকে পূর্নবাসন করা হয়েছে। মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ এই চেতনা নিয়ে গৃহনির্মাণ উপযোগী দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত করে প্রথম পর্যায়ে দেশে ৬৬ হাজার ১৮৯ টি পরিবারের জন্য এসব গৃহনির্মাণে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এসব ঘর নির্মাণে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি), জেলা গৃহ নির্মাণ কমিটি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কাজের অগ্রগতি, প্লান ও ডিজাইন এবং মান সঠিক রেখে গৃহনির্মাণে তদারকি করেছেন। সদর উপজেলার ইউএনও মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২০৮টি পাকাঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। খাস জমিতে নির্মাণ করা এসব পাকাঘরে সর্তকতার সঙ্গে মানসম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।’ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, মুজিববর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উদ্যোগ আমরা প্রশাসনের সঙ্গে থেকে আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়ন করে চলেছি। সরকারিভাবে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, আমরা এর চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছি। এসব বাড়িতে টিউবওয়েলসহ অন্যান্য সুবিধাও প্রদান করা হচ্ছে। যাতে বরাদ্দ পেয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলো ভালোভাবে বসবাস করতে পারেন, আন্তরিকতার সাথে সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ। আমরা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তদারকি করছি। যারা প্রকৃত ভূমিহীন এবং গৃহহীন, তাদের জমি বরাদ্দসহ এই পাকাঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। ঘরগুলো নির্মাণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিভাগীয় কমিশনার এসে আমাদের বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন ঘরগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি আরও বলেন, খাসজমির পরিমাণ ও গৃহহীনের সংখ্যা হিসেবে পঞ্চগড় ছোট জেলা হলেও আমরা অন্য জেলার তুলনায় বেশি ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। শনিবার প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।