ভাষাসৈনিক আবদুল জলিলের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
Published : Monday, 25 January, 2021 at 12:00 AM
মোহাম্মদ আবদুর রহিমঃ
১৯৫২
সালে মহান ভাষা আন্দোলনে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) অঞ্চলের
কো-অর্ডিনেটর, প্রবীণ সাংবাদিক ও বিশিষ্ট লেখক -- ভাষা সৈনিক মোঃ আবদুল
জলিল ২০১৯ সালের এই দিনেমৃত্যুবরন করেন ‘‘ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহে
রাজিউন‘‘ ২য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলে ভাষা সৈনিক মোঃ আবদুল জলিল-নুরজাহান
স্মৃতি ফাউন্ডেশান‘র উদ্যোগে
কোরআন খতম, মিলাদ এর আয়োজন সহ আগামী ২৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) বাতাখালী
হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় মিলাদ মাহফিল ও দুপুরে খাবারের আয়োজন
করেছেন
সংপ্তি পরিচিতি
ভাষাসৈনিক
মোঃ আবদুল জলিল ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারী কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলায়
চন্দনা গ্রামের ঐতিহ্যবাহি মুসলিম পরিবারে মোঃ আবদুল জলিল জন্মগ্রহন করেন।
পিতা প্রয়াত আলহাজ্ব মুন্সি বজলুর রহমান পন্ডিত এবং মাতা ওয়াহেদা খাতুন।
মোঃ আবদুল জলিল ১৯৫০ সালের জুনিয়র মাদ্রাসা জালালাবাদ রেঞ্জের হাজী মহসিন
পান্ডের ষ্টাইফেন্ড পরীায় বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র এবং লাকসাম অতুল হাইস্কুলে (
যাহা বর্তমানে লাকসাম সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়) দেয়ালিকা
‘‘দি নিউজ
সিট’’ হাতেলেখা সাপ্তাহিক সংবাদ সমীা পত্রের সম্পাদক হতে শুরুকরে বর্তমানে
লাকসাম হতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক লাকসাম সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও
প্রকাশক। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক লাকসাম দনি কুমিল্লার সর্বপ্রথম
সংবাদপত্র। ২০১৯ সালের এ ই দিনে জনাব আবদুল জলিলের মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে
মোঃ নুরউদ্দিন জালাল আজাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়ত্ব গ্রহন করেন। মোঃ
আবদুল জলিল ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা)
অঞ্চলের কো-অর্ডিনেটর এর দায়িত্ব পালন করেছেন। মোঃ আবদুল জলিল দীর্ঘ
সাংবাদিকতা জীবনে সিলেটের যুগভেরী, ইষ্টার্ণ হেরাল্ড, আওয়াজ, কুমিল্লার
সাপ্তাহিক আমোদ, দৈনিক রূপসী বাংলা, ফলক,পূর্বাসা, চট্রগ্রাম এবং ঢাকায়
দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক জনতা এবং লাকসামের দিলদার ও নোয়াখালীর
জাতিয় নিশান সহ অনেক পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছেন এবং
ফিচার,গল্প,কবিতা লেখালেখির পাশাপাশি শিশু সংগঠন কচিকাঁচারমেলা,খেলাঘর ও
সুজন মজলিশ এর আঞ্চলিক সংগঠক ছিলেন।
১৯৫৮ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘‘লাকসাম
লেখক সংঘের” মাধ্যমে একটি লেখক সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক গোস্টি তৈরীর
স্বপ্ন সফল হয়েছে। লাকসামে কর্মরত সকল সাংবাদিকদের সংঘবদ্ধ রাখতে তিনি
লাকসাম প্রেস কাব প্রতিষ্ঠা করেণ
এবং দীর্ঘবছর লাকসাম প্রেসকবে সভাপতি
হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। মোঃ আবদুল জলিল স্থানীয় উত্তরদা উচ্চবিদ্যালয়ের
প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ১৯৬৮ সালে শুন্য পূঁজিতে এ শিা
প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করেন।এ বিদ্যালয়টি বর্তমানে লাকসামে সনামধন্য
শিাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে সুপরিচিত।
মোঃ আবদুল জলিল পি.আই.বি প্রকাশিত মাসিক
নিরীাতে ফিচার লিখতেন। পি.আই.বি প্রকাশিত সাংবাদিক অভিধানে তাঁর ছবি সহ
সংপ্তি পরিচিতি ছাপা হয়েছে।
মোঃ আবদুল জলিল একজন সফল নাট্যকার,কবি ও
উপন্যাসিক।তিনি সিলেটের শ্রীমঙ্গলে চা-বাগানে খেটে খাওয়া মানুষ
কুলিকামিনিদের জীবনের উপর ‘‘কুলি মেয়ে” নামক নাটক লিখেছেন। ৭১ এর
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষের
প্রতি তাঁর দরদী মনের বহিঃপ্রকাশ
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লাকসাম” ইতিহাসধর্মী বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর
লেখা ইতিহাসধর্মী বই বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার সাংবাদিকতার উদ্ভব ও বিকাশের
ইতিহাস, লাকসাম জনপদ কথামালা
১ম ও ২য় খন্ড, বৃহত্তর কুমিল্লার
পীরমুর্শিদের আস্তানায়, ওগো বঙ্গবন্ধু, মহিয়সী নারী ফয়েজুন্নেছা, আশেকে
রাসুল মাসুকে এলাহী আল্লামা হযরত মাওলানা আবদুল বারী জিহাদী, বাংলাদেশের
পীরমুর্শিদের আস্তানা, সাগরতীরে কেওড়া বনে, বেদনা যারে দাও, রিকসা ওয়ালা
নামক বই প্রকাশিত হয়েছে এবং আরও কিছু বই প্রকাশে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মোঃ আবদুল জলিল গ্রামীনমুখী চিন্তা চেতনার কারনে শহরের কৃত্তিমতাকে অপছন্দ করে গ্রামেই সহজ সরল জীবন অতিবাহিত করেছেন।
১৯৮৫
সালে সাপ্তাহিক লাকসাম সংবাদপত্র চালু করেন। ১৯৯৬ সালের ১৮ এপ্রিল তাঁর
সহধর্মীনি নুরজাহান বেগমের মৃত্যুর পর স্মৃতিকাতর মনের কামনার ফসল হিসাবে
তিনি মৃত্যুর আগমুহুর্ত পর্যন্ত লেখায় কর্মব্যস্ত ছিলেন। মোঃ আবদুল জলিল
মানুষের কল্যানে ‘‘দিশারী” সংস্থা নামক একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা
করেছেন এবং তাঁর সেবামুলক প্রতিষ্ঠান, চন্দনা প্রকাশণী, নুরজাহান স্মৃতি
পাঠাগার, জলিল-নুরজাহান স্মৃতি ফাউন্ডেশন। তিনি একজন রেজিষ্টার্ড হোমিও
ডাক্তার হিসাবে কম পয়সায় এবং বিনামূল্যে রোগিদের চিকিৎসা দিতেন।
৫২‘র
ভাষা আন্দোলনে প্রত্য ভুমিকা পালন করায় জরিপমূলে মোঃ আবদুল জলিলকে কুমিল্লা
জেলা প্রশাসন কতৃক ভাষাসৈনিক সম্মাননা প্রদান করেছেন। একজন অভিজ্ঞ
সাংবাদিক এবং ভাষাসৈনিক হিসাবে বাংলাদেশ টেলিভিশন রিপোর্টাস এসোসিয়েশন
(ট্র্যাব) ও বাসস, বাংলাদেশ বেতার কুমিল্লা কেন্দ্র, এশিয়া ছিন্নমুল
মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন, এশিয়ান ইউনির্ভাসিটি, সহ প্রায় অর্ধশতাধীক
সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান হতে তিনি সম্মাননা স্মারক,ক্রেস্ট,এ্যওয়ার্ড গ্রহন
করেছেন।
মোঃ আবদুল জলিল একটি মতবাদের উপর গবেষনারত ছিলেন। তাঁর মতে
জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়তে হলে - কৃষিতে ভূর্তকি, শিা বানিজ্য বন্ধ,
বুর্জুয়া ছাত্র/শিক রাজনীতি সিমিত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্ন,
বস্ত্র,বাসস্থানের জন্য যেকোন জনপ্রিয় সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহন
করতে হবে।
মোঃ আবদুল জলিল ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি হঠাৎ হ্নদরোগে
আক্রান্ত হলে তাৎনিক লাকসামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা
এবং কুমিল্লায় অতঃপর ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসারত
অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরন করেন।