কুমিল্লায় চাঞ্চল্যকর যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান জিলানী হত্যামামলায় গ্রেফতার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বে”ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সাত্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পিবিআই। বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করার পর রিমান্ড আবেদন করে তদন্তকারী সং¯’া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা শাহবাগ এলাকা থেকে জিল্লুর হত্যা মামলার এজাহার নামীয় ২ নং আসামি সাত্তারকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এছাড়া সাত্তার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তা যাচাই-বাছাই করে দেখছে পিবিআই।
পূর্ব শত্রুতা ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে গত ১১ নভেম্বর কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার ও কাউন্সিলর আবুল হাসানের নেতৃত্বে মোটর সাইকেলযোগে সন্ত্রাসীরা জিল্লুর রহমান জিলানীকে কুপিয়ে হত্যা করে। মঙ্গলবার বিকালে মামলার ২ নং আসামি আবদুস সাত্তারকে ঢাকা শাহবাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর কুমিল্লা কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাউন্সিলর আবদুস ছাত্তার জিলানী হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তা গোপন রাখা হ”েছ। বুধবার দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার কার্য্যলয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। এসময় পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক মতিউর রহমান, পরিদর্শক বিপুল চন্দ্র দেবনাথসহ অনান্য কর্মকর্তারা উপ¯ি’ত ছিলেন।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, জিল্লুর রহমান জিলানী হত্যাকাণ্ডের পর দায়ের করা মামলার আসামি কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন ¯’ানে পলাতক ছিলেন। একেক সময় তিনি একেক ¯’ানে অব¯’ান করেন। পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, কয়েক দিন ধরে তিনি ঢাকার শাহবাগ থানা এলাকায় অব¯’ান করছেন গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিকালে তাকে গ্রেফতার করার পর রাতে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে আব্দুল কাদের নামে পুলিশ এক আসামিকে গ্রেফতরা করে। মামলাটি পিবিআইতে আসার পর নুরুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এরই মধ্যে এ মামলায় এজাহার নামীয় ১৫ জন উ”চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য অন্তবর্তীকালীন জামিন লাভ করেছেন। গত ৩০ নভেম্বর থেকে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।
এছাড়া কুমিল্লা নগরীর শামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকায় ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে একদল সন্ত্রাসী মোটর সাইকেলে করে এসে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ারকে ঘেরাও করে হামলা চালায় এবং মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করে। ঘটনার পরদিন নিহতের ভাই শাহাদাত হোসেন নয়ন বাদী হয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় ওই গ্রামের রেজাউল করিম ও কাউছারসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়। চাঞ্চল্যকর দেলোয়ার খুনের মামলাটি থানা পুলিশের পর এখন তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দেলোয়ার হত্যা মামলার এজহার নামীয় প্রধান আসামি রেজাউলের সহযোগী আনোয়ার হোসেনকে গত গ্রেফতার করে পিবিআই। পরদিন-ই সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতে খুনের মুল পরিকল্পনাকারী কাউন্সিলর সাত্তার ও কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আসামীদের নাম উঠে আসে।
পিবিআই সূত্র জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরেই দেলোয়ারকে হত্যা করা হয় আর দেলোয়ার হোসেন হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল ¯’ানীয় ২৭ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার। কাউন্সিলর কার্যলয়ে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়। কিলিং মিশনে অংশ নেয়া এক আসামি আনোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি থেকে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
নিহত দেলোয়ারের বড় ভাই ও মামলার বাদী শাহাদাত হোসেন নয়ন বলেন, দেলোয়ার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার এক আসামীর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। পিবিআই প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি দেরীতে হলেও মুল পরিকল্পনাকারী ধরেছেন। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এদিকে বুধবার পিবিআই কার্যলয়ে উপ¯ি’ত দেলোয়ার হত্যা মামলার স্বাক্ষী বল্লভপুর (সামবক্সী) গ্রামের মৃত সামছুল হকের পুত্র শহীদুল হক জানায়, দেলোয়ার হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী আনোয়ার হোসেন আদালতে ১৬৪ ধাারায় কাউন্সিলর সাত্তারকে মুল পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর কাউন্সিলরের লোকজন বিভিন্নভাবে তাকে হুমকী দিয়ে আসছে। এমনকি তার ফসলী জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে গেছে তারা । এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারী শহীদুল হক জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কাউন্সিলর সাত্তারের সহযোগী বল্লভপুর (সামবক্সী) গ্রামের মো.আমিনুল ইসলামের পুত্র হেলাল মোস্তফা (৩৮) ও মৃত আবদুল বারেকের পুত্র শাহাদাত হোসেন (৩৫) সহ ৬/৭ জনের নামে সদর দক্ষিন মডেল থানায় সাধারন ডাইরী করেছেন।