নিজস্ব
প্রতিবেদক: জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের করোনার টিকা
নেওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও টিকা নেওয়ায় উৎসাহিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি পাঁচ
তারকা হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বলেন, ‘৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। সাংসদ,
মন্ত্রী, সরকারের সচিবদের আহ্বান জানাব, তাঁরা এই কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত টিকার মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা
সবচেয়ে নিরাপদ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান
করব আপনারা আপনাদের এলাকার মানুষকে টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। তাদের
টিকাদানে উদ্বুদ্ধ করবেন।’
টিকা নিতে নিবন্ধন করার বিষয়ে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অ্যাপে নিবন্ধন করতে না পারলে, অন্যের সাহায্য নিন।
প্রয়োজনে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রেও সাহায্য নিতে পারেন। এ ছাড়া টিকাদান
কেন্দ্রে এলেও ফরম পূরণ করে নিবন্ধন করা যাবে বলে তিনি জানান। টিকা ছাড়া
করোনাভাইরাস নির্মূল করা দুরূহ উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, দেশে এ
পর্যন্ত যারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়েছেন, তাঁরা সবাই সুস্থ আছেন।
সবাইকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সব ব্যবস্থা আছে। আপনি
টিকা নেন, সুস্থ থাকেন, দেশকে সুস্থ রাখেন।’
দেশের স্বাস্থ্য খাতে অনেক
অর্জন আছে দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার ৩-৪
শতাংশে ওঠানামা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি বলেন,
সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নিচে নামলে ভাইরাস আপনা-আপনি চলে যায়। তাই
সংক্রমণের বর্তমান হার বজায় রাখতে সবাইকে মাস্ক পরা অব্যাহত রাখার পরামর্শ
দেন মন্ত্রী।
৩০ জানুয়ারি বিশ্ব এনটিডি (ক্রান্তীয় অবহেলিত রোগ) দিবস
উপলে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। আয়োজক হিসেবে ছিল স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অ্যাসেন্ড।
অনুষ্ঠানে
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানও সবাইকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী
টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিজে টিকা নেবেন ও অন্যকে নিতে
উৎসাহিত করবেন। জনগণের টাকায় কেনা একটি টিকারও যেন অপব্যবহার না হয়।
প্রতিটি ডোজ যেন কোনো না কোনো মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়।
অনুষ্ঠানে
স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসির (নন কমিউনিকেবল ডিজিজ
কন্ট্রোল) লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। করোনার টিকা এখন
স্বাস্থ্য খাতের ‘হট টপিক’ বলে মন্তব্য করেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের
সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান।
তিনি বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি
স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা নেবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি দায়িত্বশীল
রাজনীতিক, মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্য, রাজনৈতিক সংগঠন ও প্রশাসনের
উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা প্রকাশ্যের টিকা নিলে এবং সেটি গণমাধ্যম প্রচার
করলে টিকা নিয়ে মানুষের বিরূপ ধারণা কেটে যাবে। টিকাদান কর্মসূচিকে সফল
করাই এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ
করেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ ও লাইন
ডাইরেক্টর) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম,
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন,
বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বারদান জং রানা, অ্যাসেন্ড
বাংলাদেশের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক শারদ বারকাতাকি বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মূল
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির
পরিচালক অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ক্রান্তীয়
অবহেলিত রোগ (এনটিডি) বিশ্বের প্রায় ১৭০ কোটি মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি।
বাংলাদেশ এ ধরনের রোগগুলো হচ্ছে গোদ রোগ বা ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর, কুষ্ঠ,
কৃমি, জলাতঙ্ক, সর্প দংশন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া। প্রতিবছর শুধু সর্প দংশনে
বাংলাদেশে প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা যায়। সচেতনতা ও সঠিক কর্মকৌশল গ্রহণ
করে রোগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান
জানানো হয়। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশে দুটি রোগের (কুষ্ঠ ও
কালাজ্বর) নির্মূলসংক্রান্ত ল্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং ফাইলেরিয়া
নির্মূলের ল্যমাত্রা অর্জনের পথে আছে বাংলাদেশ।