ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
 কী ঘটছে মিয়ানমারে?
Published : Wednesday, 3 February, 2021 at 12:00 AM, Update: 03.02.2021 1:05:09 AM
 কী ঘটছে মিয়ানমারে?সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবি জোরাল হচ্ছে। কিন্তু কোথায় আছেন সু চি? অভ্যুত্থানের একদিন পেরিয়ে গেলেও সেনাবাহিনী এখনও সু চিকে কোথায় আটকে রেখেছে তা নিয়ে মুখ খোলেনি।
মিয়ানমারে সর্বশেষ নির্বাচনের ফল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সোমবার ভোরে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মতা দখল করে। তারা মতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টকে আটক করে। ওই দিন এনএলডির আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে আটক করা হয়।
মতা দখলের পর সেনাবাহিনী দেশজুড় এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
কোথায় আছেন সু চি?
সোমবার সু চিকে আটকের পর কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে সেনাবাহিনী বা অন্য কোথাও থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএলডি-র এক এমপি’র বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদেরকে উদ্বিগ্ন না হতে বলা হয়েছে। যদিও আমরা খুবই উদ্বেগের মধ্যে আছি। যদি আমরা বাড়িতে তাদের অবস্থানের কোনও ছবি হাতে পেতাম তাও কিছুটা স্বস্তি পেতাম।”
সোমবার এনএলডির আরও বেশ কয়েকজন এমপি’কে আটক করা হয়। তাদেরকেও রাজধানী নিপিধো-তে তাদের নিজ নিজ সরকারি বাসভবনে আটকে রাখা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
ওদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এনএলডি’র কেন্দ্রীয় তথ্য কমিটির এক ঊধ্র্বতন কর্মকর্তা কী তোয়ে ফেইসবুকে এক পোস্টে ‘সু চির স্বাস্থ্য ভাল আছে’ বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবারের ওই ফেইসবুক পোস্টে তোয়ে বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন সু চির শরীর ভালো আছে এবং তাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।
এনএলডির এক সদস্য একে ‘খোলা আকাশের নিচে বন্দিশালা’ বলে বর্ণনা করেন।
অন্যদিকে, চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া মিয়ানমারের এক সেনাকর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, অভ্যুত্থানের সময় যেসব আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক নেতাদের আটক করা হয়েছিল মঙ্গলবার তাদের বেশিরভাগকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সাগাইং অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী মিন্ত নাইংকেও সেনাবাহিনী আটক করেছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তির পর বিবিসি’কে তিনি বলেন, তাকে একটি ডরমিটরিতে রাখা হয়েছিল এবং তার সঙ্গে ভাল আচরণ করা হয়েছে।
“আমি জাতির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা সবথেকে ভাল কিছুর আশা করেছিলাম, কিন্তু আমাদের সঙ্গে সবথেকে খারাপটাই ঘটছে।”
মিয়ানমারে কী ঘটছে?
সেনা অভ্যুত্থানের একদিন পেরিয়ে গেলেও অস্বাভাবিক রকম শান্ত হয়ে আছে মিয়ানমার। সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে সব বড় বড় নগরীর বেশিরভাগ সড়ক ফাঁকা ছিল। সব সড়কেই সেনাসদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। আর রাতে কারফিউ জারি হয়েছে।
সোমবার অভ্যুত্থানের পর মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে সেগুলো অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনের সড়কে যে কয়জনকে দেখা গেছে তাদের চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ। তাদের কেউ কেউ গণতন্ত্রের জন্য তাদের কঠিন লড়াই ভেস্তে যাওয়া নিয়ে আপেও করেছেন।
ইয়াংগুনে সোমবার বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ইন্টারনেট না থাকায় এটিএম বুথগুলোও অচল হয়ে পড়েছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হয়েছে।
লোকজনকে লাইন ধরে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ তুলতে দেখা গেছে। ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় তারা হাতে নগদ অর্থ জমা করতে চাইছেন। তবে সোমবার বাজারে লোকজন যেভাবে হুড়োহুড়ি করে নিত্যপণ্য কিনছিল মঙ্গলবার সেই ভিড় বেশ খানিকটা কমে এসেছে।
ইয়াংগুনের বিমানবন্দর মঙ্গলবারও বন্ধ আছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। রাজধানী নিপিধোতে মঙ্গলবারও সেনাসদস্যদের ট্যাঙ্ক এবং ট্রাক নিয়ে পার্লামেন্ট ভবন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।
জনমনে জমছে ােভ:
মিয়ানমারের এই অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত রক্তপাত হয়নি। জনগণ এখনও শান্ত হয়ে আছে। জাপান, থাইল্যান্ড ও নেপালে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিােভ হলেও মিয়ানমারে তেমন কিছু দেখা যায়নি।
যদিও সু চি আটক হওয়ার আগে এক বিবৃতিতে জনগণকে রাস্তায় নেমে এ অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে গেছেন বলে দাবি তার দল এনএলডি’র।
তবে প্রতিবাদ যে একেবারে শুরু হয়নি তাও নয়। মিয়ানমারের চিকিৎসকদের একটি দল কালোব্যাজ পরে অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন।
অন্তত একজন চিকিৎস প্রতিবাদ স্বরূপ পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। তিনি হলেন সাগাইং অঞ্চলের মংইওয়া হাসপাতালের অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট ৪৭ বছর বয়স্ক ডা. নাইং তু অং।
তিনি বিবিসি-কে বলেন, ‘‘এ ধরনের অভ্যুত্থান কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি পদত্যাগ করেছি, কারণ আমি একজন স্বৈরাচারী জান্তা যার দেশ এবং জনগণ নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই তার অধীনে কাজ করতে চাই না। তাদের প্রতি এটাই আমার সেরা জবাব।”