ফের পতনের ধারায় শেয়ার বাজার, গতিশীল করতে নানামুখী উদ্যোগ
Published : Saturday, 6 February, 2021 at 12:00 AM
গত বছরের জুলাই থেকে শেয়ার বাজারের প্রতি দেশের মানুষের যে আগ্রহ ছিল, হঠাৎ করেই সেই আগ্রহে ছন্দপতন হয়েছে। কারণ, বাজার ফের পতনের দিকে ফিরছে। যদিও শেয়ার বাজারকে স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সুশাসনের পাশাপাশি বেশকিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসীদেরকে ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনতে বিদেশে ‘রোড শো’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে এই রোড শো হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বিএসইসি। এর অংশ হিসেবে সর্বশেষ যে উদ্যোগটি চোখে পড়ার মতো, তা হলো— লেনদেন শুরুর আগেই দিনের সর্বোচ্চ দামে ক্রয়াদেশ দিয়ে শেয়ারের দাম প্রভাবিত করায় দুটি বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাব সাময়িকভাবে জব্দ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পাশাপাশি লেনদেন যন্ত্রে এ ক্রয়াদেশ দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত একজন ট্রেডারকে (অনুমোদিত প্রতিনিধি) সাময়িকভাবে লেনদেন কার্যক্রম থেকে বিরত করা হয়েছে।
এ দিকে শেয়ার বাজারে বিদেশি ও বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোড শো করতে যাচ্ছে বিএসইসি। এরই অংশ হিসেবে আগামী মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে দুবাইয়ে চার দিনব্যাপী রোড শো’র আয়োজন করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের বিখ্যাত দুবাই মলের কাছে স্কাইভিউ হোটেলে এ রোড শো অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ রোড শো চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।
অবশ্য শেয়ার বাজারে লেনদেন হঠাৎ কমে যাওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সে কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কপালেও ভাঁজ পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘টানা পতন হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় চলে আসতে পারে। তবে পতন হলে উত্থানেরও সুযোগ তৈরি হয়।’ এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক পরিচালক বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ মুনাফা তুলে নিয়ে একটু অপেক্ষা করছেন নতুন বিনিয়োগের জন্য। দাম কমলে তারা আবারও বিনিয়োগ শুরু করবেন। তাই বাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলেও জানান তিনি।
গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ার বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন সপ্তাহ পতনের কারণে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজার মূলধন হারিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর মধ্যে শুধু গেলো সপ্তাহেই হারিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
বড় অঙ্কের বাজার মূলধন হারানোর পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে কমেছে সবকটি মূল্য সূচকও। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় দেড় শতাংশ এবং লেনদেন সাড়ে ৩৭ শতাংশের মতো কমে গেছে।
বর্তমানে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা, যা এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল চার লাখ ৮৪ হাজার ১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।
অবশ্য এই বছরের শুরুর দিকে বাজার মূলধন রেকর্ড পরিমাণ তথা ৫ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছিল।
তথ্য বলছে, আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে আট হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৯ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এই হিসাবে টানা তিন সপ্তাহের পতনে ডিএসই ২২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে।
অবশ্য এর আগে টানা ৭ সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৫০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ২০৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪৫২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে তিন হাজার ৭৫২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তার আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ছয় হাজার ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে দুই হাজার ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১১১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট এবং তার আগের সপ্তাহে কমেছিল ৭৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট । তিন সপ্তাহের এই পতনের আগে টানা সাত সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ১ হাজার ৩৭ পয়েন্ট বাড়ে।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি টানা তিন সপ্তাহ পতন হয়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকেরও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ১৭ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছিল ১৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট।
ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও টানা তিন সপ্তাহ পতনের মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ১৯ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে কমে ১৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট এবং তার আগের সপ্তাহে কমেছিল ২৮ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট । এর আগে টানা পাঁচ সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২০৪ পয়েন্ট।
সবকটি মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৫৭টি কোম্পানির শেয়ার। দাম কমেছে ২১৯টির। আর ৮৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।