জহির
শান্ত: কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৭ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে হত্যা
মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন দুই কাউন্সিলর। এছাড়াও একই
অভিযোগে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন একজন। গ্রেপ্তার ও পলাতক তিন
কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেই চাঞ্চল্যকর তিনটি হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ
রয়েছে। কারাবন্দি দু’জন হলেন কুমিল্লা সিটির ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর
হোসেন এবং ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার। আর গ্রেপ্তার এড়াতে
পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসান। তিনি একটি
হত্যা মামলার প্রধান আসামি।
জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর চাঙ্গিনী এলাকায়
এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়। অপরদিকে ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস
সাত্তারকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে নগরীর চৌয়ারা বাজার এলকায় যুবলীগ নেতা
জিল্লুর হত্যা মামলায়। এ মামলার প্রধান আসামি ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল
হাসান পলাতক রয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক
সম্পাদক দেলোয়ার হত্যার ঘটনায়ও কাউন্সিলর সাত্তার জড়িত আছেন বলে অভিযোগ
ওঠেছে। গ্রেপ্তার হওয়া এক আসামির জবানবন্দীতে দেলোয়ার হত্যায় সাত্তারের
জড়িত থাকার বিষয়টি ওঠে আসে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কুমিল্লার আদালত সূত্রে
জানা গেছে, চাঙ্গিনী এলাকার ব্যবসায়ী আকতার হোসেন হত্যা মামলায় বহস্পতিবার
(৪ জানুয়ারি) আদালতে আত্মসমর্পণ করলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নং
ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর হোসেনকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
তিনি এ মামলার প্রধান আসামি।
অভিযোগ রয়েছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত
বছরের ১০ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে
কুমিল্লা নগরীর চাঙ্গিনী এলাকায় শত শত মানুষের সামনে কাউন্সিলর আলমগীর
হোসেন ও তার ভাইয়েরা ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন।
তাদের হামলায় আহত হয়েছিলেন আরও ছয়জন। এ ঘটনার পরদিন নিহত আকতার হোসেনের
স্ত্রী রেখা বেগম বাদী হয়ে কুমিল্লা সদর দণি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা
দায়ের করেন। মামলায় কাউন্সিলর আলমগীর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১০ জনকে
অভিযুক্ত করা হয়।
কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের
জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আক্তার হোসেনকে হত্যার ঘটনার পর তাকে
যুবলীগের ওই পদ থেকে বহিস্কার করে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।
কাউন্সিলর
আলমগীরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী
পক্ষের আইনজীবী ও কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মোমেন ফেরদৌস।
এর
আগে গত ২৭ জানুয়ারি যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান জিলানী হত্যা মামলায়
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক
লীগ নেতা আবদুস সাত্তারকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। একই দিন তাকে
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পিবিআই। রিমান্ডের বিষয়ে
শুনানী পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হবে। সাত্তার ওই মামলার ২নং এজহারনামীয় আসামি।
আগের
দিন মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা শাহবাগ এলাকা থেকে সাত্তারকে
গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এছাড়া সাত্তার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক
সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন হত্যাকা-ের অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে
পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি আনোয়ার আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
দিয়েছে তা যাচাই-বাছাই করে দেখছে পিবিআই।
জানা গেছে, গেলো বছরের ১১
নভেম্বর সকালে কুমিল্লা নগরীর চৌয়ারা এলাকায় যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান
জিলানীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হত্যাকা-ের ঘটনায় তার
ছোট ভাই ইমরান হোসেন বাদী হয়ে ২৪ ব্যক্তিকে আসামি করে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ
থানায় একটি মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল
হাসানকে ১ নম্বর ও সাত্তারকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়। মামলার পরদিন পুলিশ
অভিযান চালিয়ে আবদুল কাদের (৪০) নামে এক আসামিকে। পরে মামলাটির অধিকতর
তদন্তের জন্য কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা থেকে আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো
অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত ও অনুসন্ধানের
পর গত ২৬ জানুয়ারি রাতে মামলার ২ নং আসামি আবদুস সাত্তারকে ঢাকা শাহবাগ
এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাউন্সিলর
আবদুস ছাত্তার জিলানী হত্যাকা-ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে
জানিয়েছেন পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। তবে তদন্তের
স্বার্থে তা গোপন রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়,
জিল্লুর রহমান জিলানী হত্যাকা-ের পর দায়ের করা মামলার আসামি কাউন্সিলর
আবদুস সাত্তার দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক ছিলেন। একেক সময়
তিনি একেক স্থানে অবস্থান করেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তথ্য প্রযুক্তির
সহায়তায় বিকালে তাকে গ্রেফতার করার পর রাতে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন
তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জিল্লুর হত্যা
মামলার প্রধান আসামি ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসান ঘটনার পর থেকেই
পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।