ছয়
বছর আগে বইমেলা থেকে ফেরার পথে বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার ঘটনায়
উগ্রপন্থি ছয় আসামির সাজা হবে কি না, তা জানা যাবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি।
দুই পরে যুক্ততর্ক শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ মামলার রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করে
দেন।
এ মামলার আসামিরা হলেন- সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক
ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল
ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ
ওরফে শামস্), আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ
এবং উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী।
আসামিদের মধ্যে ফারাবী ছাড়া
বাকি সবাই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে
তদন্তকারীদের ভাষ্য। জিয়া ও আকরাম পলাতক আছেন, বাকি সবাই কারাগারে।
২০১৫
সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে
ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে জঙ্গি কায়দায় হামলায়
ঘটনাস্থলেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে আঙুল
হারান তার স্ত্রী।
পদার্থবিদ অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ থাকতেন
যুক্তরাষ্ট্রে। বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তমনা ব্লগ
সাইট পরিচালনা করতেন তিনি। জঙ্গিদের হুমকির মুখেও তিনি বইমেলায় অংশ নিতে
দেশে এসেছিলেন।
ঘটনার পর শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন
অধ্যাপক অজয় রায় (বর্তমানে প্রয়াত)। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের
(ডিবি) হাত ঘুরে মামলাটির তদন্তভার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে যায়।
হত্যাকা-ের
চার বছর পর ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন
তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক
মনিরুল ইসলাম। অভিযোগের পে ৩৪ জনকে সাী করা হয়।
ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী
ট্রাইবুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান ওই বছর ১ অগাস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য
দিয়ে এ মামলার ছয় আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেন।
অভিযোগপত্রে নাম থাকা
রাষ্ট্রপরে ৩৪ জন সাীর মধ্যে ২৮ জনের স্যাগ্রহণের পর কারাগারে থাকা চার
আসামি গত ২৭ জানুয়ারি আদালত নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
এরপর গত ৩
ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপরে কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান জাকির আসামিদের মৃত্যুদ-
চেয়ে যুক্তিতর্ক শেষ করেন। বৃহস্পতিবার আসামিপরে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে
বিচারক রায়ের দিন ঠিক করে দেন।
বৃহস্পতিবারে শুনানিতে বেশিরভাগ সময় নেন আসামিপরে আইনজীবী। পরে রাষ্ট্রপ তাদের বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ পান।
আসামি
শাফিউর রহমান ফারাবীর পে শুনানি করেন ঢাকা জেলা আইন সহায়তা সংস্থা (ঢাকা
জেলা লিগ্যাল এইড) থেকে নিয়োগ পাওয়া আইনজীবী। পরে ফারাবী নিজেই বক্তব্য
দেন।
আত্মপ সমর্থনে যে লিখিত বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার পুনরাবৃত্তি করে এ মামলার দায় থেকে খালাস চান ফারাবী।
বিচারক
তাকে বলেন, “‘নাস্তিকরা পোকা মাকড়ের মত, তাদের মেরে ফেলা উচিৎ।’- আপনার এ
লেখায় এ মামলার আসামিসহ অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে
আদালতে কোনো প্রমাণ তো হাজির করতে পারেননি। আপনার বিরুদ্ধে তো প্ররোচনার
দায় রয়েছে। চালাকি করে লাভ নেই।”
ফারাবী তখন বলেন, “আমার একমাত্র সৎ বোন
ছাড়া আর কেউ নেই। আমি অসহায়, টাকা পয়সা নেই। আমার সৎ বোন আমার খরচ দেয় না।
কারাগারে কেইস পার্টনারদের আত্মীয় স্বজনরা কত কিছু পাঠায়, আমাকে কেউ কিছু
দেয় না।”
আসামি আরাফাত রহমান সাজ্জাদ ওরফে শামস ওরফে সিয়াম তার
আইনজীবীর মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চান। খালাস চান আসামি
মোজাম্মেল হোসেন সায়মনও।
সায়মনের আইনজীবী নজরুল ইসলাম মাঝখানে বিরতি
দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বক্তব্য দেন। তার সার কথা ছিল-“রাষ্ট্রপ মামলা
প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি বলেন “তদন্তে ত্রুটি রয়েছে। ঘটনার কোনো
চাুস সাী নাই। কোনো পারিপার্শ্বিক স্যা ঘটনা প্রমাণ করেনি। শুধুমাত্র ১৬৪
ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া যায় না।”
এর আগে আরাফাত ও আবু সিদ্দিক সোহেলের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন তার মক্কেলদের খালাস চেয়ে বিভিন্ন আইনি যুক্তি তুলে ধরেন।
পরে
রাষ্ট্রপরে কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান জাকির উচ্চ আদালতের কয়েকটি
সিদ্ধান্ত তুলে ধরে আসামিদের বক্তব্য খ-ন করেন এবং যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ
করেন।
আসামিদের কয়েকজনের স্ত্রী-কন্যা এবং আত্মীয়-স্বজন এ সময় এজলাসে হাজির ছিলেন।