টেস্টের
নাটাই বাংলাদেশের হাতে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অর্জনকে খাটো করে দেখা যাবে
না মেটেও! শেষ সফরে চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা কোনো টেস্ট ম্যাচ চারদিনে নিয়ে
যেতে পারেনি। এবার পেরেছে। সেটাও চোখে-চোখ রেখে লড়াই করে।
স্বাগতিকদের
স্কোরবোর্ড স্বস্তির বার্তা দেবে। কিন্তু অনেক সুযোগ হাতছাড়ার হাহাকার,
নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের আক্ষেপ এবং উদ্বোধনী জুটি বিষাদের রূপ ছড়িয়েছে। তৃতীয়
টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের লিড ২১৮ রানের। ১৭১ রানের লিড নিয়ে
দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৪৭। এর আগে বাংলাদেশের ৪৩০
রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ২৫৯ রান।
ব্যাট-বলের এমন এক দিন কেটেছে
চট্টগ্রামে যেখানে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় তো বটেই, কিছুক্ষণ পরপরই রঙ
বদলেছে। এমন দিনে বাংলাদেশ খেলেছে নতুন করে উরুতে চোট পাওয়া সাকিব আল
হাসানকে ছাড়া। তাকে বিশ্রামে রেখেছে দল। বোলিং করবেন না তিনি। খুব প্রয়োজন
না হলে ব্যাটিংও করবেন না।
দিনের প্রথম বল। তাইজুলের শার্প টার্ন করা
বলে ব্যাট ছুঁয়ে দেন বোনার। আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান যেন অযথাই মাঠে
এলেন! দিনের প্রথম বলে উইকেট নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অধিনায়ক
কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে সঙ্গে নিয়ে কাইল মায়ার্স প্রতি আক্রমণ শুরু করেন।
তাতে স্রেফ এলোমেলো হয়ে যায় স্বাগতিকরা। ভাগ্যকে পাশে পেয়েছেন মায়ার্স।
উইকেটের
পেছনে ও স্লিপে তার ক্যাচ ছাড়েন লিটন ও শান্ত। দুই ব্যাটসম্যানকে একের পর
এক শর্ট বল দেন তাইজুল, মিরাজ, নাঈম। হাত খুলে, সময় নিয়ে সেসব বাউন্ডারিতে
পাঠাতে একটুও কার্পণ্য করেননি ব্র্যাথওয়েট, মায়ার্স।
জুটির পঞ্চাশ রান
চলে আসে ৬৫ বলে। বিপদজনক হয়ে ওঠা এ জুটি থামে নাঈমের অসাধারণ ডেলিভারিতে।
অফস্টাম্পের অনেক বাইরে বল পিচ করে নিখুঁত টার্নে বল আঘাত করে
ব্র্যাথওয়েটের (৭৬) অফস্ট্যাম্পে। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ১৭৩ মিনিট ক্রিজে
ছিলেন। আউট হওয়া ডেলিভারিতে নিজেই অবাক হয়ে যান। নতুন ব্যাটসম্যান জার্মেইন
ব্ল্যাকউড ক্রিজে নেমে দুটি ক্যাচ দেন। শূন্য রানে লিটনকে, ২ রানে শর্ট
লেগে ইয়াসিরকে। জীবন পেয়ে উইকেটে থিতু হন এ ব্যাটসম্যান। অপরপ্রান্তে থাকা
মায়ার্স আগ্রাসন দেখালেও বেশিক্ষণ টেকেনি। মিরাজের বলে এলবিডব্লিউউ হন ৪০
রান করা এ বাঁহাতি।
প্রথম সেশনে ৩ উইকেট তুলে নিলেও ওভারপ্রতি ৩. ৩৫ গড়ে
রান দিয়েছে বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানরা মেরেছে ১৮ চার ও ১ ছক্কা। পঞ্চম
উইকেটে অতিথিরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে। দুইবার জীবন পাওয়া ব্ল্যাকউডের সঙ্গী
জশুয়া ডি সিলভা। তাদের ব্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেরিয়ে যায় ফলো অন। মধ্যাহ্ন
বিরতির পর দল যখন ভালো অবস্থায় তখন জশুয়া বাজে শটে সাজঘরে ফেরেন। নাঈমে
নিচু হওয়া বল কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৪২ রানে। ২৫৯ রানে
ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর মাত্র ৬ রান যোগ করতেই অলআউট অতিথিরা। সঙ্গী হারানোর
পর ব্ল্যাকউড ৬৮ রানে মিরাজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। এরপর রোচ ও
কর্নওয়ালকে ফিরে পাঁচ উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন মিরাজ। কিন্তু
তাইজুল শেষ ব্যাটসম্যান ওয়ারিক্যানকে বোল্ড করলে ৪ উইকেট নিয়ে মিরাজকে
সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ততক্ষণে বাংলাদেশের লিড ১৭১ রানের।
তবে বাংলাদেশের
ব্যাটিংয়ের শুরুটা একদম বাজে। দ্বিতীয় ওভারে কর্নওয়াল তুলে নেন তামিম ও
শান্তুর উইকেট। দুই বাঁহাতি উপহার দেন নিজেদের উইকেট। তামিম অফস্পিনারের
সোজা বলে এলবিডব্লিউ হন শূন্য রানে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের ৩৩তম
ডাক, যা বাংলাদেশিদের মধ্যে যৌথভাবে মাশরাফির সঙ্গে সর্বোচ্চ। শান্ত
অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেন। ১ রানে ২ উইকেট
হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে উদ্ধার করেন অধিনায়ক মুমিনুল ও সাদমান।
প্রথম
ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরিয়ান সাদমান মন্থর ব্যাটিং করলেও মুমিনুল প্রতি
আক্রমণে রান তোলেন। ৭৩ বলে তাদের ৩২ রানের জুটিতে সাদমানের অবদান ৫,
মুমিনুলের ২৭। দিনের খেলা শেষ হওয়ার ৩৫ বল আগে গ্যাব্রিয়েলের লাফিয়ে ওঠা
বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাদমান। দিনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেন মুশফিক ও
মুমিনুল। ৭ উইকেট হাতে রেখে ২১৮ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে।
এখান থেকে ৩০০ এর বেশি লিড পাওয়া হবে স্বস্তির। তৃতীয় দিন শেষে উইকেট ভাঙতে
শুরু করেছে। স্বাগতিকদের তিন স্পিনার ২২ গজে ভয়ংকর হয়ে উঠবে বলার অপেক্ষা
রাখে না।