বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের গণ টিকাদান পরিকল্পনায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে, প্রথম ডোজ দেওয়ার ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। সোমবার তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার সময়ে এই পরিবর্তন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজের জন্য এক মাস পরের তারিখ দেওয়া হয়েছে। সেই তারিখও বদলে নতুন এসএমএস দেওয়া হবে বলে মহাপরিচালক জানিয়েছেন।
“আমাদের পরামর্শক কমিটি, ওয়ার্ল্ড ভ্যাকসিনেশন কমিটি, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন- সবাই মিলে পরামর্শ দিয়েছে যে এটা আট সপ্তাহ পরে হলে ভালো হয়। এ কারণে আমরা দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সময় পরিবর্তন করেছি।”
গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা দিয়ে বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় দুই দিনে সাড়ে পাঁচশর বেশি মানুষকে পরীামূলকভাবে টিকা দেওয়া হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী তাদের পর্যবেণ করার পর ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সারা দেশে গণ টিকাদান।
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দিতে হবে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা শুরুতে জানিয়েছিল, এ টিকার দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান হবে চার সপ্তাহ। কিন্তু পরে বলা হয়, এই ব্যবধান বাড়লে টিকার কার্যকারিতাও বাড়ে।
তখন সে অনুযায়ী বাংলাদেশের টিকাদান পরিকল্পনা সাজানো হয়। বলা হয়, প্রথম চালানে পাওয়া সব টিকা দিয়ে দেওয়া হবে, প্রথম মাসে টিকা পাবে ৬০ লাখ মানুষ। পরের চালানের টিকা পেলে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
কিন্তু টিকা সরবরাহের েেত্র বৈশ্বিক একটি অনিশ্চয়তা থাকায় ফেব্রুয়ারির শুরুতে সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, হাতে থাকা ৭০ লাখ ডোজের সব প্রথম মাসে না দিয়ে অর্ধেক সংরণ করা হবে।
অর্থাৎ প্রথম মাসে ৩৫ লাখ লোক টিকা পাবে, পরের মাসে সংরণ করা টিকা থেকে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। তাতে দ্বিতীয় চালান পেতে দেরি হলেও প্রথম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে কোনো অনিশ্চিয়তা থাকবে না।
তবে দ্বিতীয় চালান হাতে পেয়ে গেলে আবারও পুরনো পরিকল্পনায় ফিরে যাওয়া হতে পারে বলে সে সময় জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
কিন্তু জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটি এখন টিকার কার্যকারিতার সঙ্গে দুই ডোজের সময়ের পার্থক্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ায় পরিকল্পনায় আবার পরিবর্তন আনা হল।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, “এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা নতুন টিকা, এ বিষয়ে কারও কোনো অভিজ্ঞতা নেই। নানা ধরনের পরিবর্তন এতে হবে। ফিক্সড কোনোকিছু বলে দেওয়া যাবে না।”
রোববার পর্যন্ত সারাদেশে ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৩ জন নিয়েছেন টিকা। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য এক মাস পর সময় দেওয়া হয়েছে।
তাদের েেত্র কী হবে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, “তাদের সবাইকে আমরা পরবর্তী সময় এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেব। আমাদের এমআইএসকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”