ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুয়েতে দণ্ডিত পাপুলের এমপি পদ বাতিল
Published : Tuesday, 23 February, 2021 at 12:00 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুয়েতের আদালতে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দ-িত হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করেছে সংসদ সচিবালয়।
রায় ঘোষণার দিন থেকে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সোমবার গেজেট জারি করা হয়েছে বলে সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
গেজেটে বলা হয়, “কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদ-ে দ-িত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর–২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন।”
অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছর জুনে কুয়েতে গ্রেপ্তার হন পাপুল। ব্যবসার সূত্রে সেখানে তার বসবাসের অনুমতি ছিল।
ওই মামলার বিচার শেষে গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদ- দেয় কুয়েতের একটি আদালত। সেদিন থেকেই তার সাংসদ পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দ-িত হওয়ার এবং সাজার কারণে পদ বাতিলেরও এটাই প্রথম ঘটনা।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হল সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবে না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।
ওই অনুচ্ছেদেই বলা আছে, কোন বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা কোন বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে আর এমপি হিসেবে থাকতে পারবে না।
পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট জারির পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তা ইসিতে পাঠিয়েছে সংসদ সচিবালয়।
আর নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, “আসন গেজেটর কপি আমরা হাতে পেয়েছি। পরবর্তী করনীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।”
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সাংবিধানিকভাবে পাপুলের আসন শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে ইসি।
“সংসদ সচিবালয়ের চিঠি কমিশন সভায় উপস্থাপনের পর সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। নির্বাচন করতে ৪০-৪৫ দিন সময় হাতে লাগবে আমাদের। ২ মার্চ হালনাগাদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপরই তফসিল ঘোষণা করা হবে।”
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ওই নির্বাচনে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে ‘বিএনপি ঠেকানোর’ কথা বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপুলের পে কাজ করে বলে দলটির নেতাদের ভাষ্য।
পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরতি একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে এমপি করে আনেন।
প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।
পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটির ধারণা।
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত জুনে গ্রেপ্তারের পর পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনা হয়। পরে তদন্ত করে পাপুলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার, ঘুষ লেনদেন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ আনে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন।
অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়। জানুয়ারিতে আদালত যে রায় ঘোষণা করে, তাতে পাপুলের কাজে সহায়তাকারী হিসাবে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জারাহ এবং কুয়েতি দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদ- দেওয়া হয়।
ওই দুই কর্মকর্তা ছিলেন পাপুলের বিভিন্ন কাজের মধ্যস্থতাকারী এবং এজেন্ট। পাপুলসহ দ-িত প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদ- দেওয়া হয়েছে ওই রায়ে।
বাংলাদেশে দুদকও পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম সেই মামলায় জামিনে আছেন।
পাপুল গ্রেপ্তার হওয়ার এবং সাজা পাওয়ার পর তা বিধি অনুযায়ী না জানায় তখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সংসদ সংসদ।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক অনুষ্ঠানে জানান, কুয়েত থেকে রায় পাওয়ার পর তা স্পিকারের কাছে পাঠিয়েছে তার মন্ত্রণালয়। এরপরই পাপুলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কাজ শুরু করে সংসদ সচিবালয়।
১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনের সময় সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ জনতা টাওয়ার দুর্নীতি মামলা, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পাওয়া উপহারসামগ্রী আত্মসাৎ-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলাসহ তিনটি মামলায় নি¤œ আদালতে দ-িত ছিলেন।
নি¤œ আদালতের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে এরশাদ নির্বাচন করেন এবং সংসদ সদস্য পদে বহালও থাকেন।
নি¤œ আদালতে দ-িত হওয়ার পর একাধিক মামলায় তিনি জামিন পেয়েছিলেন। জনতা টাওয়ার মামলায় সর্বোচ্চ আদালত তার সাজা বহাল রাখায় এরশাদ ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।