দেশের ৩ শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অনিয়মের খবরে সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ
Published : Monday, 1 March, 2021 at 12:00 AM
দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রায়ই শিশু নির্যাতন ও অনিয়মের খবর প্রকাশিত হওয়ায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এজন্য শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কার্যক্রমের মানোন্নয়ন ঘটানোর সুপারিশ করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
এদিকে সমাজকল্যাণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, যশোর পুলেরহাটে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের যে তিনজন শিশু মারা গেছে, তারা নারী-শিশু নির্যাতন মামলা ও হত্যা মামলার আসামি।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির ১০ম বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
কমিটি দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র- গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র ও গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম উন্নত ও নিয়মিত মনিটরিং করার সুপারিশ করেছে। সেখানে অবস্থান করা শিশুদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, থাকা ও খাওয়ার মান বাড়ানোসহ সার্বিক কার্যক্রম যাতে আরও উন্নত হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠকে এ সময় বিভিন্ন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আবাসিক শিশুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নে উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলে কমিটি। সেই সঙ্গে শিশুরা যাতে কোনো ধরনের যৌন ও শারীরিক নির্যাতন বা মাদকাসক্ত হয়ে না পড়ে সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের জোর সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সমাজকল্যাণ অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) ভেতরে তিন কিশোর নিহতের ঘটনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, যশোর পুলেরহাটে যে তিন শিশু মারা গেছে তারা নারী-শিশু নির্যাতন মামলা ও হত্যা মামলার আসামি। এ কাজের সঙ্গে জড়িত আট শিশু নারী-শিশু নির্যাতন, হত্যা ও অন্যান্য মামলায় জড়িত। এখানে ১৮ বছরের নিচে শিশুদের রাখার উদ্দেশ্য হলো- তাদেরকে অনুপ্রেরণা ও কর্মমুখী শিক্ষা দেয়া এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, কেন্দ্রের সিস্টেমগুলো সেভাবে ডেভেলপ করা হয়নি। ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে সেখানে ৪৯ জনের জনবলের স্থলে কর্মরত আছেন ২৩ জন এবং বাইরে থেকে কিছু সংখ্যক লোক প্রেষণে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই কেন্দ্রে তিন ঘণ্টা ধরে মারামারি হলেও পুলিশ, আনসার, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেয়েছেন কিন্তু কী পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে তা মন্ত্রণালয় জানায়নি।
তিনি বলেন, পুলেরহাট কেন্দ্রের বাথরুমের ভেন্টিলেটর দুর্বল থাকায় সেখান থেকে সাতজন শিশু পালিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রটির মেরামত কাজের জন্য জেলা প্রশাসককে ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের শিশুদের প্রকৃত বয়স ১৮ বছরের বেশি। তাই জন্মসনদ প্রদানের সময় ইউপি চেয়ারম্যানকে সতর্ক করা প্রয়োজন। এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য জেলা প্রশাসক, আনসার, পুলিশ সবাইকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরে সেখান থেকে সাত জন শিশু পালিয়ে যায়। এর আগে গত ১৩ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৮ বন্দি শিশুর ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এতে তিন শিশু মারা যায় এবং ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় পাঁচ কর্মকর্তা ও সাত বন্দি শিশুর বিরুদ্ধে মামলাও হয়।
কমিটি সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম অত্যন্ত সতর্কতা ও গুরুত্ব সহকারে করার সুপারিশ করে। বৈঠকে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের সুবিধাভোগীদের জন্য এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) ডাটাবেজ তৈরি এবং সব ভাতা জিটুপি পদ্ধতিতে প্রেরণের সুপারিশ করা হয়।
সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাগুফতা ইয়াসমিন, নাসরিন জাহান রতনা, আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান, আরমা দত্ত, শবনম জাহান ও কাজী কানিজ সুলতানা অংশ নেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান বৈঠকে যোগদান করেন।