বিশেষ
প্রতিনিধি ॥ স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল, অগ্নিগর্ভ পুরো বাংলাদেশ। দেশ
মাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে সবাই রাজপথে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে চলছে লাগাতার
হরতাল। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগানে স্লোগানে
প্রকম্পিত শহর-বন্দর-গ্রামগঞ্জ। অহিংস আন্দোলন-সংগ্রামে নয়, সশস্ত্র
সংগ্রামেই একমাত্র মুক্তির পথ, এটা বুঝতে বাঙালী জাতির বাকি রইল না। তাই
আন্দোলনের পাশাপাশি সারাদেশেই গোপনে চলে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি।
উনিশ
শ’ একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের চার তারিখ ছিল দেশব্যাপী লাগাতার হরতালের
তৃতীয় দিন। তবে এই দিন হরতাল ছিল আট ঘণ্টার। দ্রোহ-ােভে বঞ্চিত শোষিত
বাঙালী তখন ক্রমেই ফুঁসে উঠছিল ঔপনিবেশিক পাকিস্তানী শাসক-শোষকদের
বিরুদ্ধে।
এেেত্র বসে নেই কুখ্যাত পাকিস্তানী বাহিনীর। তাদের এ দেশীয়
দোসর রাজাকার-আলবদররাও বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলন নস্যাতে তৎপর। কার্ফু
দিয়েও সামরিক জান্তারা সাহসী বীর বাঙালীদের ঘরে আটকে রাখতে না পেরে গোপনে
আঁটতে থাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে বাঙালী নিধনের। শুধু অপো করতে থাকে ৭
মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কী বলেন।
আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী
লীগের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন ৭ মার্চের জনসভা সফল করার জন্য।
তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) চলতে থাকে জনসভার
প্রস্তুতি। পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশেই গঠন হতে থাকে সংগ্রাম কমিটি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুব ও ছাত্র নেতারা গোপনে নানা স্থান থেকে অস্ত্র
সংগ্রহ অভিযান চালাতে থাকেন বেশ জোরেশোরেই।
একাত্তরের এই দিনে অর্থাৎ ৪
মার্চ, ১৯৭১ ুব্ধ বাঙালীর মিছিলে মিছিলে ঝাঁঝালো স্লোগানে উচ্চকিত ছিল
সারাদেশ। প্রধান স্লোগান ছিল- ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন
করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্ম-মেঘনা-যমুনা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ,
বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ইত্যাদি।
একাত্তরের উত্তাল, ঝঞ্ঝাবিুব্ধ বাংলাদেশে
এই দিনটিতে সারাদেশের সকল পাড়া, গ্রাম, মহল্লায় সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি
শান্তি-শৃঙ্খলা রা কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
এর উদ্যোক্তা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও আওয়ামী লীগের
ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের
(বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্যান্টিনে স্থাপন করা হয় ছাত্রদের
যোগাযোগ কেন্দ্র।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ৩ মার্চ
অনুষ্ঠিত একটি জনসভাতেও স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। সভাতে বাঙালীর স্বাধীনতা
আন্দোলন যেন থেমে না থাকে সেজন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু
বলেন, ‘আমি মরে গেলেও সাত কোটি মানুষ দেখবে দেশ সত্যিকার স্বাধীন হয়েছে।
আমি যদি নাও থাকি আন্দোলন যেন থেমে না থাকে।’ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক
লীগের উদ্যোগে এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু এ আহ্বান জানান। একাত্তরের আজকের
এই দিনে দৈনিক ইত্তেফাক এবং আজাদে জনসভার বিস্তারিত ছাপা হয়।
নূরে আলম
সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বঙ্গবন্ধুকে বাংলার স্বাধিকার
আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। জনসভায় বক্তব্য রাখেন তোফায়েল আহমেদ,
শ্রমিক নেতা আবদুল মান্নান এবং ডাকসু নেতা আবদুল কুদ্দুস মাখন। পুরো বাঙালী
জাতি স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করতে গোপনে প্রস্তুতি নিতে
থাকে।
এবারের মার্চ মাস বাঙালীর জীবনে বিশেষ তাৎপর্য বয়ে এনেছে। চলছে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলে মুজিববর্ষ।
আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে। মুজিববর্ষ আর
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছরব্যাপী বিস্তারিতভাবে পালনে নেয়া হয়েছে
সর্বাত্মক প্রস্তুতি।