ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
দুই সাহাবির নবীপ্রেম
Published : Friday, 5 March, 2021 at 12:00 AM
মুফতি ইবরাহিম সুলতান ।।
আল্লাহর প্রিয় রাসুল ও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব হজরত মুহাম্মদ (সা.), যাঁকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে পুরো সৃষ্টিকুল। যাঁর অনুসরণ-অনুকরণ ও তাঁর প্রতি ভালোবাসা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র মাধ্যম। তাই তো প্রতিটি মুমিন রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসাকে পৃথিবীর সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দেয়। যার বহু দৃষ্টান্ত সাহাবায়ে কেরামের জীবনীতে পাওয়া যায়। নি¤েœ সে রকম দুটি ঘটনা তুলে ধরা হলো :

আবু বকর (রা.)-এর ভালোবাসা
আবু বকর (রা.) ছিলেন প্রিয় নবীর প্রধান সাহাবি, ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। ইসলামের প্রথম খলিফা এবং প্রথম পুরুষ মুসলিমদের অন্যতম। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণের সম্মান আল্লাহ তাঁকেই দিয়েছেন। ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই নবীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন তিনি। হিজরত, সফর এবং  কাফেরদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জিহাদে অংশগ্রহণসহ নানা প্রতিকূলতায় নবীজির পাশে ছিলেন ঢাল হিসেবে। শত্রুবাহিনীর সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় তিনি ছিলেন বিচণ ও আপসহীন। বিশেষভাবে নবীজির ইন্তেকালের পর আরব দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ধর্মত্যাগ ও রাসুলের প্রতি বিদ্বেষ এবং তাঁকে ব্যঙ্গ করে অবমাননার এক প্রবল ঝড় উত্থিত হয়েছিল। এই ঝড়ের ঝাপটায় দুর্বল ঈমানদার এবং নতুন ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্তর থেকে ঈমানের আলো প্রায় নিভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কঠিন সেই মুহূর্তে আবু বকর (রা.) অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সীমাহীন ধৈর্যের সঙ্গে শত্রুবাহিনীর মোকাবেলায় অগ্রসর হয়েছিলেন। আর এসব কিছুই ছিল নবীর প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা এবং গভীর মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ। মৃত্যুকালেও তাঁর এই ভালোবাসার ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। বর্ণিত আছে, ‘মৃত্যুশয্যায় তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন নবীজি কোন দিন ইন্তেকাল করেছেন? আয়েশা (রা.) জানালেন, সোমবার। তিনি বলেন, আজ কী বার? জবাব দিলেন, সোমবার। তখন তিনি বলেন, হায় যদি আমার মৃত্যু রাতের আগেই হতো! (বুখারি, হাদিস : ১৩৮৭)

আবু খায়সামা (রা.)-এর নবীপ্রেম
হজরত আবু খায়সামা (রা.) নবীজির প্রিয় আনসারী ধনী সাহাবি। একাধিক যুদ্ধে তিনি নবীজির সঙ্গে সশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর হৃদয়জুড়ে ছিল নবীপ্রেমের স্ফুলিঙ্গ। যার প্রমাণ তাবুক যুদ্ধের ঘটনা। হাদিসের ভাষায় ঘটনাটির বর্ণনা এরূপ—
নবম হিজরির ঘটনা। রোমের বাদশাহ মদিনা আক্রমণের ষড়যন্ত্র করছিল। নবীজি সংবাদ পেয়ে তার আগমনের অপো না করে আগে বেড়ে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এদিকে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সময়টা ছিল প্রচ- গরম আর মদিনার প্রধান খাদ্য খেজুর পাকার মৌসুম। তা ছাড়া যুদ্ধের ময়দান ছিল মদিনা থেকে বেশ দূরত্বের। সব কিছু মিলিয়ে এই যুদ্ধটা ছিল অন্যান্য যুদ্ধ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এত কিছুর পরও ঈমানের উজ্জ্বলতায় কোনো কিছুই তাঁদের রুখতে পারেনি। সব বাধা-বিপত্তি, কষ্ট-কেশ উপো করে মুনাফিকদের ছাড়া সব মুমিনই এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তবে অল্পসংখ্যক মুমিন সাহাবিও বিভিন্ন কারণে মদিনায় রয়ে গিয়েছিলেন। যাঁদের মধ্যে আবু খায়সামা (রা.)ও ছিলেন একজন। তবে তিনি অংশগ্রহণ না করতে পারায় মনের মধ্যে ছিল যথেষ্ট অস্থিরতা। আর এই অস্থিরতা ও পেরেশানি  নিয়ে একদিন তিনি  নিজের বাগানে গেলেন। তখন প্রচ- গরম পড়ছিল। গরমের উষ্ণতায় মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে আগুন ঝরছে। এ অগ্নিপরিবেশে স্বামীকে শীতল পরশ দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল তাঁর দুই স্ত্রী। গাছের ছায়া, ঠা-া পানির ঝাপটা, নরম-কোমল বিছানা, দস্তরখানের ওপর বাহারি রঙের খাবারের আয়োজন করে তাঁরা একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু আবু খায়সামা (রা.)-এর মন শীতল ছায়া, ঠা-া পানি, বাহারি দস্তরখান আকর্ষণ করছিল ঠিকই; কিন্তু সেই সঙ্গে হৃদয়-সাগরে এক তরঙ্গবিুব্ধ ঝড় শুরু হলো। একটি পবিত্র ভাবনার প্রচ- ধাক্কা যেন সামনের বাহারি সব আয়োজন উল্টে দিল। মনের গহিনে জেগে উঠল প্রাণপ্রিয় নবী তো এ প্রচ- গরমে আল্লাহর পথে সফর করে কত কষ্ট করছেন! আর আমি এখানে সুখের মঞ্চে বসে আনন্দ উপভোগ করছি!
এ ভাবনা মনে দোলা দিতেই তিনি উটে চড়ে তাবুকের পথে রওনা হয়ে গেলেন। এরই মধ্যে সাহাবায়ে কেরাম তাবুক পৌঁছে গিয়েছিলেন। নবীজি দূর থেকে দেখেই আগ্রহভরা কণ্ঠে বলেন, হয়তো আবু খায়সামা হবে। কাছে আসার পর নবীজির ধারণাই সত্য হলো। সালামের উত্তর দেওয়ার পর নবীজি বলেন, আবু খায়সামা, তোমাকে মোবারকবাদ। ধ্বংসের উপকণ্ঠ থেকে তুমি বের হয়ে এসেছ। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৭১৭৫)