ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
নারী ফুটবলের বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ছে পুরো দেশে
Published : Monday, 8 March, 2021 at 1:48 PM
নারী ফুটবলের বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ছে পুরো দেশে জাতীয় ফুটবল ক্যাম্পে এখনো ময়মনসিংহের মেয়েদের প্রাধান্য। বর্তমান বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে যে ৫১ জন আছেন, তার মধ্যে সর্বাধিক ১২ জন ময়মনসিংহের। তবে সংখ্যাটা ক্রমেই কমছে। ৮-৯ বছর আগে জাতীয় বা বয়সভিত্তিক জাতীয় দল মানেই ছিল ময়মনসিংহের মেয়েরা।

মারিয়া মান্ডা, মারজিয়া, শামসুন্নাহার, সাজেদা, সানজিদা, তহুরাদের জেলার মেয়েদের দিয়েই তৈরি হতো জাতীয় ও বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দল। সেই অবস্থা বদলে গেছে। সংখ্যাটা এখনো বেশি না হলেও দিন দিন অন্য জেলার মেয়েরা জায়গা করে নিচ্ছে ক্যাম্পে, প্রাধান্য কমছে ময়মনসিংহের মেয়েদের।

ময়মনসিংহের নারী ফুটবলার বলতে কলসিন্দুর। এক সময় কলসিন্দুর হয়ে উঠেছিল নারী ফুটবলার তৈরির সবচেয়ে বড় জায়গা। কয়েক বছর ধরে নারী ফুটবলের বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ছে পুরো দেশে।

এক যুগ ধরে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দল নিয়ে কাজ করছেন গোলাম রাব্বানী ছোটন। দেশের নারী ফুটবলের নাড়ি-নক্ষত্র তার জানা। ময়মনসিংহ থেকে এখন পুরো দেশে নারী ফুটবলের বিপ্লব ছড়িয়ে পড়াটাকে বিশাল অর্জন মনে করেন তিনি। ছোটন বলেন,‘এখন ক্যাম্পে ১৯ জেলার ফুটবলার আছে। আগে তিন থেকে চারটি জেলার ফুটবলারদের নিয়েই তৈরি হতো দল। এখন দিনদিন জেলার সংখ্যা বাড়ছে।’

স্মৃতি হাতড়িয়ে গোলাম রাব্বানী ছোটন বললেন, ‘২০০৯ সালে আমি যখন নারী ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন দেখেছি নারায়ণগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির মেয়েরাই ক্যাম্পে। ২০১২ সাল থেকেই বিপ্লব শুরু হয় মেয়েদের ফুটবলে।’

বাফুফের নারী ক্যাম্পে ময়মনসিংহের যে ১২ ফুটবলার আছেন তাদের মধ্যে মারিয়া মান্ডা, মারজিয়া, শামসুন্নাহার, শামসুন্নাহার (জুনিয়র), সাজেদা আক্তার, তহুরা খাতুন, রোজিনা আক্তার, শিউলি আজিম, সানজিদা আক্তার জেলার কলসিন্দুরের। নান্দাইলের আছেন-হালিমা আক্তার, মিলি আক্তার ও নাজমা।

মেয়েদের ক্যাম্পে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ জন করে ফুটবলার আছেন টাঙ্গাইল ও রংপুরের। টাঙ্গাইলের কৃষ্ণা রানী সরকার নারী ফুটবলের উজ্জ্বল মুখ। আছেন মাহফুজা, ইতি খাতুন, মিম আক্তার ও নওশিন জাহান। রংপুরের আছেন মিশরাত জাহান মৌসুমী, সিরাত জাহান স্বপ্না, সুলতানা, বৃষ্টি, লাবনি।

কেবল সাতক্ষীরারই নয়, দেশের নারী ফুটবলের বড় মুখ সাবিনা খাতুন। প্রাপ্তি ও রূপা এই জেলার অন্য দুই ফুটবলার, যারা আছেন জাতীয় ক্যাম্পে।

মাগুরার মেয়েরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন ফুটবলে। এই জেলার আনিকা, সাথী বিশ্বাস, স্বর্ণা মন্ডল ও নবিরন খাতুন আছেন ক্যাম্পে। ঠাকুরগাঁওয়ের সোহাগী কিসকু, কোয়াতি কিসকু, স্বপ্না রানী, খাগড়াছড়ির মনিকা চাকমা, আনুচিং মগিনি ও আনাই মগিনি, রাঙ্গামাটির রিতু পর্না চাকমা, রূপা চাকমা, সিরাজগঞ্জের আঁখি খাতুন, সুমী আক্তার, ও কুষ্টিয়ার নিলুফা ইয়াসমীন নীলা, ইয়াসমিন আক্তার, কক্সবাজারের শাহেদা আক্তার রিপা, বাগেরহাটের আকলিমা খাতুন, চাপাইনবাবগঞ্জের সুরধ্বনি কিসকু, নীলফামারীর শতাব্দী রায়, ঢাকার নাসরিন আক্তার, জামালপুরের, ঝিনাইদহের উন্নতি খাতুন, ঝালকাঠির রেহানা আক্তার ও রাজশাহীর নার্গিস খাতুনরা এখন জাতীয় ক্যাম্পের খেলোয়াড়।

ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পর মেয়েদের ফুটবলের সম্ভাবনা জেলা হিসেবে উঠে আসছে লালমনিরহাট ও মাগুরা। করোনাভাইরাসের আগে ২০১৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে যশোরে ৮৩ জন মেয়ে নিয়ে যে ইউনিসেফ অনূর্ধ্ব-১২ ক্যাম্প হয়েছিল, সেখানে ১২ জন ছিলেন লালমনিরহাটের ও ১১ জন মাগুরার।

এক সময় নারী ফুটবলাররা ছিলেন মাল্টিগেমের। ফুটবলের পাশাপাশি খেলতেন অ্যাথলেটিক, সাঁতার, কাবাডি, ভলিবলসহ অন্যান্য খেলা। ২০০৯ সালে ছোটন প্রধান কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর ধীরে ধীরে একজনের বিভিন্ন খেলার প্রবণতা কমিয়ে এখন শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছেন। এ মুহূর্তে থাকা ক্যাম্পের সব নারীরই একমাত্র খেলা ফুটবল।

‘একজন যখন একাধিক খেলায় অংশ নেয়, তখন সে কোনো খেলার দিকেই শতভাগ মনযোগ দিতে পারে না। ফিটনেস ধরে রাখাও যায় না। তাই এখন অন্য খেলায় যাওয়ার সুযোগ নেই। এতে মেয়েরা শুধু ফুটবল নিয়েই থাকতে পারে। ফুটবলারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি’-বলছিলেন গোলাম রাব্বানী ছোটন।

বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বেশ খুশি ক্যাম্পে ১৯ জেলার মেয়েরা থাকায়। তার কথা, ‘এটা অত্যন্ত ভালো দিক। আমরা প্রত্যাশা করছি, কয়েক বছরের মধ্যে ৫০ জেলা চলে আসবে আমাদের আওতায়। এখনো অনেক জেলার মেয়েদের ক্যাম্পে ওঠাতে পারেনি আবাসন সমস্যার কারণে।’

দেশে মেয়েদের ফুটবলের জাগরণে সরকারের আছে সবচেয়ে বড় ভূমিকা। বঙ্গমাতা প্রাইমারি স্কুল ফুটবল আয়োজনের পর থেকেই বেরিয়ে আসছে প্রতিভাবান মেয়ে ফুটবলার। দেশব্যাপী আয়োজিত এই টুর্নামেন্টের পর থেকে জাতীয় দলের ক্যাম্পের পাইপলাইনে ফুটবলার বাড়ছে। বাফুফে কর্মকর্তারা প্রত্যশা করছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের অর্ধেকেরও বেশি জেলা থেকে প্রতিনিধি থাকবে জাতীয় ক্যাম্পে।