ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
রবিবাসরীয়
Published : Sunday, 14 March, 2021 at 12:00 AM, Update: 14.03.2021 1:32:18 AM
রবিবাসরীয়





এ কেমন প্রেমের আগুন লুকোচুরি খেলে!
রবিবাসরীয়প্রবীর বিকাশ সরকার  ।।
কবি আর কবিতা জীবনভর এক লুকোচুরির শিল্পকলা। কবি কবিতাকে খোঁজে, কবিতা কবিকে খোঁজে। এটা তাদের ব্যক্তিগত, বড় বেশি ঘরোয়া ব্যাপার যা হার্দিক অনুভবের মাধ্যমে ঘটে। আমরা তৃতীয়পক্ষ তা দেখি বা পাঠ করি অনুভব করি তাদের চারিত্রিক লেনদেন। আলোচ্য কাব্যগ্রন্থ “এ কেমন প্রেমের আগুন” পাঠ করে মনে হল কবি যেমন কিছু কিছু কবিতাকে খুঁজেছেন, তেমনি কিছু কিছু কবিতা কবিকে খুঁজেছিল। যেমন,‘পুজোর ছুটি’ কবিতাটি কী আকুল হয়েই না কবিকে খুঁজেছে এবং কী অসাধারণ রোমান্টিক চিত্রকল্প! হয়ত এই কবিতা কবিরই দেখা কোনো মানবী!
হইনি আকাশ হলাম না রাত হলাম শুধু ঢেউ
পূজার ছুটি ফুরিয়ে গেলো হাত ধরেনি কেউ
                          (পুজোর ছুটি, পৃ-১১)
আবার কাছাকাছি আরেকটি কবিতা যদি পড়ি, তাহলে দেখতে পাই, কবি কবিতাকে খুঁজছেন হন্যে হয়ে। যে কবিতা মানবজীবনের অপ্রতিরোধ্য বাস্তবতা।
যদি আমি কবি তবে আমি গাই জীবনের গান
পথেই দহন করি পথিকের ম্রিয়মান শূন্যপুরাণ
কোজাগর মরুভূমি, যে জীবন শুষে নেয় তাপ
কবির কলমে থাকে ঠিক ঠিক ততখানি পাপ।  
                          (যদি আমি কবি তবে আমি হই মৃতের মিছিল, পৃ-১০)  

এই কয়েকটি পঙক্তিতে সহজেই বোঝা যায় তরুণ এই কবির চারিত্রিক অভিমুখÑÑঅভিসার নয়, অভিসরণ। তার সৃষ্টিসমগ্র আদৌ অপলাপ নয়, অভিস্যন্দ। ছড়িয়েছিটিয়ে নেই কবি মো.আরিফুল হাসান। নির্দিষ্ট একটি দৃষ্টিভঙ্গি আছে তার, আছে স্থিরতা, আছে নারী  ও প্রকৃতির মধ্যে নিজের অভিস্যন্দকে প্রতিষ্ঠা করার আকুলতা এবং একটু বেশিই, যে-কারণে কবিতাগুলো হয়ে উঠেছে প্রকৃতই কবিতা এবং ছন্দের দোলায় ঘুমঘুম কোজাগরীর দিগন্তব্যাপী ভালোলাগা।
পাঠক হিসেবে, কবিতা আমার কাছে চিরকালই ভালোলাগার রেশমতুলি। যার পরশ মনকে, মননকে নানারঙে, রোমান্টিকতায় রাঙিয়ে দিতে পারে। উদীয়মান তরুণ কবি মো.আরিফুল হাসান আগাগোড়াই রোমান্টিক তাই তার প্রায় সবগুলো কবিতাই আমার কাছে ভালোলাগার মোহনবাগান হয়ে ধরা দিয়েছে। আর এখানেই কবির সার্থকতা বলে প্রতীয়মান হয়। নিচে কিছু দ্যুতিমান পঙক্তি তুলে ধরলেই সুস্পষ্ট হবে কী বলতে চাই:
কেন তুমি ঘোমটা টেনে আড়াল করো মুখ
চাঁদে কেন গ্রহণ লাগে এমন মধুর রাতে
তারায় তারায় মিশে আছে ভালোবাসার সুখ
তবুও কেন হে বধূয়া মুখ ঢাকো দুই হাতে।
                                 (এবার ঘোমটা খোলো, পৃ-১৩)

সেই পথে হেঁটে গেছি যে পথ ফুরায়
তবও মানচিত্রে আঁকি নিঃসীম পথ
থেমে গেছি তবু আঁকি গতির বিবিধ
মরে গেছি, তব গাই জীবনের গান
                             (একদিন পৃথিবীতে ভোর হয়ে যাবে, পৃ-১৪)

যদিও এমন মধুর সময় আমার
তবুও আমার মনেতে নেই সুখ
জল ছলছল শ্রাবণ-মেঘের দিনে
আমার বুকে ফুরাত নদীর দুখ।
                              (ফুরাত নদীর মুখ পৃ-১৬)

এরকম আরও উদাহরণ উপস্থিত করা যায়, যা কবির বয়সের সঙ্গেসঙ্গে অর্জিত তার ঋদ্ধতার ছাপ সুস্পষ্ট। আসলে তো কবিতা যেভাবে চলে জীবন সেভাবে চলে না, কবিতা যা চায় জীবন তা দিতে পারে না, আবার কবি যা চায় কবিতা কি তা সম্পূর্ণ করতে পারে? তাই তো এত লুকোচুরি খেলা, এত তৃষ্ণা, এত আকাক্সক্ষা। “এ কেমন প্রেমের আগুন” মানবীমুখী প্রেমাবেগী কবির অনুধাবন আমাদেরকেও একইভাবে আচ্ছন্ন করে। যেমন,
অনীল উচ্ছ্বাসে দেখে গাঙচিল      ধোঁয়াশার রঙে মাতালের ঝিলিমিল
অন্ধের উপমা নেহাতই একপাক্ষিকে মৃত গ্রহে
সোনারঙ গোধূলি ছড়ানো ঝিল      একরাশ আঁধারত্বে যদিও কিলবিল
প্রেমের উপমা শুধু লেখা যায় প্রিয়তমার দেহে
                               (প্রেমের উপমা, পৃ-১৮)

কিন্তু রঙে চাঁদের আলো বর্ণ চুরি করে
অবিভক্ত শিল্পরেখায় উঠলো ভরে ভরে
সেই দেয়ালে সুবোধ মরে গ্রাফিতি খায় মার
রাবন বুঝে বনবাসের তাবৎ সমাচার
                               (দিনরাতের পাঠ, পৃ-৩২)

আমি তখন রাতের সুতো গুটিয়ে রেখে
দেখছি চেখে দিনেও কেমন আঁধার দেখায়  
তুমি তখন বললে আমায় তিরস্কারে  
দু’চোখ বুজে থাকলেই কি সব ঢাকা যায়?
                         (যে পাঁচটি উপমা, পৃ-৩৬)

উদীয়মান কবিদের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই নানা রকম দুর্বলতা থাকে সৃজনচিন্তায়, যেমন অতিকথন, ভাষার বাহুল্য, উপমার আধিক্য, অগভীর দ্রোহ, অযৌক্তিক আক্রমণ ইত্যাদি। কিন্তু কবি মো.আরিফুল হাসানের ক্ষেত্রে তেমনটি দেখছি না, যদিওবা কোথাও কোথাও ছন্দ বা লয়ের সাবলীল মসৃণতা বজায় থাকেনি, কিন্তু বোধদ্বারা উতরে যায়। বিপরীতে, কিছু উপমা সত্যিকার কবিকেই প্রতিনিধিত্ব করে যেমন,
যায় না পাওয়া ধোঁয়ার বসন তার
যায় না পাওয়া শাড়ির আচলখানি
ঝড় ওঠে ঝড় মন উচাটন আর
কবিতা কি তোমারই জামদানি?
                    (কলজে ধরে টান মারে এক কবি, পৃ-৪৪)

জ্বালামুখে সহস্র ফুল ফোটে
পাতায় লাগে শৈরিনী রঙ হাওয়া
মাতাল মধুপ নিছে মধু লুটে
গাছের শুধু দহনজ্বালা পাওয়া।
                    (ঐ)
সব কাজের বা প্রকল্পের একটি লক্ষ্য থাকে, থাকে অভিস্যন্দ, “এ কেমন প্রেমের আগুন” কাব্যগ্রন্থে তা পুরোপুরি অভীষ্টপূরণ হয়েছে বলাই বাহুল্য। এই কবি বহুদূর এগিয়ে যাবে তারও লক্ষণ সুস্পষ্ট তার অজটিল ভাষাবোধের কারণে। যেমন,
পালকে তার ছুঁয়ে থাকে মেঘমল্লার
বায়ু কেটে কেটে চলে যেন ঝড়োরাত
আকাশেতে তার রূপরেখা মোলাকাত
দেখা হয়ে গেলে ফেরে জমিনে আবার।

লোক থেকে লোকায়ত, চিরায়ত ধাম
“দাঁড়াবার সাহস” সে পাখিটির নাম।
                         (সে পাখিটি, পৃ-৪১)

এটাই কবির আত্মতৃপ্তি, আত্মশক্তি এবং কবিতার প্রতি সজাগ অনুরাগÑÑযা অসাধারণ! ভালোলাগার বিপুল আনন্দরসঘন এই কাব্যগ্রন্থটি। “এ কেমন প্রেমের আগুন”, যে-আগুন সর্বগ্রাসী, সর্বত্রাসী নয়ÑÑসর্বমানবিক। এই বাণীটাই এখন জরুরি।

এ কেমন প্রেমের আগুন / মো.আরিফুল হাসান
অনুপ্রাণন প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: ২০২০
মূল্য: ১৫০ টাকা  
 


পালিয়ে বেড়ায়, দৃষ্টি এড়ায়
- জাফরিন সুলতানা ।।

আমি তাকে যতবার চেয়েছি
ততবার হারিয়ে ফেলেছি
ধরতে গেলে সে ধরা দেয় না
বাতাস হয়ে ঘুরে ফিরে।

আমি চাই তারে নিজের করতে
কিছুতেই সে হাতে আসে না
সে আমার সাথে লুকোচুরি খেলে
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে
ছুতে গেলেই ছাই হয়ে যায়
শূন্যে উড়াল দেয়
ভালোবাসাবাসির কথা বলেও তারে ধরতে পারি না।

ছল তো অনেক করেছি
পুরাতন সব উপায় প্রয়োগ করেছি
সংসার ছলও করা শেষ করেছি।

কিছুতেই সে  আসতে রাজি না!


পুনরাবৃত্তি
হালিম আবদুল্লাহ ।।

আমি পুনর্বার প্রেমে পড়েছি সুলতানা
তাকেও সুলতানা বলেই ডাকছি
তোমার নাম ব্যতীত অন্য কোনো নাম আমার মুখস্থ নেই।

তোমার মতোই গায়ে তার মা মা গন্ধ
ঠোঁটে তার মাতৃদুগ্ধের স্বাদ
তার কপালে চুম্বন করলে আমি সদ্যোজাত শিশুর মতো পবিত্র হয়ে যাই।

তোমার মতোই শরীরে তার গভীর সমুদ্রের রীতি
ঢেউ ওঠে না, দোলা লাগে
দুলতে দুলতে আমি বিশ্বলয়ে একাকার হই
এবং মহাকালের সঙ্গে আমার মেরাজ হয়ে যায়।

আমি পুনর্বার প্রেমে পড়েছি সুলতানা
তোমার মতোই সে আমাকে বরফ শীতল করে
আমার প্রবাহ থামিয়ে দেয়
বরফ যেমন পানি হয়েও পানির উপরে ভেসে থাকে
তাঁর প্রেমও আমাকে আমার সমুদ্রে ভাসিয়ে রাখে।

আমি পুনর্বার প্রেমে পড়েছি সুলতানা
এবং তাকে তোমার নামেই ডাকছি।


আমি এখন ঘুমিয়ে যাব

আজফার আজিজ ।।

আমি এখন ঘুমিয়ে যাব।
জীবনভর রাত জাগতে জাগতে
আমার চোখে এখন
হাজার বছরের ঘুম জমে আছে।
আমি এখন ঘুমিয়ে যাব,
চিরকালের জন্য হলে
মন্দ হতো না।
রাত জেগে ছুঁয়েছি
জেসমিন, রজণীগন্ধা,
রাত জেগে লিখেছি
তোমাদের জন্য কবিতা,
রাত জেগে দেখেছি
তোমার নগ্ন নাভি ও উদর
কীভাবে বেহালার বেলি হয়ে যায়।
অনেক দেখেছি।
এখন আমি কান্ত,
কয়েক জীবনের কান্তি।
এখন আমি ঘুমিয়ে পড়তে চাই।