মাসুদ আলম ।।
করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ রোধে আবারও কুমিল্লাবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে, বিশেষ করে
মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে সবকটি উপজেলার নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও)
মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার (১৪ মার্চ)
কুমিল্লা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই নির্দেশ দেন কুমিল্লার নব
নিযুক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আবারও নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণেই এই
ঘাতক ভাইরাসের প্রকোপ রোধে আমাদেরকে আবারও আগের মতো সচেতন হতে হবে ও
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে মাস্কের ব্যবহার অতি গুরুত্বপূর্ণ।
শনিবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে
আবারও মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা
হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ
কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে মাসিক জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিভিন্ন
বিষয় নিয়ে কথা বলেন কুমিল্লার সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম
সুলতানা সীমা এমপি, কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ,
কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওমর ফারুক, কুমিল্লা
এনএসআই-এর যুগ্ম পরিচালক জি এম আলিম উদ্দিন, কুমিল্লা জেলার নবনিযুক্ত
সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান
নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন, কুমিল্লা হাইওয়ে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ
সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন।
এদিকে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায়
অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে অন্যতম ছিল কুমিল্লা শাসনগাছা ফাইওভারের পূর্ব ও
পশ্চিম পাশের প্রবেশমুখে সৃষ্ট যানজটের ভোগান্তি নিয়ে। জনভোগান্তির এই বিষয়
নিয়ে কুমিল্লার সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা
অভিযোগ তুলে বলেন, ফাইওভারের পশ্চিম পাশে শুধু নয়, পূর্ব পাশের প্রবেশমুখেও
কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করা হচ্ছে। বহুতল ভবন এবং হোটেল, রেস্টুরেন্টের
সামনে যত্রতত্রভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজটে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে।
সিটি কর্পোরশেন কর্তৃপক্ষ কার জন্য চুপ করে আছেন, এমন প্রশ্ন তোলেন এমপি
সীমা।
অভিযোগের বিপরীতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান সরাসরি
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মীর শওকত হোসেনকে শাসনগাছা ফাইওভারের
পূর্ব প্রান্তে হোটেল, রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করার
কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এছাড়াও আঞ্জুম সুলতানা সীমা এমপির আরও
অভিযোগ, কুমিল্লা টমছম ব্রিজ এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে ভোগান্তির কারণ
সরকারি সম্পত্তির ওপর পেট্রলপাম্প ও রেস্টুরেন্ট স্থাপন। লাকসাম রোডে
হাতের বাপ পাশের পেট্রলপাম্প ও রেস্টুরেন্টটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সম্পত্তির
ওপর। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
অভিযোগের
প্রেক্ষিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান কথা বলতে চাইলেও
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাউকে সভায় উপস্থিত পাননি।
অন্যদিকে সভায়
কুমিল্লা সীমান্তে বিজিবির দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাদক ও চোরাচালান
রোধে বিজিবিকে অভিযান ও মামলা বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা
প্রশাসক। তিনি বলেন, মাদক ও চোরাচালান বন্ধে প্রথম ঝাঁকুনি দেবে বিজিবি।
কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে
বিজিবির আটক মালামাল এবং মামলার সংখ্যা হতাশাজনক।
গভায় অন্য সমস্যার
মধ্যে কথা হয় টমছম ব্রিজের কাঁচা বাজারের অবর্জনা এবং খালের পাড়ের লোকজন
কর্তৃক ময়লা-আবর্জনা ব্রিজ থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত সিটি কর্পোরেশনের
কান্দিখালে ফেলা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
সভায় আরো উপস্থিত
ছিলেন কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান,
মনোহরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান
অ্যাডভোকেট ইউনুছ ভূঁইয়া, বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, কুমিল্লা
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল করিম, কুমিল্লা জেলা আইজীবী সমিতির সভাপতি
অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস, কুমিল্লা জেলা আনসার ও ভিডিপি কমান্ড্যান্ট
মোহাম্মদ মোস্তাক আহমদসহ কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান, নির্বাহী
কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্তকর্তাবৃন্দ।