ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
৪৫২ ফাঁসি কার্যকর ৫০ বছরে
Published : Monday, 15 March, 2021 at 12:09 PM, Update: 15.03.2021 12:55:24 PM
৪৫২ ফাঁসি কার্যকর ৫০ বছরেস্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে দেশের কারাগারগুলোতে ৪৫২ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কোনও বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি। ১৯৭৬ সালের পর থেকে কারাগারগুলোতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু হয়। বর্তমানে কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বন্দি রয়েছেন ২০০৫ জন।

এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ১৯৭৭ সালে। কারা অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। তবে এসব বন্দিকে কোন কোন মামলায় কী কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন তিনি। তার শাসনামলে কোনও বন্দির মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়নি। কারা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৬ সালে তিনজন বন্দির মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে একই বছর ২৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। একই বছর এত বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নজিরবিহীন ঘটনা। এসব বন্দির মামলার তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে কারা অধিদফতর।

১৯৭৭ সালের পর ১৯৭৮, ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৫, ১৯৮৬, ২০০৪ এবং ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরমধ্যে ১৯৭৮ সালে ১৭ জন, ১৯৮০ ও ৮১ সালে ১৩জন করে বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। ১৯৮৫ সালে ১৩ জন, ১৯৮৬ সালে ২৬ জন, ২০০৪ সালে ১৩ জন এবং ২০১৬ সালে ১০ জন বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ ছাড়া ১৯৭৯ সালে একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এরশাদের শাসনামলে ১৯৮২ সালে ছয় জন, ১৯৮৩ সালে সাতজন, ১৯৮৭ সালে একজন, ১৯৮৮ সালে দু’জন, ১৯৯০ সালে একজন বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। খালেদা জিয়ার শাসনামলে ১৯৯২ ও ৯৩ সালে ৫ জন করে, ১৯৯৪ সালে দু’জন বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ শাসনামলে ১৯৯৭ সালে দু’জন ও ২০০১ সালে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ২০০২ ও ২০০৩ সালে দু’জন করে, ২০০৫ সালে পাঁচজন, ২০০৬ সালে চারজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।

ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় ২০০৭ সালে ছয়জন ও ২০০৮ সালে আটজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে চারজন বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০১০ সালে নয়জন, ২০১১ সালে পাঁচজন, ২০১২ সালে একজন, ২০১৩ সালে দু’জন, ২০১৫ সালে চারজন, ২০১৭ সালে ছয়জন, ২০১৯ সালে দু’জন এবং ২০২০ সালে দু’জন বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।

৪ মার্চের (২০২১) তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বন্দি রয়েছেন ২০০৫ জন। এ বছর (২০২১) কোনও মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ও হাইসিকিউরিটি কারাগার, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ কয়েকটি জেলা কারাগারে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে জানান কারা কর্মকর্তারা।

২০০৬ সালের পরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বন্দিদের মধ্যে জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধীরাও রয়েছে। দেশের কারাগারগুলোতে অর্ধশতাধিক মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া নারীবন্দি থাকলেও গত ৫০ বছরে দেশে কোনও নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাদের যাবজ্জীবন কিংবা মুক্তি পাওয়ার ঘটনাই বেশি রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি কারা অধিদফতরের বিষয় নয়। আদালত ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তেই বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।