মাসুদ আলম।।
ত্রিপল পেঁচিয়ে আবার কখনও কাভার্ডভ্যানের ভিতর লুকিয়ে কৌশলে কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেআইনি কাঠ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বর্ষায় নৌপথ ব্যবহার করলেও শুকনো মৌসুমে সড়ক পথে বেআইনি কাঠ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়তে শুরু করে। পাচারে প্রায় সময় কাঠ বোঝাই গাড়ির নম্বর প্লেট খুলে ফেলাসহ নানা অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন তারা।
কুমিল্লা বিভাগীয় বন বিভাগ গত এক সপ্তাহে মহাসড়কের সুয়াগাজি স্টেশন এলাকায় চারটি অভিযানে প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের কাঠ জব্দ করেন। পাহাড়ী অঞ্চলের বন উজাড় করে অবৈধভাবে কাঠ পাচারকালে অভিযান চালিয়ে এই কাঠ জব্দ করা হয়। সর্বশেষ সোমবার রাতে কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জামতলা এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের সেগুন কাঠ জব্দ করে বন বিভাগ। ট্রাকে ত্রিপল পেঁচিয়ে অভিনব কায়দায় এই সেগুন কাঠগুলো মহাসড়ক দিয়ে বেআইনি ভাবে পাচারকারীরা পাচার করছিলেন।
কুমিল্লা বিভাগীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা নুরুল করিম জানান, এক সপ্তাহে ৪টি অভিযানে ২০ লাখ টাকার কাঠ জব্দ হয়েছে বন বিভাগের হাতে। এছাড়া কাঠ, বন্য পশুপাখি এবং বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রাণি পাচার রোধে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বন বিভাগ ৯৬টি অভিযান পরিচালনা করেন। এসব অভিযানে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা দায়ের করেছেন। সেগুনসহ বিপুল পরিমাণের কাঠসহ বিলুপ্ত প্রাণি কশ্যপ ও পেঁচা জব্দ করেন।
কুমিল্লা বিভাগীয় বন বিভাগের ফরেস্ট রেঞ্জার আবুল কালাম আজাদ জানান, সোমবার বিকেলে একটি তথ্য আসে বেআইনি কাঠ বোঝাই একটি ট্রাক চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছে। তথ্যটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগের কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সুয়াগাজি স্টেশনে অবস্থান করি। সোর্সের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সন্দেহজনক গাড়িগুলো এক এক করে চেক করা হচ্ছে। ত্রিপল পেঁচানো একটি ট্রাককে দাঁড়ানো জন্য সিগন্যাল দিলে, চালক সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ির গতি বাড়িয়ে পালানোর চেস্টা করে। পরবর্তীতে ওই গাড়ির পিছনে ধাওয়া করলে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার জামতলা এলাকায় মহাসড়কের উপরে ট্রাক রেখে চালক ও তার সহযোগি পালিয়ে যায়। ট্রাকটি স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে কুমিল্লা বিভাগীয় বন বিভাগে আনা হয়। এই ট্রাকে বেআইনি ভাবে পাচারকারীরা ত্রিপল পেঁচিয়ে ৫ লাখ টাকা মূল্যের কাঠ পাচার করছিলেন।
কুমিল্লার পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, বিভিন্ন মৌসুমে কৌশল বদলে পাচারকারীরা নিজেদের কারবার চালাচ্ছে। বর্ষার সময়ে নদীর পথে ‘চালি’ পদ্ধতিতে কাঠ পাচার হয়। এই পদ্ধতিতে হাওয়ার টিউবের সঙ্গে কাঠ বেঁধে নদীর স্রোতের দিকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। আর শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন অভিনব কায়দায় সড়ক পথে কাঠ পাচার করা হয়। পাহাড়ী অঞ্চল উজাড় করে বেআইনিভাবে পাচারকারীরা কাঠ পাচারে লিপ্ত হচ্ছে। এতে করে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ভারসাম্য হারাচ্ছে বনাঞ্চল।
কুমিল্লা বিভাগীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা নুরুল করিম আরও জানান, কাঠ পাচার রোধে অভিযান পরিচালায় বন বিভাগকে অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। জনবল ছাড়াও রয়েছে পরিবহন সংকট। কাঠ বোঝাই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পালানো চেস্টা করলে, পিছনে ধাওয়া করে আটক করার মতো গাড়ি সংকটে প্রায় সময় অভিযানে সফল হওয়া যাচ্ছে না। এই সংকটগুলো সমাধান হলে বেআইনি কাঠ পাচারকারীরা যতই অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করবেন বনবিভাগের অভিযান থেকে রেহাই পাবেন না।