বিএনপির
স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মারা গেছেন।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “খুব
বেদনার সংবাদ- মওদুদ সাহেব আর নেই। আমি উনার ভায়রার সাথে কথা বলেছি। তিনিই
আমাকে সংবাদটি জানিয়েছেন।”
৮১ বছর বয়সী মওদুদ কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বাংলাদেশের
রাজনীতিতে আলোচিত চরিত্র মওদুদ আহমদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন।
জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি উপ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, পরে এইচ এম এরশাদের
সময়ে উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে
যাওয়ায় এবং বুকে ব্যথা অনুভব করায় গত ৩০ ডিসেম্বর মওদুদ আহমদকে ঢাকায়
এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭ জানুয়ারি তার হৃদযন্ত্রে পেস মেকার
বসানো হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১ ফেব্রুয়ারি তাকে নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরের
মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।
মওদুদ আহমদের একান্ত সহকারী মোমিনুর রহমান
সুজন বলেন, “স্যার হাসপাতালে আইসিউতে ছিলেন। গত কয়েকদিন ধরেই তার অবস্থা
সঙ্কটাপন্ন ছিল। ফুসফুসে পানি জমা হচ্ছিল। তাতে অক্সিজেন গ্রহণের মতা কমে
যায়। পাশাপাশি উনার কিডনি জটিলতাও ছিল, ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছিল।”
প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আর
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, “মওদুদ আহমদের এই চলে যাওয়ায় জাতির
জন্য অপূরণীয় তি হয়ে গেল। তিনি সারাদেশের একজন মুরুব্বি ছিলেন।ৃ তার
মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন রাজনীতিবিদকে হারিয়েছে, দেশের জনগণ একজন
জনপ্রতিনিধিকে হারাল।”
১৯৪০ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায়
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করে তিনি
যুক্তরাজ্যে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল ডিগ্রি নেন। পরে দেশে ফিরে যুক্ত হন আইন
পেশায়।
কবি জসীমউদ্দীনের জামাতা ব্যারিস্টার মওদুদ আগরতলা ষড়যন্ত্র
মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মপ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত
ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল করা
হয়।
পরে দেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেন মওদুদ।
বিএনপি গঠনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জিয়া তাকে মন্ত্রী ও পরে
উপপ্রধানমন্ত্রী করেছিলেন।
জিয়ার মৃত্যুর পর মওদুদ সামরিক শাসক হুসেইন
মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরেন। এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে তিনি মন্ত্রী,
উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।
এরশাদ
সরকারের পতনের পরও জাতীয় পার্টিতেই ছিলেন মওদুদ। ১৯৯৬ সালের সংসদ
নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি বিএনপিতে ফেরেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
ছয়বার
সংসদ সদস্য নির্বাচিত মওদুদ, আইন ও সমকালীন রাজনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও
লিখেছেন। স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা, বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের
শাসনকাল, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ - প্রোপট: বাংলাদেশের রাজনীতি ও
সামরিক শাসন, এ স্টাডি অব দ্য ডেমোক্রেটিক রেজিমস, কারাগারে কেমন ছিলাম,
বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড আফটারম্যাথ ২০০৭-২০০৮ তার উল্লেখযোগ্য বই্।
শোক:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের
মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি মাহাবুব চৌধুরী।